হাওর বার্তা ডেস্কঃ খাগড়াছড়ির জেলা সদর ছাড়িয়েও মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দূরের নিভৃত পল্লী হাতিয়াপাড়া। যেখানে পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। পিছিয়ে পড়া এ জনপদে নেই কোনো ফসলি জমিও। এখানকার বেশিরভাগ মানুষেরই অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। সেখানেই মোড়া তৈর করে টেনেটুনে চলা সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছেন নারীরা।
মোড়া তৈরি করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন নিভৃত পল্লীর এসব নারীরা। শুধুমাত্র হাতিয়াপাড়া নয়, পাশের গ্রাম কাজীপাড়া, বটতলী ও পলাশপুরের নারীরাও মোড়া তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সাংসারের কাজ শেষে বাড়তি রোজগারের আশায় মোড়া বানিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন পাহাড়ের নারীরা। বছরের পর বছর ধরে মাটিরাঙ্গার বেশ কয়েকটি পাহাড়ি পল্লীর প্রায় শতাধিক নারী ঘরে বসে মোড়া বানানোর কাজ করছেন। কোনো ধরনের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই পাহাড়ের এসব পল্লীতে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কুটির শিল্প।
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গার নিভৃত পল্লী হাতিয়াপাড়ায় গেলে দেখা যায় বাড়ির উঠানে মোড়া তৈরি করছেন রাহেনা আক্তার। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘ ৬/৭ বছর ধরে মোড়া তৈরি করছেন। আগে একজনের আয়ে সংসার চলতো। আর এখন স্বামীর পাশাপাশি তিনিও আয় করছেন। এ টাকাতেই নতুন ঘর করেছেন। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন।
একটু দূরেই পাশের বাড়িতে মোড়া তৈরি করছেন মুন্নী আক্তার। তিনি জানান, এখানকার প্রতিটি বাড়িতেই মোড়া তৈরি করা হয়। আগে অবসরে স্থানীয় নারীরা গল্প করে সময় কাটালেও এখন মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কারোরই যেন অবসর নেই। মোড়া তৈরি করে সকলের পরিবারেই কমবেশী আর্থিক স্বচ্ছলতা এসছে বলে জানালেন মুন্নী আক্তার।
নারীদের তৈরি মোড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করে থাকেন স্থানীয় পাইকাররা। বিপণন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই বাড়ছে মোড়া তৈরির কাজ। দিন দিন স্কুল-কলেজের ক্লাস শেষে মায়ের সঙ্গে মোড়া বানানোর কাজে ঝুঁকছে মেয়েরাও।
জানা গেছে, সপ্তাহে একজন দুই থেকে তিন জোড়া মোড়া তৈরি করতে পারে। ছোট আকারের এক জোড়া মোড়া দুইশ টাকা, মাঝারি আকারের মোড়া বানাতে আড়াইশ আর বড় আকারের মোড়া তৈরিতে খরচ পড়ে সাড়ে তিনশ টাকা। আকারভেদে এসব মোড়া প্রতি জোড়া সাড়ে তিনশ টাকা থেকে ছয়শ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। যা থেকে একেকজন সপ্তাহে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা আয় করে থাকেন।
পাহাড়ের এসব নারীদের নিপুন হাতে তৈরি এসব মোড়া ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে সমতলের জেলাগুলোতে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে এসব মোড়া সমতলের জেলাগুলোতে বাজারজাত করার মতো কাজটি করে থাকেন স্থানীয় পাইকার মো. আশরাফ আলী ও দীন মোহাম্মদ রিপন। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বাজারে এখানকার মোড়ার ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়ে মোড়ার স্থানীয় পাইকার মো. আশরাফ আলী বলেন, সপ্তাহে ৭০/৮০ জোড়া মোড়া বিপণন করা হয় এসব জেলাগুলোতে।
মোড়া তৈরিতে নিয়োজিত নারীরা যথাযথ প্রশিক্ষণসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি পাহাড়ের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন লিটন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখা এসব নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তাদেরকে ঋণ প্রদানসহ মোড়া শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।