হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে ছুরি, চাপাতি, দা-বঁটির দোকানগুলোর কাছে যাওয়ার আগে দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দ। কিছু কিছু দোকানে শাণ দেওয়ার তীক্ষ্ণ আওয়াজও ভেসে আসছে। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার ছুরি, চাপাতি, কুড়াল কিনতে কামারপট্টিতে আগে ভাগেই ঢুঁ দিচ্ছেন ক্রেতারা।
এদিকে কামারপট্টির টুংটাং শব্দ আর ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা দরজায় কড়া নাড়ছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে প্রতিবারের মতো এবারের ঈদুল আজহাতেও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের পশু কোরবানি করবেন। আর এই কোরবানির প্রতিটি ধাপে প্রয়োজন পড়বে চাপাতি বা ছুরির। এই প্রয়োজনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রকম ছুরি, বটি ও চাপাতির পসরা সাজিয়ে বসেছেন কামারপাড়ার দোকানিরা। আরো থাকছে পুরোনো ছুরি-বঁটিতে শান দেওয়ার ব্যবস্থা।
*** আজকে পাঠকদের জন্য থাকছে এসব ছুরি-চাপাতির খুঁটিনাটি ***
হরেক রকম ছুরি:
এবারের ঈদে কারওয়ানবাজারের কামারপাড়ায় দেখা মিলবে চাপাতি, দা, বটি, ও চাইনিজ কুড়ালের। বিভিন্ন ধরনের ছুরির মধ্যে রয়েছে- পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি, মাংস কাটার ছুরি, কোপ ছুরি ও জবাই করার ছুরি। তাৎক্ষণিক হালকা শান দেওয়ার জন্য বিক্রি হচ্ছে রেত বা স্টেন। এ ছাড়া যদি তৈরি করা জিনিসপত্র পছন্দ না হয় তাহলে নিজের পছন্দমতো অর্ডার দিয়ে বানিয়েও নেওয়া যাবে কামারপাড়ার প্রতিটি জিনিস।
দোকানিরা জানান, আমাদের প্রতিটি দোকানে প্রায় চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করে। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই আমরা একটি চাপাতি বানিয়ে দিতে পারব। ছুরি, দা-বটি তৈরি করতে এর থেকে আরো কম সময় লাগে।
কত দামে কী কিনবেন:
পিস হিসেবে কিনতে গেলে একটি ভালো মানের চাপাতির দাম পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা। চাপাতির দামেই পাওয়া যাবে জবাই করার ছুরি। আর মানের ভিত্তিতে ৩০-১২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে চামড়া ছাড়ানোর ছুরি। একই ভিত্তিতে ১৫০-২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে মাংস কাটার ছুরি। ছোট-বড় আকারের ভিত্তিতে একটি বটির দাম পড়বে ৮০-৮০০ টাকার মধ্যে। তাৎক্ষণিক শানের জন্য ৫০ টাকায় পাওয়া যাবে ভালো মানের রেত। এ ছাড়া পশুর মাংস কাটতে ব্যবহার করতে পারেন চাইনিজ কুড়াল। দাম পড়বে প্রায় ৪০০-৭০০ টাকার মধ্যে। প্রতিটি জিনিস যদি একসাথে সেট হিসেবে কিনতে চান সেক্ষেত্রে দাম পড়বে ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে। আর কেজি দরে কিনতে চাইলে প্রতি কেজি পাকা স্প্রিংয়ের দাম পড়বে ৬০০ টাকা। রেতের কেজি ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা। প্লাগ বা এঙ্গেলের কেজি পড়বে ১৫০ টাকা। তবে প্লাগ বা এঙ্গেলের কেরামতি শুধু ছুরি ও বটিতেই সীমাবদ্ধ।
শান দিন পুরোনো ছুরিতে: ঈদ উপলক্ষে বাড়ির পুরনো ছুরি-চাপাতি বা বঁটিতে শান দিয়ে নতুনের মত ধারালো করে তোলার ব্যবস্থাও রয়েছে কাওরানবাজারের কামারপাড়ায়। একটি চাপাতিতে শান দিতে খরচ পড়বে প্রায় ৫০-৮০ টাকা। ছোট ছুরিতে শান দিতে গুনতে হবে ২০-৩০ টাকা। বড় ছুরির শান দেওয়ার দামটাও একটু বড়। ৫০-৭০ টাকার মধ্যে শান দেওয়া যাবে বড় ছুরিতে। আর বঁটিতে শান দেওয়ার জন্য খরচ করতে হবে প্রায় ৬০-৮০ টাকা।
শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে টঙ্গী হতে কারওয়ান বাজারে চাপাতি কিনতে এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি বলেন গতবার কিনছি, কিন্তু এইবার গরুর সংখ্যা বাড়ায় চাপাতিও বেশি লাগবে। পরে ভিড় হয়, দামও বাড়ায়ে দেয়। তাই আগেই কিনে নিতেছি।
এদিকে কামারপাড়ার দোকানিরা জানান, এবারের ঈদে গতবারের তুলনায় বিক্রি বেশি হচ্ছে। দামও বেড়ে গেছে।