ঢাকা ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাল বিল ঝিলের জলে আগের মতো দেখা যায়না জাতীয় ফুল শাপলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮
  • ১০৭৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’ এই গানের মতো কি হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার কদর? খাল বিল ঝিলের জলে আগের মতো ভাসেনা আমাদের দেশাত্মবোধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জাতীয় ফুল শাপলা। নানা রং ও বর্ণের শাপলা ফুলে শোভিত হোত আমাদের খাল বিল আর ঝিলের বুক। কি আবেদন আর কদরই না ছিল, তা এখন প্রায় ম্লান হতে চলেছে, প্রকৃতির এই স্বাদ এখন আর পাওয়া যায়না বললেই চলে।

প্রকৃতিতে দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অনেককে মতিঝিলের মতো দেশের কয়েকটি চত্বরের কংক্রিটের তৈরী এবং বাংলাদেশের মুদ্রা, টাকা আর বিভিন্ন পদকের প্রতিকি শাপলা দেখেই স্বাদ মেটাতে হয়। বেহাল এই দশার কারণে অনেক দিন হয়েছে দেশের কোনো কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার আর গল্পকার শাপলা নিয়ে রচনা করেনা কবিতা, গল্প, নাটক ও কবিতা। শুধু ভূবন ভোলানো রুপই নয় দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জাতীয় ফুল শাপলা এবং শাপলা-শালুকের রয়েছে মূল্যবান ভেষজ ও পুষ্টিগুণ। বলতে গেলে আবাহমান এই বাংলার বর্ষাকালের একমাত্র সবজি হিসেবে ব্যবহৃত এই শাপলার প্রতি আজও দেশের মানুষের সমান আকুতি রয়েছে।

Related image

ব্যাপক চাহিদা থাকলেও দেশের হাট বাজার আর গঞ্জে আমাদের প্রিয় সেই শাপলা তেমন একটা দেখা যায়না। আধুনিকায়ন ও দেশের ক্রমবর্ধমান মানুষের পেটের জ্বালা নিবারণের বোরো ধান উৎপাদনের জন্যই শাপলাকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে জায়গা। তাই শাপলা প্রজননের অবরিত সেই প্রান্ত এখন আর নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং এর উপ পরিচালক(ফুল ও ফল) কৃষিবিদ এ কে এম মনিরুল আলম বলেন, অনেক গুণে গুনান্বিত আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা ভূমিক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া মাছের অভয়ারন্য গড়ে তোলা ও মাছের খাদ্য সৃষ্টিতে সৃষ্টিতে সহায়তা করে থাকে শাপলা। এটি দেশি মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন রং এর শাপলা ফুল শুধু মানুষকে বিমোহিতই নয় উপকারি বা ফসলের বন্ধু পোকার আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

শাপলার মুথা বা ঢ্যাপের খই অত্যন্ত উপাদেয়, দেশের মানুষের কাছে এটির প্রচুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি শাপলার ডাটা বা কান্ডে রয়েছে ভেষজগুণ। কোষ্টকাঠিন্য, শরীরের ব্যাথা-বেদনা ও পাতলা পায়খানা এবং উদারাময়(ডায়রিয়া)সহ নানা রোগ উপশমে শাপলা ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও দেশে শাপলা উৎপাদন যে কমেছে এ কথা ঠিক। বানিজ্যিকভাবে নয় প্রাকৃতিকভাবেই দেশে শাপলা উৎপাদন হয়ে থাকে। শাপলা উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি কোনো চিন্তা বা উদ্যোগের কথা শুনিনি, এ যাবত কোনো গবেষণা এবং প্রকল্পও নেয়া হয়নি। তবে সরকার এটিকে জাতীয় ফুল হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শাপলার নামে অনেক পদক ও ব্যাজও চালু করা হয়েছে।

Image result for জাতীয় ফুল শাপলা ছবি

কৃষিবিদরা জানান, নগরায়ণ এবং আধুনকায়নসহ আধুনিক কৃষি ও বোরো ধানের চাষ শাপলাকে ক্রমাগত দূরে ঠেলে দিয়েছে। এধারা অব্যাহত থাকলে সেদিন বেশি দুরে নয় যেদিন প্রকৃতির জীবন্ত নয়, মতিঝিলের মতো শাপলা চত্বর আর ব্যজ পদকের প্রতিকি শাপলা দেখেই মনের ক্ষধা মিটাতে হবে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের সাউন্ড ষ্টুডিও অফিসার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘যে দেশেতে শাপলা শালকু ঝিলের জলে ভাসে’ এবং ‘আল্লাদি তার ঢ্যাপের খই’ ইত্যাদিসহ এক সময়ের অনেক জনপ্রিয় গান আজ বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। এ প্রজন্মতো দুরের কথা অনেকেরই এখন আর মনে পড়ে না শাপলার কথা। অথচ শাপলা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

