হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে শান্ত দ্বীপ ফকল্যান্ড। এখানে রয়েছে ছোট্র ছোট্র থাকার বাসা। বাসা তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে মাটি, বালি, পাথর। এই শান্ত দ্বীপে বাস করে অ্যালবাট্রস। অ্যালবাট্রস এক রহস্যময় পাখি। এই পাখিকে নিয়ে তাদের জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় খুঁটিয়ে দেখার লোভে জীববিজ্ঞনীরা বছরের পর বছর তাদের এখানেই পড়ে থাকেন। বিজ্ঞানী মুরের মতে এ এক অনাবিল আনন্দ।
কিন্তু গত দশকে প্রায় ৩৮ হাজার অ্যালবাট্রস মারা পড়েছে। এই পাখি কে নিযে ১৭৯৮ সালে স্যামুয়েল টেলরের লেখা এক বিখ্যাত কবিতা প্রকাশিত হয় ‘দ্য রাইম অব দি অ্যানসিয়েন্ট মেরিনার’ কবিতাটির বিষয়বস্তু ছিল পরোপকারী পাখি অ্যালবাট্রস। চরে আটকে যাওয়া নৌকার পালে ডানার বাতাস দিযে তাকে এগিয়ে নিয়ে যায় পাখিটি। সত্যিই এক আশ্চর্য পাখি এই অ্যালবাট্রস। ঠিক যেন এক জীবন্ত উড়ুক্কু মেশিন। প্রায় সাত ফুটের লম্বা ডানা একবারও না ঝাঁপটে শয়ে শয়ে মাইল উড়ে যেতে পারে পাখি। একটি পঞ্চাশ বছর বয়সী অ্যালবাট্রস তার অর্ধ্বশতবছর জীবনকালে কমপক্ষে ৩৭ লাখ মাইল অতিক্রম করে।
অন্যান্য পাখিরা যেখানে বাতাসের বাধা অতিক্রম করতে হিমশিম খায়, অ্যালবাট্রস সেখানে বাতাসের সাথে বন্ধুত্ব পাতায়, তাকে কাজে লাগায়। উড়ার ক্ষমতা বাধাহীন, মাসের পর মাস বছরের পর বছর, পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে উড়ে বেড়ায়। অ্যালবাট্রস পাখি মধ্যে একটি পাখি নাম উইসডম। বর্তমান আছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়ে অ্যাটোল জাতীয় বন্যপ্রাণী আশ্রয়কেন্দ্রে। এটি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ থেকে ১৫০০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত। উইসডম ৬৮ বছর বয়সী অ্যালবাট্রস পাখি। সবচেয়ে বেশি বয়স্ক পাখি এটি। ইতিমধ্যে ডিমও পেরেছে পাখিটি।
অ্যালবাট্রস পাখি প্রতি বছর একটি ডিম পাড়ে এবং ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে আগলে রাখে। পাখি বিশারদরা বলছেন, উইসডমই সবচেয়ে বয়স্ক পাখি যে ডিম পাড়ার জন্য ফিরেছে। কারন তার পাযে রিং পরানো ছিল। পায়ে রিং পড়িয়েছিলেন জীববিদ চান্ডলার রবিনসের পক্ষ থেকে ১৯৫৬ সালে। সেই সময়ই পাখিটির বয়স ছিল পাঁচ বছরের বেশি। তার পর থেকে উইসডম ৪০ বার ডিম পেড়েছে। ৪৬ বছর পর ২০০২ সালে রবিনস ফের পুরনো ব্যান্ড ফেলে নতুন ব্যান্ড পরিয়ে দেন অ্যালবাট্রস পাখিটিকে।
২০০৬ সালে ফের ইউএস ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের পক্ষ থেকে ব্যান্ড পরানো হয় পাখিটিকে। সেই থেকে টানা পর্যবেক্ষণেই থাকে উইসডম।২০১১ সালে সুনামিতে হাজার হাজার পাখি মারা গেলেও বেঁচে গিয়েছিল সে। ২০১৫ সালে উইসডম ও আকেআকামাইয়ের একটি ডিম নষ্ট হয়েছিল। পরে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে মা হয়েছিল উইসডম। এবারও সেই পালা।
সাধারণত সামুদ্রিক পাখি অ্যালবাট্রস বাঁচে ১২ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত। সেদিক ৬৮ বছর বেচে রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে উইসডম। মাস দুয়েক পর ডিম ফুটে উইসডমের ছানা চোখ মেলবে। তবে পাঁচ-ছয় মাস বাসাতেই থাকে সদ্য জন্মানো পাখিগুলো। তারা একটু বড় হলে ফের আকাশে দীর্ঘ সাত ফুট ডানা নিয়ে উড়াল দেবে এই আকাশের দানব উইসডম।