ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, নষ্ট হচ্ছে বোরোর বীজতলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৪:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৫ বার
লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে গত কয়েকদিন ধরে চলমান তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবন। কুয়াশার কারণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম বোরোর বীজতলা। এতে করে ব্যাহত হতে পারে বোরো ধানের আবাদ। যদি এভাবে কুয়াশা ও তীব্র শীত অব্যাহত থাকে, তাহলে মাঠের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানের আবাদ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি বীজতলা রয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে।
সদর উপজেলার যাদৈয়া এলাকার কৃষক ওসমান গনি ও দিদার হোসেন জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। চারা লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। যদি এইভাবে কুশায়া ও শীত পড়তে থাকে, তাহলে বোরো আবাদে বীজের সংকট দেখা দিবে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমাম হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশা ও শীতের প্রভাবে কিছু বীজতলা নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি বীজতলা যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বীজতলায় পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সকালে ওই পানি বীজতলা থেকে নামিয়ে দিলে ক্ষতির আশংকা থাকবে না।
ঘন কুয়াশার কারণে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ব্যাহত হচ্ছে ফেরী চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো যাত্রী। মজুচৌধুরীর হাট ফেরীঘাট বিআইডাব্লিউটিএ’র সহকারী ম্যানেজার মো. আতিকুজ্জামান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরী চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতে লক্ষ্মীপুরে জনজীবনে বেড়েছে দূর্ভোগ। কনকনে হিমেল ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে জেলার সাধারণ মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। প্রতিদিন বিকেল থেকেই তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ।
গরম কাপড়ের অভাবে কাজে যেতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। চরম শীত কষ্টে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন উপকূলীয় এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এদিকে শীর্তাতের মাঝে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুই হাজারের বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার।
এদিকে ঠান্ডায় জেলা জুড়ে বাড়ছে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শাসকষ্ট জনিত রোগ। গত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক রোগী। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। একই অবস্থা রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর আত্মীয় আবদুল মালেক ও জিয়ান জানান, প্রচন্ড ঠান্ডায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু বেড পাচ্ছিনা। প্রতিটি বেডে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে কয়েকগুন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরুপ পাল জানান, তীব্র শীতে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঔষধ রয়েছে। সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে। আরো কয়েকদিন রোগীর চাপ থাকবে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, নষ্ট হচ্ছে বোরোর বীজতলা

আপডেট টাইম : ০৬:৫৪:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে গত কয়েকদিন ধরে চলমান তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবন। কুয়াশার কারণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম বোরোর বীজতলা। এতে করে ব্যাহত হতে পারে বোরো ধানের আবাদ। যদি এভাবে কুয়াশা ও তীব্র শীত অব্যাহত থাকে, তাহলে মাঠের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানের আবাদ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি বীজতলা রয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে।
সদর উপজেলার যাদৈয়া এলাকার কৃষক ওসমান গনি ও দিদার হোসেন জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। চারা লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। যদি এইভাবে কুশায়া ও শীত পড়তে থাকে, তাহলে বোরো আবাদে বীজের সংকট দেখা দিবে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমাম হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশা ও শীতের প্রভাবে কিছু বীজতলা নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি বীজতলা যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বীজতলায় পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সকালে ওই পানি বীজতলা থেকে নামিয়ে দিলে ক্ষতির আশংকা থাকবে না।
ঘন কুয়াশার কারণে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ব্যাহত হচ্ছে ফেরী চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো যাত্রী। মজুচৌধুরীর হাট ফেরীঘাট বিআইডাব্লিউটিএ’র সহকারী ম্যানেজার মো. আতিকুজ্জামান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরী চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতে লক্ষ্মীপুরে জনজীবনে বেড়েছে দূর্ভোগ। কনকনে হিমেল ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে জেলার সাধারণ মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। প্রতিদিন বিকেল থেকেই তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ।
গরম কাপড়ের অভাবে কাজে যেতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। চরম শীত কষ্টে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন উপকূলীয় এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এদিকে শীর্তাতের মাঝে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুই হাজারের বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার।
এদিকে ঠান্ডায় জেলা জুড়ে বাড়ছে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শাসকষ্ট জনিত রোগ। গত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক রোগী। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। একই অবস্থা রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর আত্মীয় আবদুল মালেক ও জিয়ান জানান, প্রচন্ড ঠান্ডায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু বেড পাচ্ছিনা। প্রতিটি বেডে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে কয়েকগুন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরুপ পাল জানান, তীব্র শীতে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঔষধ রয়েছে। সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে। আরো কয়েকদিন রোগীর চাপ থাকবে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।