ঢাকা ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেখানে গরুর দুধের চেয়েও গোমূত্রের দাম বেশি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮
  • ৩৬০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতের রাজস্থান রাজ্যের গরু চাষিরা বলছেন, গরুর দুধের চেয়েও গরুর মূত্র বিক্রি তাদের জন্য বেশি লাভজনক। তাদের অনেকে গোমূত্র বিক্রি করছেন গরুর দুধের থেকেও বেশি দামে। অনেকে আবার যে গোমূত্র বিক্রি করছেন, তার দাম গরুর দুধের প্রায় কাছাকাছি। কৃষকরা বলছেন, গরুর দুধের দাম যেখানে লিটার প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা, সেখানে এক লিটার গোমূত্র কেউ বিক্রি করছেন ১৫ থেকে ৩০ টাকায়। কেউবা আবার দাম নিচ্ছেন ৫০ টাকাও। তবে গরুর দুধ দোয়ানোর থেকে গোমূত্র সংগ্রহ করা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য কাজ বলে জানান তারা।

কৃষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা রাত জেগে বসে থাকতে হয় গোমূত্র সংগ্রহ করার জন্য। তবে যে বাড়তি রোজগার হচ্ছে গোমূত্র বিক্রি করে, তার জন্য ওইটুকু কষ্ট সহ্য করতেও রাজি রাজস্থানের গরুচাষিরা।

তবে দেশি প্রজাতির গরু, যেমন গির বা থারপার্কার গরুর মূত্রের চাহিদা বেশ বেশি। অন্যদিকে জার্সি গরুর মূত্র তুলনায় কম বিক্রি হয়।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, গোমূত্র থেকে তৈরি জৈব সার যেমন চাষের জন্য প্রয়োজনীয়, তেমনই গোমূত্রের মধ্যে যেসব উপকারী রাসায়নিক রয়েছে, যা ঔষধি হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও হিন্দুদের পূজা-অর্চনার জন্যও গোমূত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

রাজস্থানের মহারানা প্রতাপ কৃষি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় গোমূত্র নিয়ে বড় আকারে গবেষণা চালাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ইউ এস শর্মা বলেছেন, গোমূত্র থেকে অনেক গো-পালক বাড়তি রোজগার করতে শুরু করেছেন। গোমূত্র সংগ্রহ করার জন্য বেশ কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীও তৈরি হয়েছে।

‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা আর জৈব চাষের ক্ষেতে দেওয়ার জন্যও বেশ কয়েক শ লিটার গোমূত্র প্রয়োজন হয় প্রতি মাসে। তবে এখনও গোটা ব্যবস্থাটাই অসংগঠিত অবস্থায় চলছে’ বলেন তিনি।

কেন গোমূত্রের চাহিদা বাড়ছে?

আঞ্চলিক গবেষণা-পরিচালক শান্তি কুমার শর্মা বলেছেন, ‘গোমূত্রের মধ্যে ৯৫ শতাংশ জল থাকলেও বাকি অংশের মধ্যে আড়াই শতাংশ ইউরিয়া আর অন্য আড়াই শতাংশের মধ্যে হরমোন, এনজাইম, অ্যাস্ট্রোজেন, ল্যাক্টোজসহ প্রায় ১৪-১৫ রকমের রাসায়নিক থাকে। গোমূত্রের মধ্যে গোবর আর গুড় মিশিয়ে গাঁজানো হয়, তারপর সেটি কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়।’

কৃষিবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, দেশে জৈব চাষের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোমূত্রের চাহিদাও বাড়ছে। বিশেষত রাজস্থানে বাড়ছে জৈব-চাষের এলাকা। আর জৈব-ফসলের জন্য যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, সেখানে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় কী ধরনের সার ব্যবহার করা হয়েছে ওই ফসল ফলাতে।

রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হলে সেই ফসলকে ‘জৈব’ বলে আখ্যা দেওয়া হয় না। তাই সরাসরি গোমূত্র অথবা তার থেকে তৈরি সার জৈব চাষের জন্য অপরিহার্য।

কৃষি গবেষক শান্তি কুমার শর্মা বলেন, ‘জৈব ফসলের চাহিদা শহরাঞ্চলের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে বাড়ছে। তাই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গোমূত্রের চাহিদাও।’

‘অনেক ব্যবসায়ী গোমূত্রকে নানাভাবে বাজারজাত করছেন। গরুচাষিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলে গোমূত্রের যোগানও বাড়বে। তারাও গরু পালন করে বেশি রোজগার করতে পারবেন,’ বলেন তিনি।

জৈব চাষ ছাড়াও হিন্দুদের পূজা-অর্চনার জন্যও গোমূত্র মেশানো একটি উপাচারের প্রয়োজন হয় যার নাম পঞ্চগব্য।

বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, গোমূত্রের ঔষধিগুণও রয়েছে। নানা রোগ নিরাময়ে গোমূত্র থেকে আরোহিত উপাদান কাজ করে বলে দাবি তাদের। যদিও এ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যেখানে গরুর দুধের চেয়েও গোমূত্রের দাম বেশি

