ঢাকা ০৩:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কটিয়াদীতে লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:২৩:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৮
  • ৫১০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শাপলা (ইংরেজি: Nymphaeaceae) পুষ্প বৃক্ষ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভূক্ত সকল উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। এই উদ্ভিদ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে এই ফুল পুকুর ও বাগান সাজাতে খুব জনপ্রিয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার প্রভৃতি দেশের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। এই ফুল পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও দেখা যায়। এই ফুল যেমন দেখা যায় চাষের জমিতে, তেমনই হয় বন্য এলাকায়। কাটা ধান ক্ষেতের জমে থাকা অল্প পানিতে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। বিশ্বে এই উদ্ভিদের প্রায় ৩৫টি প্রজাতি পাওয়া গেছে।

শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের স্বীকৃতি নিয়ে ‘শাপলা’ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ‘লাল শাপলা’র দৃশ্য যেন অপরুপ সোন্দর্য্যরে এক বিশাল আয়োজন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া বাজার সংলগ্ন রৌয়াডুবি বিলে। সকাল বেলায় ফোঁটে থাকা লাল শাপলার দিকে তাকালে চোখ যেন জুড়িয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে।

রৌয়াডুবি বিলের পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা আবু নাঈম বলেন, এক সময় প্রচুর পদ্মফুল ফুটতো এই বিলে। তবে পুরো বিল জুড়ে প্রচুর ‘সাদা শাপলা’ ফুটতে দেখা যেত। গত একদশক ধরে এই বিলে ‘লাল শাপলা’ ফোঁটে বলেন জানান তিনি।

উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে। বিশেষ করে শাপলা বর্ষাকালে জন্মে থাকে। আর ফুল ফোঁটে। জুন মাসের শেষের দিকে ফুল ফোঁটা শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়।

মসুয়া পরিবার পরিকল্পনা পরির্দশক আলম মিয়া জানান, বর্ষা কালে ফুল থেকে যে অংশ ফলে রূপান্তরিত হয় তাকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ‘ঢ্যাব’ বলি। এ ‘ঢ্যাব’র ভিতরে অনেক ছোট ছোট বীজ থাকে। এগুলো উঠিয়ে নিয়ে ভেঙ্গে শুকিয়ে খই একসময় ভেজে খেতাম। এ খই খুবই সুস্বাদু।

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, এই অপরূপ দৃশ্য দেখে যেকেউ মুগ্ধ হবেই । জাতীয় ফুল শাপলা হলেও এক সময় হয়তো পাঠ্য বইয়ে বা কাগজে-কলমে লেখা থাকবে। দ্রুত বিলুপ্তির কারণে বাস্তবে আর শাপলা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক সময় বিলে ঝিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলার বাহারী রূপে নয়ন জুড়িয়ে যেত। শাপলা ছোট, বড় সকলের খুব প্রিয় ফুল। গ্রামের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুব জনপ্রিয় ছিল এই শাপলা। একসময় অনেকেই বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো।

স্থানীয় অনেকের ধারনা, নদী-নালা, খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয় ভরাটের কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে এই জাতীয় ফুল শাপলা ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এছাড়াও অযত্ন অবহেলায় আর কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জাতীয় ফুল হিসেবে সংরক্ষনে রাখার সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কটিয়াদীতে লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য

আপডেট টাইম : ০১:২৩:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শাপলা (ইংরেজি: Nymphaeaceae) পুষ্প বৃক্ষ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভূক্ত সকল উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। এই উদ্ভিদ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে এই ফুল পুকুর ও বাগান সাজাতে খুব জনপ্রিয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার প্রভৃতি দেশের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। এই ফুল পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও দেখা যায়। এই ফুল যেমন দেখা যায় চাষের জমিতে, তেমনই হয় বন্য এলাকায়। কাটা ধান ক্ষেতের জমে থাকা অল্প পানিতে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। বিশ্বে এই উদ্ভিদের প্রায় ৩৫টি প্রজাতি পাওয়া গেছে।

শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের স্বীকৃতি নিয়ে ‘শাপলা’ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ‘লাল শাপলা’র দৃশ্য যেন অপরুপ সোন্দর্য্যরে এক বিশাল আয়োজন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া বাজার সংলগ্ন রৌয়াডুবি বিলে। সকাল বেলায় ফোঁটে থাকা লাল শাপলার দিকে তাকালে চোখ যেন জুড়িয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে।

রৌয়াডুবি বিলের পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা আবু নাঈম বলেন, এক সময় প্রচুর পদ্মফুল ফুটতো এই বিলে। তবে পুরো বিল জুড়ে প্রচুর ‘সাদা শাপলা’ ফুটতে দেখা যেত। গত একদশক ধরে এই বিলে ‘লাল শাপলা’ ফোঁটে বলেন জানান তিনি।

উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে। বিশেষ করে শাপলা বর্ষাকালে জন্মে থাকে। আর ফুল ফোঁটে। জুন মাসের শেষের দিকে ফুল ফোঁটা শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়।

মসুয়া পরিবার পরিকল্পনা পরির্দশক আলম মিয়া জানান, বর্ষা কালে ফুল থেকে যে অংশ ফলে রূপান্তরিত হয় তাকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ‘ঢ্যাব’ বলি। এ ‘ঢ্যাব’র ভিতরে অনেক ছোট ছোট বীজ থাকে। এগুলো উঠিয়ে নিয়ে ভেঙ্গে শুকিয়ে খই একসময় ভেজে খেতাম। এ খই খুবই সুস্বাদু।

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, এই অপরূপ দৃশ্য দেখে যেকেউ মুগ্ধ হবেই । জাতীয় ফুল শাপলা হলেও এক সময় হয়তো পাঠ্য বইয়ে বা কাগজে-কলমে লেখা থাকবে। দ্রুত বিলুপ্তির কারণে বাস্তবে আর শাপলা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক সময় বিলে ঝিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলার বাহারী রূপে নয়ন জুড়িয়ে যেত। শাপলা ছোট, বড় সকলের খুব প্রিয় ফুল। গ্রামের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুব জনপ্রিয় ছিল এই শাপলা। একসময় অনেকেই বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো।

স্থানীয় অনেকের ধারনা, নদী-নালা, খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয় ভরাটের কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে এই জাতীয় ফুল শাপলা ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এছাড়াও অযত্ন অবহেলায় আর কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জাতীয় ফুল হিসেবে সংরক্ষনে রাখার সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।