খাল বিল ঝিলের জলে আগের মতো দেখা যায়না জাতীয় ফুল শাপলা

আপডেট টাইম : ১১:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’ এই গানের মতো কি হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার কদর? খাল বিল ঝিলের জলে আগের মতো ভাসেনা আমাদের দেশাত্মবোধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জাতীয় ফুল শাপলা। নানা রং ও বর্ণের শাপলা ফুলে শোভিত হোত আমাদের খাল বিল আর ঝিলের বুক। কি আবেদন আর কদরই না ছিল, তা এখন প্রায় ম্লান হতে চলেছে, প্রকৃতির এই স্বাদ এখন আর পাওয়া যায়না বললেই চলে।

প্রকৃতিতে দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অনেককে মতিঝিলের মতো দেশের কয়েকটি চত্বরের কংক্রিটের তৈরী এবং বাংলাদেশের মুদ্রা, টাকা আর বিভিন্ন পদকের প্রতিকি শাপলা দেখেই স্বাদ মেটাতে হয়। বেহাল এই দশার কারণে অনেক দিন হয়েছে দেশের কোনো কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার আর গল্পকার শাপলা নিয়ে রচনা করেনা কবিতা, গল্প, নাটক ও কবিতা। শুধু ভূবন ভোলানো রুপই নয় দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জাতীয় ফুল শাপলা এবং শাপলা-শালুকের রয়েছে মূল্যবান ভেষজ ও পুষ্টিগুণ। বলতে গেলে আবাহমান এই বাংলার বর্ষাকালের একমাত্র সবজি হিসেবে ব্যবহৃত এই শাপলার প্রতি আজও দেশের মানুষের সমান আকুতি রয়েছে।

Related image

ব্যাপক চাহিদা থাকলেও দেশের হাট বাজার আর গঞ্জে আমাদের প্রিয় সেই শাপলা তেমন একটা দেখা যায়না। আধুনিকায়ন ও দেশের ক্রমবর্ধমান মানুষের পেটের জ্বালা নিবারণের বোরো ধান উৎপাদনের জন্যই শাপলাকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে জায়গা। তাই শাপলা প্রজননের অবরিত সেই প্রান্ত এখন আর নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং এর উপ পরিচালক(ফুল ও ফল) কৃষিবিদ এ কে এম মনিরুল আলম বলেন, অনেক গুণে গুনান্বিত আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা ভূমিক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া মাছের অভয়ারন্য গড়ে তোলা ও মাছের খাদ্য সৃষ্টিতে সৃষ্টিতে সহায়তা করে থাকে শাপলা। এটি দেশি মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন রং এর শাপলা ফুল শুধু মানুষকে বিমোহিতই নয় উপকারি বা ফসলের বন্ধু পোকার আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

শাপলার মুথা বা ঢ্যাপের খই অত্যন্ত উপাদেয়, দেশের মানুষের কাছে এটির প্রচুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি শাপলার ডাটা বা কান্ডে রয়েছে ভেষজগুণ। কোষ্টকাঠিন্য, শরীরের ব্যাথা-বেদনা ও পাতলা পায়খানা এবং উদারাময়(ডায়রিয়া)সহ নানা রোগ উপশমে শাপলা ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও দেশে শাপলা উৎপাদন যে কমেছে এ কথা ঠিক। বানিজ্যিকভাবে নয় প্রাকৃতিকভাবেই দেশে শাপলা উৎপাদন হয়ে থাকে। শাপলা উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি কোনো চিন্তা বা উদ্যোগের কথা শুনিনি, এ যাবত কোনো গবেষণা এবং প্রকল্পও নেয়া হয়নি। তবে সরকার এটিকে জাতীয় ফুল হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শাপলার নামে অনেক পদক ও ব্যাজও চালু করা হয়েছে।

Image result for জাতীয় ফুল শাপলা ছবি

কৃষিবিদরা জানান, নগরায়ণ এবং আধুনকায়নসহ আধুনিক কৃষি ও বোরো ধানের চাষ শাপলাকে ক্রমাগত দূরে ঠেলে দিয়েছে। এধারা অব্যাহত থাকলে সেদিন বেশি দুরে নয় যেদিন প্রকৃতির জীবন্ত নয়, মতিঝিলের মতো শাপলা চত্বর আর ব্যজ পদকের প্রতিকি শাপলা দেখেই মনের ক্ষধা মিটাতে হবে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের সাউন্ড ষ্টুডিও অফিসার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘যে দেশেতে শাপলা শালকু ঝিলের জলে ভাসে’ এবং ‘আল্লাদি তার ঢ্যাপের খই’ ইত্যাদিসহ এক সময়ের অনেক জনপ্রিয় গান আজ বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। এ প্রজন্মতো দুরের কথা অনেকেরই এখন আর মনে পড়ে না শাপলার কথা। অথচ শাপলা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।