আপডেট টাইম : ০৬:৫৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতের রাজস্থান রাজ্যের গরু চাষিরা বলছেন, গরুর দুধের চেয়েও গরুর মূত্র বিক্রি তাদের জন্য বেশি লাভজনক। তাদের অনেকে গোমূত্র বিক্রি করছেন গরুর দুধের থেকেও বেশি দামে। অনেকে আবার যে গোমূত্র বিক্রি করছেন, তার দাম গরুর দুধের প্রায় কাছাকাছি। কৃষকরা বলছেন, গরুর দুধের দাম যেখানে লিটার প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা, সেখানে এক লিটার গোমূত্র কেউ বিক্রি করছেন ১৫ থেকে ৩০ টাকায়। কেউবা আবার দাম নিচ্ছেন ৫০ টাকাও। তবে গরুর দুধ দোয়ানোর থেকে গোমূত্র সংগ্রহ করা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য কাজ বলে জানান তারা।

কৃষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা রাত জেগে বসে থাকতে হয় গোমূত্র সংগ্রহ করার জন্য। তবে যে বাড়তি রোজগার হচ্ছে গোমূত্র বিক্রি করে, তার জন্য ওইটুকু কষ্ট সহ্য করতেও রাজি রাজস্থানের গরুচাষিরা।

তবে দেশি প্রজাতির গরু, যেমন গির বা থারপার্কার গরুর মূত্রের চাহিদা বেশ বেশি। অন্যদিকে জার্সি গরুর মূত্র তুলনায় কম বিক্রি হয়।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, গোমূত্র থেকে তৈরি জৈব সার যেমন চাষের জন্য প্রয়োজনীয়, তেমনই গোমূত্রের মধ্যে যেসব উপকারী রাসায়নিক রয়েছে, যা ঔষধি হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও হিন্দুদের পূজা-অর্চনার জন্যও গোমূত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

রাজস্থানের মহারানা প্রতাপ কৃষি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় গোমূত্র নিয়ে বড় আকারে গবেষণা চালাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ইউ এস শর্মা বলেছেন, গোমূত্র থেকে অনেক গো-পালক বাড়তি রোজগার করতে শুরু করেছেন। গোমূত্র সংগ্রহ করার জন্য বেশ কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীও তৈরি হয়েছে।

‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা আর জৈব চাষের ক্ষেতে দেওয়ার জন্যও বেশ কয়েক শ লিটার গোমূত্র প্রয়োজন হয় প্রতি মাসে। তবে এখনও গোটা ব্যবস্থাটাই অসংগঠিত অবস্থায় চলছে’ বলেন তিনি।

কেন গোমূত্রের চাহিদা বাড়ছে?

আঞ্চলিক গবেষণা-পরিচালক শান্তি কুমার শর্মা বলেছেন, ‘গোমূত্রের মধ্যে ৯৫ শতাংশ জল থাকলেও বাকি অংশের মধ্যে আড়াই শতাংশ ইউরিয়া আর অন্য আড়াই শতাংশের মধ্যে হরমোন, এনজাইম, অ্যাস্ট্রোজেন, ল্যাক্টোজসহ প্রায় ১৪-১৫ রকমের রাসায়নিক থাকে। গোমূত্রের মধ্যে গোবর আর গুড় মিশিয়ে গাঁজানো হয়, তারপর সেটি কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়।’

কৃষিবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, দেশে জৈব চাষের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোমূত্রের চাহিদাও বাড়ছে। বিশেষত রাজস্থানে বাড়ছে জৈব-চাষের এলাকা। আর জৈব-ফসলের জন্য যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, সেখানে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় কী ধরনের সার ব্যবহার করা হয়েছে ওই ফসল ফলাতে।

রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হলে সেই ফসলকে ‘জৈব’ বলে আখ্যা দেওয়া হয় না। তাই সরাসরি গোমূত্র অথবা তার থেকে তৈরি সার জৈব চাষের জন্য অপরিহার্য।

কৃষি গবেষক শান্তি কুমার শর্মা বলেন, ‘জৈব ফসলের চাহিদা শহরাঞ্চলের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে বাড়ছে। তাই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গোমূত্রের চাহিদাও।’

‘অনেক ব্যবসায়ী গোমূত্রকে নানাভাবে বাজারজাত করছেন। গরুচাষিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলে গোমূত্রের যোগানও বাড়বে। তারাও গরু পালন করে বেশি রোজগার করতে পারবেন,’ বলেন তিনি।

জৈব চাষ ছাড়াও হিন্দুদের পূজা-অর্চনার জন্যও গোমূত্র মেশানো একটি উপাচারের প্রয়োজন হয় যার নাম পঞ্চগব্য।

বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, গোমূত্রের ঔষধিগুণও রয়েছে। নানা রোগ নিরাময়ে গোমূত্র থেকে আরোহিত উপাদান কাজ করে বলে দাবি তাদের। যদিও এ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।