ঢাকা ০১:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করে ডিম-মুরগির সিন্ডিকেট: বিপিএ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:০০:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৪ বার

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড (মুরগির খাবার) ও মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ)। এ কারণে ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। যত দিন পর্যন্ত সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাজারে স্বস্তি আসবে না জানানো হয়েছে।

আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছে বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করপোরেট কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ফিডের দাম বাড়িয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ফিডের দাম কমেছে, কিন্তু দেশের বাজারে তার কোনো প্রতিফলন নেই। যখন মুরগির বাচ্চা আমদানি করা হতো, তখন দেশের বাজারে মুরগির বাচ্চার দাম ছিল কম, কিন্তু দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির পরেই কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট গঠন করে এবং দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে দেশের প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং একচেটিয়া করপোরেট গ্রুপগুলোর হাতে পুরো পোলট্রি বাজার চলে যাচ্ছে।

তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বলেন, দেশে বছরে ৮০ লাখ টন ফিড উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি ফিডে যদি ৫ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়, তবে ১ টন ফিডে ৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত মুনাফা হয়। আর ৮০ লাখ টন ফিডে কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।

এ ছাড়া, দেশে বছরে প্রায় ১০৪ কোটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদিত হয়। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা অতিরিক্ত নেয়, তবে কোম্পানিগুলো খামারিদের কাছ থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। এভাবে, করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড ও মুরগির বাচ্চায় বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।

প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মুরগির ৮০ শতাংশ উৎপাদন নিশ্চিত করে উল্লেখ করে সুমন হাওলাদার বলেন, কারসাজির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা করার পরেও কোম্পানিগুলো সরকারকে তাদের মনগড়া ক্ষতির গল্প শোনাচ্ছে। এই ধরনের অবস্থা শিল্পকে আরও বিভ্রান্তিকর এবং শঙ্কিত করে তুলবে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, যা দেশের খামারিদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যেমন তারা উচ্চমূল্যে ফিড ও মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করে, ফলে খামারিরা উৎপাদন খরচ পুষিয়ে উঠতে পারছেন না এবং তাঁদের ব্যবসায় হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে।

আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

এটি শুধু খামারিদের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং দেশের খাদ্যনিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্যও বিপজ্জনক। যদি এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে পোলট্রি শিল্পের সংকট আরও প্রকট হবে এবং আমাদের দেশের খাদ্য ব্যবস্থা, কৃষি খাতের টেকসই উন্নতি এবং এখানে জড়িত পরোক্ষ প্রত্যক্ষভাবে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।

সরকারের উচিত নীতিনির্ধারক পর্যায় করপোরেট গ্রুপসহ প্রান্তিক খামারিদের মতামত নেওয়া। এ ক্ষেত্রে করপোরেট কোম্পানিগুলোর ফিড মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভেঙে প্রান্তিক খামারিদের জন্য একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা। ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজারে দামের অস্থিরতা রোধ করতে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ডিম ও মুরগির দাম বাড়লে নয়, বরং ফিড ও মুরগির বাচ্চার দামও যদি বাড়ে, তাহলে সে ক্ষেত্রে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ জরুরি।

একবার করপোরেটদের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে, তখন ডিম ও মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষায় এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করে ডিম-মুরগির সিন্ডিকেট: বিপিএ

আপডেট টাইম : ০৭:০০:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড (মুরগির খাবার) ও মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ)। এ কারণে ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। যত দিন পর্যন্ত সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাজারে স্বস্তি আসবে না জানানো হয়েছে।

আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছে বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করপোরেট কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ফিডের দাম বাড়িয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ফিডের দাম কমেছে, কিন্তু দেশের বাজারে তার কোনো প্রতিফলন নেই। যখন মুরগির বাচ্চা আমদানি করা হতো, তখন দেশের বাজারে মুরগির বাচ্চার দাম ছিল কম, কিন্তু দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির পরেই কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট গঠন করে এবং দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে দেশের প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং একচেটিয়া করপোরেট গ্রুপগুলোর হাতে পুরো পোলট্রি বাজার চলে যাচ্ছে।

তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বলেন, দেশে বছরে ৮০ লাখ টন ফিড উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি ফিডে যদি ৫ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়, তবে ১ টন ফিডে ৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত মুনাফা হয়। আর ৮০ লাখ টন ফিডে কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।

এ ছাড়া, দেশে বছরে প্রায় ১০৪ কোটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদিত হয়। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা অতিরিক্ত নেয়, তবে কোম্পানিগুলো খামারিদের কাছ থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। এভাবে, করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড ও মুরগির বাচ্চায় বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।

প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মুরগির ৮০ শতাংশ উৎপাদন নিশ্চিত করে উল্লেখ করে সুমন হাওলাদার বলেন, কারসাজির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা করার পরেও কোম্পানিগুলো সরকারকে তাদের মনগড়া ক্ষতির গল্প শোনাচ্ছে। এই ধরনের অবস্থা শিল্পকে আরও বিভ্রান্তিকর এবং শঙ্কিত করে তুলবে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, যা দেশের খামারিদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যেমন তারা উচ্চমূল্যে ফিড ও মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করে, ফলে খামারিরা উৎপাদন খরচ পুষিয়ে উঠতে পারছেন না এবং তাঁদের ব্যবসায় হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে।

আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

এটি শুধু খামারিদের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং দেশের খাদ্যনিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্যও বিপজ্জনক। যদি এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে পোলট্রি শিল্পের সংকট আরও প্রকট হবে এবং আমাদের দেশের খাদ্য ব্যবস্থা, কৃষি খাতের টেকসই উন্নতি এবং এখানে জড়িত পরোক্ষ প্রত্যক্ষভাবে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।

সরকারের উচিত নীতিনির্ধারক পর্যায় করপোরেট গ্রুপসহ প্রান্তিক খামারিদের মতামত নেওয়া। এ ক্ষেত্রে করপোরেট কোম্পানিগুলোর ফিড মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভেঙে প্রান্তিক খামারিদের জন্য একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা। ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজারে দামের অস্থিরতা রোধ করতে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ডিম ও মুরগির দাম বাড়লে নয়, বরং ফিড ও মুরগির বাচ্চার দামও যদি বাড়ে, তাহলে সে ক্ষেত্রে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ জরুরি।

একবার করপোরেটদের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে, তখন ডিম ও মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষায় এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।