হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাধারণ মুসলমানদের অনেকেই মনে করে থাকেন, দাড়ি রাখা হচ্ছে সুন্নত, অতএব দাড়ি রাখলে ভাল আর না রাখলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। একটা সুন্নত পালন করা হলো না, এই আর কি!
আসলে এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। প্রকৃত কথা হল, দাড়ি রাখা নবীজির সুন্নত তথা তাঁর আদর্শ তো বটেই কিন্তু এটা তাঁর আদেশও। কুরআনের বহু আয়াতে নবীজির আদেশ মান্য করা উম্মতের উপর আবশ্যক করা হয়েছে। তাই ইসলামী শরীয়তে পুরুষদের জন্য দাড়ি রাখা ওয়াজিব। দাড়ি মুন্ডানো বা ছেঁটে নিজের হাতের এক মুষ্টির (চার আঙ্গুল পরিমাণের ছোট করা) কম করা কবীরা গুনাহ। আর মোঁচ এতটুকু ছোট করা সুন্নাত যাতে উপরের ঠোটের কিনারা সাফ থাকে। বড় বড় মোঁচ রাখা অমুসলিমদের রীতি এবং মোঁচ একেবারে মুন্ডানোও নিষেধ। (আদদুররুল মুখতার, ৫: ২৮৮)
ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবে-দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে। (সহীহ বুখারি, হাদিস নং–৫৪৭২)
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা (রা.) বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘কিন্তু, আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কর্তন করব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদিস: ২৬০১৩)
পারস্য সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। এদের দাড়ি ছিল কামানো আর গোঁফ ছিল বড়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে তাদের এই অবয়ব এতই কুৎসিত লেগেছিল যে, তিনি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ধ্বংস হোক, এমনটি তোমাদের কে করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা।
তিনি (সা.) তখন উত্তর দেন, আমার রব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত- আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছোট রাখি।-(ইবনে জারির আত তাবারি, ইবন সা’দ ও ইবন বিশরান কর্তৃক নথিকৃত। নাসিরুদ্দীন আলবানি (রহ.) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। দেখুন আল গাযালির ফিক্বহুস সিরাহ ৩৫৯ পৃষ্ঠা)
এছাড়া, দাড়ি রাখা শি‘আরে ইসলাম অর্থাৎ এটা মুসলমানদের জাতীয় নিদর্শনের পরিচায়ক এবং এতে শরীয়তের হুকুম পূর্ণ করা হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬, ২৬১)
প্রকৃত মুসলমান দাড়ি রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দাড়িতে ভালো লাগুক বা না লাগুক, আমরা আল্লাহ ও রাসুলকে (সা.) ভালবেসে দাড়ি রাখব। তবে এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কাটার সুযোগ শরীয়তে রয়েছে।
হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায়, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ও হযরত আবু হুরায়রা (রা.) এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কেটেছেন। আবু যুরআ (রা.) বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) তাঁর দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদিস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯)। কিন্তু, কোনো সহীহ বর্ণনায় এক মুষ্টির ভিতরে দাড়ি কাটার কোনো অবকাশ পাওয়া যায় না।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সত্য উপলব্ধি করে রাসুলুল্লাহের (সা.) সুন্নত ও মুসলমানদের শি’আর (বৈশিষ্ট্য) দাড়ি ইসলামের বিধান অনুসারে রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।