হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদের দুই তীরে এসেছে শীতের অতিথি পাখিরা। এসেছে হাওরাঞ্চল ও শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসেও। পাখিদের কিচিরমিচির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে এখন নদের দুপার আর ক্যাম্পাসবাসীর। আবার সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে অতিথি পাখির মধুময় সুরে ঘুমিয়ে পড়েন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারের শীতেও অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর নরসুন্দা নদের তীর। উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ে অতিথি পাখিরা নির্ভাবনায় মেতে উঠেছে জলকেলিতে। কেউ আবার ডুবসাঁতারে ব্যস্ত। আকাশে তাদের ওড়ার দৃশ্যও বিচরণ তৈরি করেছে অপরূপ পরিবেশ।
তাদের এ কার্যকলাপ দেখতে এবং ক্যামেরাবন্দি করতে ছুটে আসছেন জেলার দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা। পাখিদের একসঙ্গে ওড়া দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষাও করছেন অনেকে। উপচে পড়া ভিড়ের মাঝে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ সংলগ্ন মুক্তমঞ্চ ও শহরের মোড়ে মোড়ে ‘খালা-মামা-নানি’র নামে নানারকম পিঠা ও মুড়ির দোকান খুলে বসেছেন মৌসুমী বিক্রেতারা।
প্রতি বছর উত্তরের শীতপ্রধান দেশ সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, সিনচিয়াং ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকে দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে আসে। তীব্র শীতের কারণে ওইসব অঞ্চলে বসবাসরত পাখিরা হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে। মার্চের শেষ দিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়। বাংলাদেশের মানুষ শখ করে যাযাবর এসব পাখিকে ডাকে গেস্ট বার্ড/মাইগ্রেটরি বার্ড বা অতিথি পাখি। অসম্ভব বন্ধুসুলভ এ পাখিগুলো অনেকটাই আমাদের দেশি হাঁস প্রজাতির।
বাংলাদেশে আসা পাখিদের ৮-৯ শতাংশ আসে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। এর মধ্যে আছে সরালি, পঁচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনী, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতারি। আছে মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটিও।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ বলেন, ‘সদর উপজেলার ষোলমারায় পাখিদের বাসা বেঁধে দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ে পাখিরা এসে খেয়ে যায়। বাসার ছাদেও প্রতিদিন নিজেই পাখিদের খাইয়ে থাকি।’ নরসুন্দা নদের দুই তীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পাখিদের জন্য আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।