হাওর বার্তা ডেস্কঃ দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় জন্মস্থান মিঠামইনে বুধবার বিকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গণসংবর্ধনায় রাষ্ট্রপতি বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্মৃতিকাতর এবং আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রপতির দেয়া বক্তৃতার প্রায় পুরোটা অংশ জুড়েই ছিল জন্মস্থানকে ঘিরে নানা স্মৃতির কথা।
মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস শাহিদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহান, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজল প্রমুখ।
শৈশবের নানা স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মিঠামইন আসলে শৈশবের কথা মনে পড়ে। আমি ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম। বাবার সঙ্গে মিঠামইনে আসতাম। বিভিন্ন হিন্দু বাড়িতে যেতাম। যেখানে পেয়ারা গাছ আছে, সেখানেই হানা দিতাম। এমনকি হিন্দু বাড়িতে গিয়ে রান্নাঘরে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছি। এলাকার লোকজন বলতো, হাজী সাহেবের ছেলে একটা পাগল।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, যে দলকে ভোট দিলে দেশের উন্নতি হবে, সেই দলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুন। চোর-বাটপারকে ভোট দিয়েন না। যারা নিজেদের আখের গোছাতে এমপি, মন্ত্রী হয় তাদের ভোট দিয়েন না। সঠিক সৎ ও যারা অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেন না আগামী নির্বাচনে তাদের ভোট দিন।
শৈশবের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি বর্ষাকালে সাঁতরিয়ে মিঠামইন বাজার থেকে বাড়িতে গিয়েছি। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেছি। ওই সময় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ আমাকে নানাভাবে হয়রানি করতো। আমি ছাত্রজীবনে জেলও খেটেছি।
মন-মানসিকতার দিক থেকে তাঁর কোন পরিবর্তন আসেনি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সেই ৭০ সাল থেকে বার বার আমাকে আপনারা এমপি নির্বাচিত করছেন। ১৯৭৪ সালের বন্যার সময় দুর্ভিক্ষের মোকাবেলা করেছি। এমপি হয়ে বিরোধী দলের উপনেতা হয়েছি, ডেপুটি স্পিকার হয়েছি, স্পিকার হয়েছি। ২০১৩ সালের মার্চে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হই। পরবর্তিতে জিল্লুর রহমান সাহেব মারা যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হই। পুনরায় আমাকে দ্বিতীয় বারের মতো রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। আমি দ্বিতীয় বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথমবার এসেছিলাম মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমি ভুলিনি, আমি যে একজন কৃষক পরিবারের ছেলে। শিকড়কে ভুলে গেলে কেউ মানুষ হতে পারে না। আমার পিতা একজন কৃষক ছিলেন। আমি কোন সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি। আমার আত্মীয়স্বজন এখনো অনেক গরিব রয়েছে। রাষ্ট্রপতি হলেই যে চাকরি দিতে হবে, সেটা কোন কথা নয়। আমি সকলকে সমান চোখে দেখি। আপনাদের সন্তান হিসেবে বাংলাদেশকে বিদেশে উর্ধ্বে তোলার চেষ্টা করেছি।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মিঠামইন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩৩ থেকে ৫১ শয্যায় উন্নতিকরণসহ মোট ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এলাকার দাবি-দাওয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সমস্ত হাওর এলাকায় পাকা রাস্তার করার উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান কাটার শ্রমিকেরা আমাদের এলাকায় আসতো। কিন্তু এখন আর নেই। নেই কোন পাল তোলা নৌকা। শ্রমিক আসে না বলে কৃষিকাজ তো আর থেকে নেই। ধান ফলাতে হবে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন প্রকার ধান কাটার মেশিন আবিষ্কার হয়েছে। এমনকি ধান শুকানোর ড্রায়ার মেশিনও বের হয়েছে। হাওরে অটো রাইস মিল করতে কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন। হাওরের উন্নয়নে এখন নতুন করে চিন্তা করি। বিভিন্ন এলাকায় ফাইওভার করার চিন্তা রয়েছে। ভবিষ্যত স্বপ্ন দেখতে হবে।
দুপুর আড়াইটায় মিঠামইন উপজেলায় পৌঁছে নতুন ডাকবাংলোয় গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। বুধবার রাতে নিজ বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন রাষ্ট্রপতি। পরদিন মিঠামইনে বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন ও সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। শুক্রবার বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে ফেরার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতির।