শুক্রবার শুরু হয়েছিল তিন দিনব্যাপী ‘প্রথম নিখিলবঙ্গ বাউল সঙ্গীত সম্মিলনী’ ও ‘অখণ্ড সাধুসঙ্গ’। গতকাল রবিবার ছিল সম্মিলনীর সমাপনী দিন। ফকির লালন সাঁইজির ১২৫তম তিরোধান বার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আগের দু’দিনের মতো গতকালও ছিল আলোচনা, সেমিনার আর সূর্যাস্ত থেকে ভোর পর্যন্ত দুই বাংলার বাউল-ফকিরদের মহাভাবময় বাউলসঙ্গীত।অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ১২ জন ও পশ্চিমবঙ্গের ১২ জন প্রবীণ বাউলকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাউলদের হাতে সনদ ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সাবেক সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিত্ কুমার বিশ্বাস। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন লালন বিশ্বসংঘের নির্বাহী পরিচালক আবদেল মাননান। সম্মাননা প্রদানের পরই আবার বিকালে রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে উত্সবস্থলের ভিতরে শামিয়ানা ও সাদা কাপড়ে মোড়ানো সাধুসঙ্গস্থলের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। একতারা, দোতারা, খোল, ডুগডুগি, তবলা, হারমোনিয়ামসহ বাদ্যযন্ত্রের সুরের মূর্ছনায় ভাসলেন শ্রোতাও। সন্ধ্যা হতেই ভিড় বাড়ছিল ভক্ত-অনুরাগীর।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা ফকির আবুল হোসেন গাইছিলেন ‘আশার সিন্ধুতীরে বসে আছি হে সদয়’। উপস্থিত শ্রোতারা তার গানের সাথে গলা মিলিয়ে আস্বাদন করছিলেন সাঁইজির পরম ভাবের এই গান। এরপরই তিনি পরিবেশন করেন ‘বিনা বীজের আজগুবি গাছ চাঁদ ধরেছে তাই’ গানটি। ঝিনাইদহ থেকে আসা জহুরা বাউল পরিবেশন করেন ‘পার করো দয়াল আমার কেশে ধরে’ গানটি। মেহেরপুর থেকে আসা হারুন ফকির পরিবেশন করেন ‘দাসের পানে একবার চাও হে দয়াময়’ ও ‘আল্লাহ বলে ডাক রে মনপাখি’ গান। তারাচাঁদ শাহ গেয়ে শোনান ‘এমন সৌভাগ্য আমার কবে হবে’ ও ‘মনের নেংটি এঁটে কর ফকিরি’। বাউল ওয়ালিউর রহমান পরিবেশন করেন ‘মনের মনে হয় না একদিনে’ গানটি।
শুধু বাংলাদেশের বাউলরাই নয়, সাঁইজির অমৃত বাণীসুধা পান করান পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান ও বীরভূম জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিত্বশীল বাউল সাধকেরা। এঁদের মধ্যে বীরেন দাস বাউল, সুভদ্রা বিশ্বাস, ইলা বিশ্বাস, নিতাইদাস বাউল, আবদুল হালিম, গোলাম মওলা, সৌমেন বিশ্বাস, লাল মোহাম্মদ শেখ সাঁইজির গান পরিবেশন করেন।
সেতার-সরোদ কর্মশালা হাতে-কলমে শেখা: পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও কুশল দাসের পরিচালনায় শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘সংগীত অবয়ব’ শীর্ষক সেতার-সরোদ কর্মশালা দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে এই দুই সঙ্গীতজ্ঞের কাছে সেতার ও সরোদের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিখতে দেখা গেলো শিক্ষার্থীকে। পণ্ডিত কুশল দাস সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে সন্ধ্যা থেকেই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের সেতার বাজানোর নানা বিষয় সম্পর্কে তালিম দেন। স্বর, ঠাঁট, রাগ-রাগিনী, নানা বিষয়ে হাতে কলমে শেখান। একই সময়ে আরেকটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের সরোদ বাজানোর নানা কৌশল শেখান পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার।