ঢাকা ০৪:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক নারী দিবস গ্রামীণ নারীর কাজের স্বীকৃতি কতদূর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫০:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৮
  • ৩২৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানী থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে কেরানীগঞ্জের তারানগর গ্রাম। অথচ সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এখনও। অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি। মোসলেম উদ্দিন ও সাহেরা বানু এই গ্রামেরই বাসিন্দা। তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। কৃষিকাজ ছাড়াও পরিবারটির একাধিক আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে গরু ও মুরগি পালন।

শুক্রবার বিকেলে নিজ বাড়ির আঙিনায় কথা হয় মোসলেম উদ্দিন ও সাহেরা বানুর সঙ্গে। সাহেরা বানু তখন গরু নিয়ে ব্যস্ত। তিনি জানালেন, স্বামী সারাদিন জমিতে কাজ করে ক্লান্ত থাকেন। তাই ঘরের কাজের পাশাপাশি তিনি গরু ও মুরগি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। মোসলেম উদ্দিন দাবি করলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় মাঠে থাকেন তিনি। গরু-মুরগি তো বাড়ির আঙিনাতেই থাকে। এটুকু কাজ তার স্ত্রী করতেই পারে। তা ছাড়া সারাদিনে সাহেরা বানুর তেমন কাজও থাকে না।

স্বামীর এ কথার সমর্থনও করলেন সাহেরা  বানু। জানালেন, নির্ধারিত কাজ শেষ করে তিনিও কৃষিকাজে স্বামীর সমান ব্যস্ত থাকেন। যদিও পরিবারে তার এ কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই।

শুধু সাহেরা বানু নন; অধিকাংশ গ্রামীণ নারীর শ্রমই এভাবে বিনা পারিশ্রমিকের ঘর-গৃহস্থালির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। গ্রামীণ নারীরা খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে শস্য উৎপাদন, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি পালন, সবজি ও মৎস্য চাষ, বনায়ন ইত্যাদি কাজে পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রেখে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। নারীদের এই অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে এর কোনো স্বীকৃতি নেই। রাজনীতি, কৃষি, অর্থনীতি, গবেষণা থেকে শুরু করে বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে নারীরা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণে দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। ত্বরান্বিত হচ্ছে জাতীয় উন্নয়ন। কিন্তু এখনও গ্রামে নারীদের কাজের তেমন মূল্যায়ন নেই। গ্রামীণ নারীদের অবদানের সঠিক মূল্যমান নির্ণয় করলে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কয়েক শতাংশ বেড়ে যেত।

এ অবস্থায় আজ সোমবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। ‘পারিবারিক আয়ে নারীর অধিকারভিত্তিক ন্যায্যতা নিশ্চিত কর’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থা। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্‌যাপন কমিটির উদ্যোগে দেশের অন্তত ৪০ জেলায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।

নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর দীর্ঘ দিন গ্রামীণ নারীদের নিয়ে কাজ করছেন। তার মতে, নারী-পুরুষের মধ্যে চলমান বৈষম্যের মতোই প্রকট আকার ধারণ করেছে শহুরে ও গ্রামীণ নারীদের বৈষম্য। শহুরে নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ স্বীকৃতি পেলেও গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক সংগ্রাম যে তিমিরে, সেই তিমিরেই রয়ে যাচ্ছে। এ জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত মূলধন ও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক অসহযোগিতা, নারীদের বন্দিদশাই দায়ী।

গ্রামীণ নারী ও পুরুষের ওপর করা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজে ব্যয় করেন ৭ দশমিক ৭ ঘণ্টা। পুরুষ ২ দশমিক ৭টিতে করেন ২ দশমিক ৫ ঘণ্টা। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারী ৩ গুণ কাজ করেন।

গ্রামীণ নারীদের কাজের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে সরকারও নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে দৃশ্যমান কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারিভাবে নানান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি প্রকল্পে নারীর উন্নতি ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। শিক্ষিত নারীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা সরবরাহ করে তাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রকল্প ‘জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ’ বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীনে ‘তথ্য আপা :ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্প’ রয়েছে। তথ্য সরবরাহকারী এই তথ্য আপারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গ্রামের প্রান্তিক নারীদের সচেতন করছেন। যার মাধ্যমে প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট নারীর স্বাক্ষরতা, কর্মদক্ষতা ও প্রবেশযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আন্তর্জাতিক নারী দিবস গ্রামীণ নারীর কাজের স্বীকৃতি কতদূর

