খুলনায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেট শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। উদ্ধার করা হয়েছে নিয়োগসংক্রান্ত লেনদেনের চুক্তিসংবলিত স্ট্যাম্প, ব্যাংক চেক, মোবাইল সেট ও ডায়েরি। শনিবার রাতে নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় সংলগ্ন একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করা হয়।
দুই শিক্ষিকা গ্রেফতার এবং তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র জালিয়াতির বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা হয়েছে। সিন্ডিকেটের অন্যতম দুই হোতা রূপসার জাবুসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেশমা খাতুন এবং সিংহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসী আফরোজ রোববার আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে তারা সিন্ডিকেটের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের নাম প্রকাশ করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার কনক কান্তি জানান, শুক্রবার খুলনার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একে কেন্দ্র করে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ধরণের একটি সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার খবর গোপন সূত্রে পেয়ে শনিবার রাতে অভিযান চালানো হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক শিক্ষিকা ফেরদৌসী আফরোজ জানান, কিছুদিন আগে পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে খুলনা শপিং কমপ্লেঙ্রে ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ ফেব্রিঙ্রে মালিক আবুল হাসান তাকে জানান, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের এক বড় কর্মকর্তা তার আত্মীয়। জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা করে দিলে সে নিয়োগ পাইয়ে দেবে। এরপর তিনি (ফেরদৌসী আফরোজ) এবং রেশমা খাতুন ২৫ প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসি ডিবি জানান, ২৫ প্রার্থীকে প্রতারকরা নির্দিষ্ট ২৫টি মোবাইল সেট প্রদান করে। শুক্রবার নগরীর কলেজিয়েট গার্লস স্কুল, জিলা স্কুল, মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আযম খান কমার্স কলেজ, সরকারি সুন্দরবন কলেজ, পাইওনিয়ার গার্লস কলেজ ও বয়রা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্র পরিদর্শকদের দৃষ্টি এড়িয়ে মোবাইলগুলো নিয়ে হলে প্রবেশ করে। এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজন পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পরই কৌশলে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে তার উত্তর আটকদের মাধ্যমে ম্যাসেজ করে পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
আটক শিক্ষিকা রেশমা খাতুন দাবি করেন, তারা কেন্দ্র পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের আগে থেকেই ম্যানেজ করেন। এ সিন্ডিকেটে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত আছেন। নিয়োগ প্রার্থীরা রূপালী ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার বস্ন্যাংক ও সই করা চেক এবং স্ট্যাম্প দিয়েছেন। নিয়োগ হলে জনপ্রতি সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে সিন্ডিকেটের সদস্যদের দেয়ার কথা ছিল। এ চক্রকে ঢাকা ও ফরিদপুর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এ ঘটনায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই বাহাউদ্দিন বাদূূূ হয়ে ফেরদৌসী আফরোজ ও রেশমা খাতুন এবং ব্যবসায়ী আবুল হাসান ও তার ভাই মুহিবুর রহমানসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও তিন থেকে চারজনকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন।
এদিকে ফেরদৌসী আফরোজ ও রেশমা খাতুন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ সময় তারা সিন্ডিকেটের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের নাম প্রকাশ করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। রোববার বিকালে তারা খুলনা মহানগর হাকিম আবির হোসেনের আদালতে এ জবানবন্দি প্রদান করেন।
আটকদের জবানবন্দি ও পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা, মাদারীপুর জেলার একজন শিক্ষক নেতা, নগরীর খুলনা শপিং কমপ্লেঙ্রে বিসমিল্লাহ ফেব্রিক্সের মালিক আবুল হাসান ও তার ভাই মুহিবুর রহমান, খুলনার একজন ব্যবসায়ী এবং কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন।
সংবাদ শিরোনাম
প্রশ্ন ফাঁসে গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তিতে প্রভাবশালীদের নাম –
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০৯:৩০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৫
- ৪০৫ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