ঢাকা ১০:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রিকশার হাতলেই ‘মামু পাগলা’র জীবন-সংগ্রাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৫:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০১৯
  • ৩৫৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৬৫ বছরের বৃদ্ধ ইমাম হোসেন। ভালবেসে এলাকার সবাই তাকে ‘মামু পাগলা’ নামে ডাকেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও হার মানেননি তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রিকশার হাতলেই চলছে তার জীবন-সংগ্রাম। রাত-দুপুরে আপনার রিকশার প্রয়োজন? চিন্তা নেই কলেজ মোড়ে মামু পাগলা হাজির।

তিনি আপনাকে পৌঁছে দেবেন গন্তব্যে। দিন-রাত নিয়োজিত থাকেন যাত্রীসেবায়। মামু মুখ খুলে ভাড়াও নেন না। যাত্রীরা খুশি হয়ে যা দেন তাই পকেটে পুরেন। কাঠ ফাটা রোদ, মুষলধারে বৃষ্টিতেও ক্লান্তি নেই। মামু পাগলার গ্রামের বাড়ি উপজেলা সদর দাঁতমণ্ডল গ্রামে। বৃদ্ধ মা জয়ফুন্নেছা (৮৫) আর তিন ভাই নিয়ে তার সংসার। দিন-রাত নাসিরনগর-বি-বাড়িয়া সড়কের দাঁতমণ্ডল ব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকেন।

মামু পাগলার স্ত্রী সুলেমা আক্তারও (৫০) পাগল। তাদের ৪ সন্তান একসময় ভালো ছিল। পর্যায়ক্রমে তারাও পাগল হয়ে যায়। ৪ পাগলের ভরণপোষণে ব্যস্ত থাকেন তিনি। সরজমিনে জানা যায়, ইমাম হোসেনের ব্যতিক্রমী সেবার চিত্র। তিনি রাতের শেষ প্রহরে রিকশা নিয়ে বাড়ি যান। বৃদ্ধ মাকে ঘুম থেকে জেগে তোলেন। তাকে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে নাস্তা দিয়ে ঘুম পাড়ান। পরবর্তীতে পাগল ভাইটিকে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করান। শেষে পাগল স্ত্রী সেলিনাকেও এভাবে খাওয়ান।

অনেকদিন ফজরের নামাজ রাতে পড়ে ঘুমাতে যান। তারা সবাই সকালে একবেলা ভাত খান। দুপুরে যে যেখানে থাকেন সেখানে নাস্তা ও পান্তা ভাত খান। রাতে মামু পাগলা রিকশার সিটের নিচে করে, বিস্কুট, গুড়, চিড়া, যা নিয়ে যান তাই তাদের রাতের জল খাবার। গ্রামের বিশিষ্ট সর্দার মো. চেনু মিয়া  জানান, এক সময় তাদের ভালো অবস্থা ছিল। পিতা নাদিম হোসেন ২ বার ইউপি সদস্যের নির্বাচন করে জমিজমা বিক্রি করে ফেলেন।

সর্বশেষ ছেলেরা বাড়িটিও বিক্রি করে বর্তমানে সিএন্ডবির জায়গায় একটি ঝুপড়ি তুলে দিনাতিপাত করেন। এ ব্যাপারে মামু পাগলার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, শেষ বয়সে রিকশা চালাতে শরীরে মানায় না। সরকার অথবা কোনো দানবীর আমাকে একটি অটোরিকশা দান করলে পাগলগুলোকে নিয়ে একটু ভালো থাকতে পারতাম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রিকশার হাতলেই ‘মামু পাগলা’র জীবন-সংগ্রাম

আপডেট টাইম : ১২:৪৫:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৬৫ বছরের বৃদ্ধ ইমাম হোসেন। ভালবেসে এলাকার সবাই তাকে ‘মামু পাগলা’ নামে ডাকেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও হার মানেননি তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রিকশার হাতলেই চলছে তার জীবন-সংগ্রাম। রাত-দুপুরে আপনার রিকশার প্রয়োজন? চিন্তা নেই কলেজ মোড়ে মামু পাগলা হাজির।

তিনি আপনাকে পৌঁছে দেবেন গন্তব্যে। দিন-রাত নিয়োজিত থাকেন যাত্রীসেবায়। মামু মুখ খুলে ভাড়াও নেন না। যাত্রীরা খুশি হয়ে যা দেন তাই পকেটে পুরেন। কাঠ ফাটা রোদ, মুষলধারে বৃষ্টিতেও ক্লান্তি নেই। মামু পাগলার গ্রামের বাড়ি উপজেলা সদর দাঁতমণ্ডল গ্রামে। বৃদ্ধ মা জয়ফুন্নেছা (৮৫) আর তিন ভাই নিয়ে তার সংসার। দিন-রাত নাসিরনগর-বি-বাড়িয়া সড়কের দাঁতমণ্ডল ব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকেন।

মামু পাগলার স্ত্রী সুলেমা আক্তারও (৫০) পাগল। তাদের ৪ সন্তান একসময় ভালো ছিল। পর্যায়ক্রমে তারাও পাগল হয়ে যায়। ৪ পাগলের ভরণপোষণে ব্যস্ত থাকেন তিনি। সরজমিনে জানা যায়, ইমাম হোসেনের ব্যতিক্রমী সেবার চিত্র। তিনি রাতের শেষ প্রহরে রিকশা নিয়ে বাড়ি যান। বৃদ্ধ মাকে ঘুম থেকে জেগে তোলেন। তাকে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে নাস্তা দিয়ে ঘুম পাড়ান। পরবর্তীতে পাগল ভাইটিকে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করান। শেষে পাগল স্ত্রী সেলিনাকেও এভাবে খাওয়ান।

অনেকদিন ফজরের নামাজ রাতে পড়ে ঘুমাতে যান। তারা সবাই সকালে একবেলা ভাত খান। দুপুরে যে যেখানে থাকেন সেখানে নাস্তা ও পান্তা ভাত খান। রাতে মামু পাগলা রিকশার সিটের নিচে করে, বিস্কুট, গুড়, চিড়া, যা নিয়ে যান তাই তাদের রাতের জল খাবার। গ্রামের বিশিষ্ট সর্দার মো. চেনু মিয়া  জানান, এক সময় তাদের ভালো অবস্থা ছিল। পিতা নাদিম হোসেন ২ বার ইউপি সদস্যের নির্বাচন করে জমিজমা বিক্রি করে ফেলেন।

সর্বশেষ ছেলেরা বাড়িটিও বিক্রি করে বর্তমানে সিএন্ডবির জায়গায় একটি ঝুপড়ি তুলে দিনাতিপাত করেন। এ ব্যাপারে মামু পাগলার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, শেষ বয়সে রিকশা চালাতে শরীরে মানায় না। সরকার অথবা কোনো দানবীর আমাকে একটি অটোরিকশা দান করলে পাগলগুলোকে নিয়ে একটু ভালো থাকতে পারতাম।