আপডেট টাইম : ১০:৫০:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানী থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে কেরানীগঞ্জের তারানগর গ্রাম। অথচ সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এখনও। অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি। মোসলেম উদ্দিন ও সাহেরা বানু এই গ্রামেরই বাসিন্দা। তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। কৃষিকাজ ছাড়াও পরিবারটির একাধিক আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে গরু ও মুরগি পালন।

শুক্রবার বিকেলে নিজ বাড়ির আঙিনায় কথা হয় মোসলেম উদ্দিন ও সাহেরা বানুর সঙ্গে। সাহেরা বানু তখন গরু নিয়ে ব্যস্ত। তিনি জানালেন, স্বামী সারাদিন জমিতে কাজ করে ক্লান্ত থাকেন। তাই ঘরের কাজের পাশাপাশি তিনি গরু ও মুরগি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। মোসলেম উদ্দিন দাবি করলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় মাঠে থাকেন তিনি। গরু-মুরগি তো বাড়ির আঙিনাতেই থাকে। এটুকু কাজ তার স্ত্রী করতেই পারে। তা ছাড়া সারাদিনে সাহেরা বানুর তেমন কাজও থাকে না।

স্বামীর এ কথার সমর্থনও করলেন সাহেরা  বানু। জানালেন, নির্ধারিত কাজ শেষ করে তিনিও কৃষিকাজে স্বামীর সমান ব্যস্ত থাকেন। যদিও পরিবারে তার এ কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই।

শুধু সাহেরা বানু নন; অধিকাংশ গ্রামীণ নারীর শ্রমই এভাবে বিনা পারিশ্রমিকের ঘর-গৃহস্থালির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। গ্রামীণ নারীরা খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে শস্য উৎপাদন, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি পালন, সবজি ও মৎস্য চাষ, বনায়ন ইত্যাদি কাজে পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রেখে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। নারীদের এই অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে এর কোনো স্বীকৃতি নেই। রাজনীতি, কৃষি, অর্থনীতি, গবেষণা থেকে শুরু করে বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে নারীরা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণে দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। ত্বরান্বিত হচ্ছে জাতীয় উন্নয়ন। কিন্তু এখনও গ্রামে নারীদের কাজের তেমন মূল্যায়ন নেই। গ্রামীণ নারীদের অবদানের সঠিক মূল্যমান নির্ণয় করলে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কয়েক শতাংশ বেড়ে যেত।

এ অবস্থায় আজ সোমবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। ‘পারিবারিক আয়ে নারীর অধিকারভিত্তিক ন্যায্যতা নিশ্চিত কর’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থা। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্‌যাপন কমিটির উদ্যোগে দেশের অন্তত ৪০ জেলায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।

নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর দীর্ঘ দিন গ্রামীণ নারীদের নিয়ে কাজ করছেন। তার মতে, নারী-পুরুষের মধ্যে চলমান বৈষম্যের মতোই প্রকট আকার ধারণ করেছে শহুরে ও গ্রামীণ নারীদের বৈষম্য। শহুরে নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ স্বীকৃতি পেলেও গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক সংগ্রাম যে তিমিরে, সেই তিমিরেই রয়ে যাচ্ছে। এ জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত মূলধন ও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক অসহযোগিতা, নারীদের বন্দিদশাই দায়ী।

গ্রামীণ নারী ও পুরুষের ওপর করা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজে ব্যয় করেন ৭ দশমিক ৭ ঘণ্টা। পুরুষ ২ দশমিক ৭টিতে করেন ২ দশমিক ৫ ঘণ্টা। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারী ৩ গুণ কাজ করেন।

গ্রামীণ নারীদের কাজের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে সরকারও নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে দৃশ্যমান কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারিভাবে নানান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি প্রকল্পে নারীর উন্নতি ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। শিক্ষিত নারীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা সরবরাহ করে তাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রকল্প ‘জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ’ বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীনে ‘তথ্য আপা :ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্প’ রয়েছে। তথ্য সরবরাহকারী এই তথ্য আপারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গ্রামের প্রান্তিক নারীদের সচেতন করছেন। যার মাধ্যমে প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট নারীর স্বাক্ষরতা, কর্মদক্ষতা ও প্রবেশযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে।