স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি দীর্ঘ দিনের। অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও স্থানীয় সব নির্বাচনই দলীয়ভাবে হয়ে আসছে।
মনোনয়ন থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচার সবই হচ্ছে দলীয়ভাবে। সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও দলীয়ভাবে নির্বাচন করার জোরালো দাবি ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রকাশ্যেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার ওপর জোর দেন।
বিএনপিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সুরও ছিল একই।
শেষ পর্যন্ত জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বর্তমান সরকার আপাতত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অন্যতম স্তর জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছে।এরই অংশ হিসাবে জেলা পরিষদ আইন-২০০০ সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, আসন্ন মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার. পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত সার-সংওক্ষেপটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ত্ব করবেন।
তিন পার্বত্য জেলা বাদে ২০১১ সাল থেকে জেলা পরিষদগুলোতে অনির্বাচিত ব্যক্তিগণ প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
মন্ত্রিসভায় পাঠানো সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সুদীর্ঘকাল থেকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো তৃনমুল পর্যায় থেকে সর্বস্তরের জনগনের সেবা প্রদান করে আসছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দেশে বর্তমানে ৫ স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। এ গুলো মধ্যে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ. উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ।
এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত। এ সকল প্রতিষ্ঠানে নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হলেও বাস্তবে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনে দলীয় ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়ে থাকে।এছাড়া বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে থাকে।
জনগণ ও প্রতিনিধিগনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের সরাসরি অংশগ্রহণে নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করার দাবি উখাপিত হয়ে আসছে।
জনগনের এই গণতান্ত্রিক প্রত্যাশার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দলীয় প্রার্থীগণ নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ পাবে।
এতে প্রার্থীদের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রতিফলনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উপরন্তু এই প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে জনগনকে আরও বেশি সেবা প্রদানে তৎপর খাকবেন। এ ক্ষেত্রে তাকে মনোনয়ন প্রদানকারী রাজনৈতিক দল তাদের নীতি ও আর্দশ বাস্তবায়নে এবং জনস্বার্থ প্রতিপালনে তার কর্মকান্ড নজরদারীতে রাখতে পারবে।
স্থানীয় সরকারভুক্ত আরেক প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ গঠিত হলেও এটি অনির্বাচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সরকার সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ায় আগামীতে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন, দলীয় ব্যানারে নির্বাচনী প্রচার চালানো এবং দলীয় প্রতীকে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালায় সংশোধনী আনতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দলীয় ব্যানারে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন হয়।
বাংলাদেশে বিগত দিনের নির্বাচনগুলোতে পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক দলগুলো জড়িয়ে পড়েছিল। আইন সংশোধন হলে তা একটি কাঠামোর মধ্যে আসবে। আর নেতিবাচক দিকগুলো হচ্ছে, নিবন্ধনের বাইরে থাকা ছোট দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ না দিলে রাজনীতির বিকাশ বা উন্নয়ন ঘটবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। তখন স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। কিন্তু জেলা পরিষদের নির্বাচন করার কোনো উদ্যোগ এখনো নেই।
আইন অনুযায়ী, একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। চেয়ারম্যান ও এই ২০ জন সদস্যকে নির্বাচন করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন (থাকলে), উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
প্রশাসক নিয়োগের সময় ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানসহ পূর্ণাঙ্গ জেলা পরিষদ গঠনের কথাছিল।