শামীম-আইভীর বিরোধ মেটাতে আলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনীহা

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন একটি বেসরকারী ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ন পদে কাজ করেন।
নিজ এলাকা জালকুড়ির অবস্থা বর্ননা করতে গিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নামেই শুধু সিটি কর্পোরেশন। নিয়ম মেনে ট্যাক্সসহ সবই পরিশোধ করি কিন্তুু নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই পাইনা। বাড়ির সামনের রাস্তার বেহাল দশার বর্ননা দিয়ে বলেন, এখানে কোন জনপ্রতিনিধি আছে বলে মনে হয়না। এমপি শামীম ওসমান আর মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী দ্বন্দ্বে খেসারত দিচ্ছি আমরা। তারা নিজেদের মধ্যে সমাঝোতা করেনা আর এলাকার উন্নয়নও করেনা।
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবাসায়ি আমানুল হক জানান, আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা। এটাই আমাদের পাওয়া। কিন্তু বাসা থেকে বের হলে বলার প্রয়োজন হয়না এটা সিটি কপোরেশন কি না?। তিনি বলেন, কে উন্নয়ন করবে তা আমারও জানানি। আমরা ট্যাক্স দেই। আমরা কেন এমপি আর মেয়রের দ্বন্দ্বের খেসারত দিবো?।
নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে এক একটাই আলোচনার বিষয়। তা হলো শামীম ওসমান আর আইভীর দ্বন্দ্বের খবর। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি শহর থেকে শহরতলীতে চলে তাদের দ্বন্দ্বের কেচ্ছা কাহিনী। শুধু তাই নয় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় এমন কোন নেতা নেই শামীম ওসামান আর আইভীর বিরোধের কথা জানেন না। খোদ প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে অবগত।
কিন্তু নারায়নগঞ্জের আলোচিত এবং সরকারপন্থী এই দুই জনপ্রতিনিধির বিরোধ নিরসনে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে করে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন যেমন বাঁধা গ্রস্থা হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দল হিসেবে আওয়ামীলীগ। সবচেয়ে এদের বিরোধের কারনে আতংকে থাকছে সাধারন মানুষ। কখন কি হয় সে আশংকা রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ব্যাবসায়িরা। সম্প্রতি তাদের দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হওয়ায় আতংক বেড়ে গেছে মানুষের মধ্যে।
সূত্র জানায়, নারায়নগঞ্জ সিটি কপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। সংসদীয় আসন হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকা হলো নারায়ণগঞ্জ-৪ ও নারায়নগঞ্জ-৫ আসন। নারায়ণগঞ্জ ৪আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। আর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য তার বড় ভাই সেলিম ওসমান।
সূত্র জানায়, আইভী ও শামীম ওসামান পরিবারের দ্বন্দ্ব খুবই পুরোনো। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সেলিনা হায়াত আইভীর সাথে বিপুল ভোটের ব্যবধানে শামীম ওসমানের পরাজয়ের পর এ দ্বন্দ্ব নতুন করে আবার প্রকাশ্যে চলে আসে।এরপর দুই জনের মধ্যে ময়লার ডাম্পিং নিয়ে বিরোধ, পার্ক উদ্ভোধন নিয়ে বিরোধসহ সামান্য তুচ্ছ বিষয় নিয়েও বিরোধ প্রকট হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, নারায়নগঞ্জের ৭খুনের ঘটনায় শামীম ওসমান ও আইভীর বিরোধ চরম আকারে দেখা দেয়। ৭ খুনের অন্যতম শিকার প্যানল মেয়র নজরুলের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়র আইভী বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদাররা আর কত লাশ চায়।
সম্প্রতি ৭ খুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য শেষে আইভী ও শামীম ওসমান পরস্পর পরস্পরকে নিয়ে ব্যাপক বিষোদগার করেন। সর্বশেষ একটি বেসরকারী টেলিভিশনের শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যকার তুমুল বাকবিতন্ডা নিয়ে তাদের বিরোধ চরম আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্র জানিয়েছে, শামীম-আইভী বিরোধ মেটানো জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু করে আওয়ামীলীগে কেন্দ্রীয় নেতারা একধিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এমনকি সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীকে তাদের বিরোধ মেটাতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সভায়
শামীম ওসমান-আইভীর বিরোধ মেটানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা আর বাস্তবে দেখা যায়নি। বরং আওয়ামীলীগের কেস্ত্রীয় একাধিক নেতা একেক সময় একেক জনের পক্ষ অবলম্বন করে।
২০১৪ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনের আগে সেলিম ওসমানও আইভী ও শামীম ওসমানের মধ্যকার বিরোধ মেটানো উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে আইভী পন্থী অনেকে তার উদ্যোগে সাড়া দেন। আইভীর সঙ্গে সিটি করর্পোরেশনে গিয়ে দেখাও করেছেন সেলিম ওসমান। আইভীও উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কিন্তু নতুন করে আইভী শামীম ওসমানের বিরোধের কারনে ভেস্তে যাচ্ছে সেলিম ওসমানের ঐক্যের উদ্যোগ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর