হাওর বার্তা ডেস্কঃ দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস) ঢাকা-এর ৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘আলোর পথে ৭ বছর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
আত্মমানবতার সেবায় এক মহতী ব্রত দৃর্ষ্টি উন্নয়ন সেবা সংস্থার যাত্রা শুরু করেন ২৮/০৭/২০১১ ইং । এই মানব সেবামুখী প্রতিষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিনামূলে চক্ষু চিকিৎসা ও চোখের বিভিন্ন ধরনের অপারেশন করে বহু অন্ধ ব্যক্তির চোখে (আলো) দৃর্ষ্টি দান করে যাচ্ছেন । লায়ন ডাঃ মোঃ শাহীন রেজা চৌধুরী আত্মমানবতার সেবা মুখী প্রতিষ্ঠান দৃর্ষ্টি উন্নয়ন সংস্থা মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। হাওর এলাকার সন্তান এই আলোকিত মানুষটির শৈশব হতে দু নয়নের স্বপ্ন ছিলো অধিকার বঞ্চিত অবহেলিত দুস্থ ও মেহনতি মানুষের পাশে থেকে সেবা করা । মানুষের সেবা করা চিকিৎসক হিসেবে পথ চলতে শুরু করেন তিনি।
এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমা দেশ ও মানুষের কল্যাণে সৃজনশীল কাজে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখেন । বাংলাদেশের হাওরের প্রত্যেকটি অঞ্চলের মানুষের অন্ধ চক্ষুর চিকিৎসা সেবায় সর্বদায় করে যান । তাঁদের সততা, নিষ্টা, মেধা, কর্মদক্ষতার মাধ্যমে তার নিজ এলাকার মানুষ সহ দেশ ও দেশের সকল মানুষের কল্যাণের অন্ধ চিকিৎসা সেবা করেছেন । লায়ন ডাঃ মোঃ শাহীন রেজা চৌধুরী কিশোরগঞ্জ সকল উপজেলা ও বিভিন্ন এলাকাতে অন্ধ জগত হতে (আলোর দান ) চক্ষু চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। অন্যতম এলাকার মধ্যে মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম উপজেলার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে অন্ধকার হতে আলোর জগত দেখার জন্য চক্ষু চিকিৎসা করছেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, বিশেষ অতিথি লায়ন বদিউল ইসলাম, প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টা, (ডাস) উপদেষ্টা মণ্ডলী সম্মানিত দাতা, ডাসের সদস্য ও পরিবার বর্গ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহিদ্দিন, ঢাকাস্থ কিশোরগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ আক্কাছ আলী বেপারী, ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী, ওয়ারী জুনের সহকারি পুলিশ সুপার নূরুল আমিন, গুনীজন অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন ও অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ, ডা. উদ্ধব মল্লিক, ডা. মুমিনুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব মনোয়ার হোসাইন রনি, ফারুক আহম্মেদ, কৃতি ছাত্র-ছাত্রী, টেলিভিশন ও পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ, নিউ মিডিয়া কর্মী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস) ঢাকা-এর ৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সভাপত্বি করেন আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী।
দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস) ঢাকা-এর ৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান অতিথি কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক ভাষণে বলেন “মানুষ মানুষের জন্য” কতোটা বাস্তাবতা সমৃদ্ধ এবং সমকালীন তা যারা সমাজের দিকে একটু চোখ কান খোলা রেখে খেয়াল করেন তাঁদের বুঝতে মোটেই সমস্যা হবে না। আসলেই মানুষের প্রয়োজনে মানুষই তো এগিয়ে আসবে।
আর এইজন্যই তো সে মানুষ। এইজন্যই সে সৃষ্টি সেরা। মানুষের পাশে মানুষ ছিলো বলেই যুগ যুগ ধরে এই পৃথিবী এতো সুন্দরভাবে টিকে আছে। কিন্তু ইদানীং কোনো যেনো মনে হয় আমরা মানুষরা আমাদের মনুষ্যত্ব থেকে ক্রমেই যেনো দূরে সরে আসছি। ফলে আজ আমাদের সমাজে যতো সময় যাচ্ছে ততোই সহিংসতা বাড়ছে। আজ মানুষের জন্য মানুষের মন খুব কম কাঁদে। একটি সুন্দর সমাজের জন্য এই অবস্থা খুবই শোচনীয়। তবে এটাও ঠিক মানুষ চাইলেই নিজেকে বদলাতে পারে, চাইলেই সে তাঁর আশাপাশ সুন্দর করতে পারে, চাইলেই অসুন্দরকে দমিয়ে দিতে পারে।
পৃথিবীতে সব মানুষ বা সব আমার হাওর অঞ্চলের মানুষ সমান সুযোগ সুবিধা পায় না। কারো কাছে সুবিধা বেশি কারো কাছে সুবিধা কম। তবে সবাই যদি সবার প্রয়োজনে এগিয়ে আসে তাহলে এই সমাজে একটি সুন্দর ভারসাম্য তৈরী হবে হাওরের মাটিতে। আর এরফলেই সমাজ সুন্দর সমাজের জন্য আমাদেরই এই মানুষদেরই এগিয়ে আসতে হবে। সবকিছু আমাদের ডাঃ শাহীন ভাই।
ডাঃ শাহীন রেজা চৌধুরী বক্তব্যের শুরুতেই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে শহাদাত বরণকারী হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এএফএম আলীম চৌধুরী, ডা. রেফাত উল্লাহকে। আরো শ্রদ্ধা নিবেদন জানান মানুষের চোখের আলো জ্বালিয়ে রাখতে যারা সংগ্রাম করেছেন তাঁদের সবাইকে।
