ঢাকা ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালপুরে থামছে না তামাকের চাষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৭:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জানুয়ারী ২০১৯
  • ৩২৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানির সহযোগিতায় পরিবেশ, কৃষি ও স্বাস্থ্যের-ঝুঁকি থাকা সত্তেও পদ্মা নদী বিধৌত নাটোরের লালপুর উপজেলা জুরে বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রতিবছরই চাষ হচ্ছে তামাকের। চাষীরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ায় কমছে কৃষি জমি ও ফসলের উৎপাদন। তামাক পোড়ানোর জন্য কৃষকের বাড়িতে তৈরি করা হয়েছে চুল্লি। এই সকল চুল্লিতে পোড়ানো হবে কাঁঠ ও জুট এতে পরিবেশে দূষণের আশঙ্কা রয়েছেন বলে মনে করছেনর সংশ্লিষ্টরা।

লালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এই উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছিলো। চলতি মৌসুমেও ৪৫ হেক্টর জমিতেই তামাক চাষ হয়েছে। তবে কৃষকরা বলছে এবার বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এভাবে প্রতিবছরই এই অঞ্চলে তামাকের চাষ করছে কৃষকরা। প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিলেও তৃণমূল পর্যায়ে তা কার্যক্রর ভূমিকা না থাকায় তামাকের চাষ অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আব্দুলপুর, বড়ময়না, রায়পুর, পানঘাটা, পালহারা, দুয়ারিয়া, এবি, দুড়দুরিয়া, কদিকায় সমকালীন ফসলের জমির পাশে চাষ হচ্ছে তামাক। তামাক ক্ষেত গুলিতে আগাছা ও পোকামাকর দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক। জমির পাশে লোকালয় ও কৃষকের বাড়িতে তামাক পোমচিলান এলাড়ানোর জন্য তৈরি করা হচ্ছে চুল্লি।

এ সময় তামাক চাষীদের সঙ্গে কথা হয় তারা বলেন, ‘জমিতে আর আগের মতো ধান বা অন্যান্য ফসলের চাষ হয়না। চাষ হলেও উৎপাদিত শস্যের নায্য মূল্য না পাওয়া আমরা প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি এবং ঢাকা টোব্যাকো তামাক কোম্পানির কাছ থেকে অগ্রিম ঋণ পাওয়ায় আমরা তামাকের চাষ করেছি।

অন্য ফসলের চেয়ে তামাকের চাষ করে কি বেশি লাভ হয়?
এমন প্রশ্নে রায়পুর গ্রামের তামাক চাষী আব্দুস সুবান বলেন, ‘অন্য ফসলের চেয়ে তামাকের দাম বেশি এবং খরচও কম হয় শুনেই এই প্রথম আমি ৩ বিঘা জমিতে তামক চাষ করেছি।’ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় যেনেও কেন আপনারা তামাক চাষ করছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না খেয়ে মরার চেয়ে খেয়ে মরা ভালো।’ সমকারীন ফসল চাষ করে খরচের টাকাই উঠেনা, অধিক লাভের আশায় ও সংসারের ঘাটতি পূরণে তামাক চাষ করেছি।’

তামাক চাষী মুনছুর রহমান বলেন,‘আমি ৭ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে তামাক চাষ করতে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা আর উৎপাদিত তামাক বিক্রয় হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। তামক বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন সমস্যই পড়তে হয়না। ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানির তাদের থেকে নির্ধারিত দামে তামাক কিনে তাই আমরা তামাক চাষে ঝুঁকেছি।

তামাক কোম্পানি কি আপনাদের ঋণ দেয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক একর জমিতে তামাক চাষের জন্য ৪ হাজার দুইশত টাকা, দুই বস্তা সারও কীটনাশক দেয়। তামাক বিক্রয়ের সময় সে টাকা কম্পানি কেটে রাখে।’

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে কৃষি ফসলের সঠিক দাম না পাওয়া কৃষকরা তামক চাষ করছেন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের কে তামাকের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কাজ করছি। তার পরেও অনেক কৃষক লাভের আশায় তামাক চাষ করেছেন।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মূল বানীন দ্যুতি বলেন, ‘তামাক চাষ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। কৃষকরা যাতে আগামীতে তামাক চাষ না করে সে লক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথ ভাবে কাজ করবো।’ এখন থেকেই যদি কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা না যায় তাহলে আগামীতে এই অঞ্চলের পরিবেশ, কৃষি ও স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