বাংলাদেশের মোট (৭ লক্ষ) অন্ধত্বের ৮০ ভাগ-ই ছানিজনিত কারণে। বাংলাদেশে এর পরিমাণ প্রায় ৬ লক্ষ। বেশির ভাগেরই বয়স ৬০ বা তাঁর ও বেশি। বয়সের কারণে তারা প্রায় কর্মক্ষম। তার উপর ছানিজনিত অন্ধত্ব মরার উপর খাড়ার ঘা জাগে। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের হাওরের মত দুর্গম এলাকা যেখানে যোগাযোগের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই, তিন মাস নৌকা দিয়ে চলাচল বাকি বৎসরের সময়টুকু পায়ে হেটে চলাফেরা করতে হয়।
ঐহাওর অঞ্চল এলাকায় আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। এইসব এলাকার ছানি রোগীদেরকে অন্ধত্ব থেকে মুক্তি দিতে (ডাস) ২০১২ থেকে এই পর্যন্ত ২২ই বার চক্ষু শিবির করেছে। এই চক্ষুশিবির রোগী দেখা হয় ২৪৮৮০ জন, ছনি অপারেশন করা হয় ৩৪৯৪ জন, নালি ও অন্যান্য অপারেশন করা হয় ১০২ জন। এসব অপারেশন করা হয় আগারগাঁ লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল ও নরসিংদি লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে।
এর আর্থিক খরচ বহন করে ডাস, লায়ন্স ক্লাব অব ইম্পেরিয়াল ও লায়ন্স ক্লাব অব সিটি জাহাঙ্গীর। এসব চক্ষুশিবির উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলার চেয়ারম্যানবৃন্দ, অধ্যক্ষ আব্দুল হক (নূরু) ঢাকাস্থ কিশোরগঞ্জ সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবসহ ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উন্নয়ন ও কল্যাণ নেতৃবৃন্দ।
দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস) ঢাকা বছরে ৫/৬টা চক্ষু শিবির করে। বিভিন্ন করণে এতে অনেক উপস্থিত থাকতে পারেনা। তারা যাতে আমাদের সেবাসমুহ পেতে পারে সেজন্য এ সাপ্তাহিক চক্ষুসেবা কার্যক্রম। ৬ ডিসেম্বর ২০১৩ আনোয়ার হোসেন ফ্রি-ফ্রাইডে চক্ষু বহির্বিভাগ চালার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৩৪৮ জন রোগী দেখা হয় এবং ২৯৩ জনের অপারেশন করা হয়। ডা. রেফাত উল্লাহ ও ভিশন আই হসপিটালে যার বেশিরভাগ ফ্রি এখানে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সহায়তা করেছে সাঈদ আহমেদ ফাউন্ডেশন থেকে।
তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস) প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস সদস্যদের চাঁদা, অনুদান, দাতাদের অনুদান ও সরকারি অনুদান যা আমাদের কার্যক্রমে ব্যয়িত হয়। আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করে মালেক সিদ্দিকী ওয়ালী এন্ড কোং।
দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস) ঢাকা ২০১৩ সাল থেকে শুরু করেছে দৃষ্টি দাতা সম্মাননা। ডাস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যারা এক কালিন অনুদান প্রদান করেন তাঁদের মধ্য থেকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয় ২০১৩ তে ৪ জন, ২০১৪ সালে ৩ জন এবং বছর ৭ জনকে মনোনিত করা হয়। ২০১৪ সালে দৃষ্টি গুনীজন সম্মাননা চালু হয়। ২০১৪ সালে গুনীজন সম্মাননা প্রদান করা হয় অধ্যাপক শাহ মো. বুলবুল ইসলাম এবং বিশ্বখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্যারারাজ সেগারামকে।
২০১৫-২০১৮ সালের গুনীজন সম্মাননার জন্য মনোনীত করা হয় অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন, অধ্যাপক শারফদ্দিন আহমেদ, ডা. উদ্ধব মল্লিক ও ডা. মমিনুল ইসলাম (বাঁধন)-কে। দৃষ্টি পরিবারে কৃতি ছত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা দেয়া শুরু হয় ২০১৪ সাল হতে। প্রথম বার তিনজন কৃতি ছাত্র ছাত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ২০১৮ সালে ৮ জন ছাত্র-ছাত্রীকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। সংবর্ধনার পাশাপাশি ডাস মেডিকেল বৃত্তিও চালু করেছে। এবার শেখ হাসিনা মেডিকেল হবিগঞ্জকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে সুনামগঞ্জের কৃতি ছাত্র মোঃ জাহিদ হাসানকে।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ডাস বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডশন পুরষ্কার ২০১৩, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অ্যাওয়ার্ড ২০১৪, শেষ-ই-বাংলা একে ফজলুল হক পুরষ্কার ২০১৫ এবং সমাসেবা অধিদফতর পুরষ্কার ২০১৫ ও ২০১৭ অর্জন করেছেন। ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন উন্নয়ন ও কল্যাণ সমিতির সদস্যদের, হারুন আই ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ ভিশন আই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রেফাত উল্লাহ চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মালেক সিদ্দিক ওয়ালী ওডিট ফার্ম, লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা ইম্পেরিয়াল, লায়ন্স ক্লাব সিটি জাহাঙ্গীর, হাওর এলাকার সব অধিবাসি, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিশেষ কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব স্বর্গীয় রঞ্জিত বিশ্বাস, বর্তমান সচিব নাসিমা বেগম, ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সদস্যবৃন্দ, ইউসিডি-৫ (আজিমপুর) এর প্রাক্তন সমাজসেবা কর্মকর্তা জুবলি বেগম, হালিমা খাতুন ও মিজানুর রহমানসহ কর্মকর্তা কর্মচারীর প্রতি।