লালপুরে থামছে না তামাকের চাষ

আপডেট টাইম : ১১:১৭:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জানুয়ারী ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানির সহযোগিতায় পরিবেশ, কৃষি ও স্বাস্থ্যের-ঝুঁকি থাকা সত্তেও পদ্মা নদী বিধৌত নাটোরের লালপুর উপজেলা জুরে বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রতিবছরই চাষ হচ্ছে তামাকের। চাষীরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ায় কমছে কৃষি জমি ও ফসলের উৎপাদন। তামাক পোড়ানোর জন্য কৃষকের বাড়িতে তৈরি করা হয়েছে চুল্লি। এই সকল চুল্লিতে পোড়ানো হবে কাঁঠ ও জুট এতে পরিবেশে দূষণের আশঙ্কা রয়েছেন বলে মনে করছেনর সংশ্লিষ্টরা।

লালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এই উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছিলো। চলতি মৌসুমেও ৪৫ হেক্টর জমিতেই তামাক চাষ হয়েছে। তবে কৃষকরা বলছে এবার বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এভাবে প্রতিবছরই এই অঞ্চলে তামাকের চাষ করছে কৃষকরা। প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিলেও তৃণমূল পর্যায়ে তা কার্যক্রর ভূমিকা না থাকায় তামাকের চাষ অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আব্দুলপুর, বড়ময়না, রায়পুর, পানঘাটা, পালহারা, দুয়ারিয়া, এবি, দুড়দুরিয়া, কদিকায় সমকালীন ফসলের জমির পাশে চাষ হচ্ছে তামাক। তামাক ক্ষেত গুলিতে আগাছা ও পোকামাকর দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক। জমির পাশে লোকালয় ও কৃষকের বাড়িতে তামাক পোমচিলান এলাড়ানোর জন্য তৈরি করা হচ্ছে চুল্লি।

এ সময় তামাক চাষীদের সঙ্গে কথা হয় তারা বলেন, ‘জমিতে আর আগের মতো ধান বা অন্যান্য ফসলের চাষ হয়না। চাষ হলেও উৎপাদিত শস্যের নায্য মূল্য না পাওয়া আমরা প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি এবং ঢাকা টোব্যাকো তামাক কোম্পানির কাছ থেকে অগ্রিম ঋণ পাওয়ায় আমরা তামাকের চাষ করেছি।

অন্য ফসলের চেয়ে তামাকের চাষ করে কি বেশি লাভ হয়?
এমন প্রশ্নে রায়পুর গ্রামের তামাক চাষী আব্দুস সুবান বলেন, ‘অন্য ফসলের চেয়ে তামাকের দাম বেশি এবং খরচও কম হয় শুনেই এই প্রথম আমি ৩ বিঘা জমিতে তামক চাষ করেছি।’ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় যেনেও কেন আপনারা তামাক চাষ করছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না খেয়ে মরার চেয়ে খেয়ে মরা ভালো।’ সমকারীন ফসল চাষ করে খরচের টাকাই উঠেনা, অধিক লাভের আশায় ও সংসারের ঘাটতি পূরণে তামাক চাষ করেছি।’

তামাক চাষী মুনছুর রহমান বলেন,‘আমি ৭ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে তামাক চাষ করতে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা আর উৎপাদিত তামাক বিক্রয় হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা। তামক বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন সমস্যই পড়তে হয়না। ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানির তাদের থেকে নির্ধারিত দামে তামাক কিনে তাই আমরা তামাক চাষে ঝুঁকেছি।

তামাক কোম্পানি কি আপনাদের ঋণ দেয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক একর জমিতে তামাক চাষের জন্য ৪ হাজার দুইশত টাকা, দুই বস্তা সারও কীটনাশক দেয়। তামাক বিক্রয়ের সময় সে টাকা কম্পানি কেটে রাখে।’

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে কৃষি ফসলের সঠিক দাম না পাওয়া কৃষকরা তামক চাষ করছেন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের কে তামাকের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কাজ করছি। তার পরেও অনেক কৃষক লাভের আশায় তামাক চাষ করেছেন।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মূল বানীন দ্যুতি বলেন, ‘তামাক চাষ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। কৃষকরা যাতে আগামীতে তামাক চাষ না করে সে লক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথ ভাবে কাজ করবো।’ এখন থেকেই যদি কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা না যায় তাহলে আগামীতে এই অঞ্চলের পরিবেশ, কৃষি ও স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।