ঢাকা ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:২১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর ২০১৫
  • ৩২০ বার

এই শহরেই বাস করেন দুই পুত্রের জনক জসিম মিয়া। সন্তান থাকার পরেও নিঃসঙ্গ দিন কাটে তার। এ নিয়ে কষ্ট থাকলেও হতাশ নন তিনি। তাইতো ষাট বছর বয়সেও তিন চাকার রিকশাকে করে নিয়েছেন নিজের সঙ্গী। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে পা চালান রিকশা’র প্যাডেলে। সারাজীবন সংসারের বোঝা টেনেছেন। জীবন সায়াহ্নে এসেও নেই এতটুকু বিশ্র্রামের সুযোগ!

এ তো গেল সমাজের নিম্নবিত্তের এক অসহায় প্রবীণের জীবনচিত্র। সমাজের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে জন্ম নিয়েও এমন অসহায় লোক কম নন। যারা শেষ বয়সে এসে হয়ে পড়েন কেবল সংসারের বোঝা। এমনই এক প্রবীণের সাক্ষাত মেলে নগরীর ইস্কাটন আবাসিক এলাকায়। রোজ সকালে যিনি রমনায় আসেন প্রাতঃভ্রমণে। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, ছেলে এবং ছেলে বউয়ের সঙ্গে অভিজাত আবাসিক এলাকাতেই থাকেন তিনি। দুবেলা অন্নও পান। কিন্তু সুখ নেই এতটুকু। ছেলে বউয়ের বাঁকা কটূক্তি ছাড়াও একমাত্র সন্তানের নানা ভর্ৎসনা জীবনকে যেন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু নিরুপায় তিনি। একসময় এলাকায় নিজের প্রচণ্ড প্রতাপ আর অর্জিত সম্মান খোয়ানোর ভয়ে চাপা ক্ষোভ থাকলেও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

শহরে এরকম অগণিত বৃদ্ধের চাপা কান্না রয়েছে। শহরের অনেক প্রবীণেরেই ঠাঁই হয়েছে প্রবীণ নিবাসে। নচিকেতার গানের সেই লাইনগুলোই যেনো সত্যি হচ্ছে। এ নিয়ে নেই কারো কোন মাথাব্যথাও। যেন সবাই ভুলে গেছে, অপ্রত্যাশিত সেই যাতনার মুখোমুখি হবো আমরাও একদিন। কারো যেন মনেই নেই- বৃদ্ধের অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের শক্তি, দুটিরই প্রয়োজন বিশ্ব পরিবর্তনে।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ১ অক্টোবর সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস’। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নগর পরিবেশে প্রবীণদের অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিত করুন’। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৪৫/১০৬ নম্বর প্রস্তাবে ১ অক্টোবর দিনটি প্রবীণদের জন্য পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাবিশ্বে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। বাংলাদেশে পরিবারের বয়স্কদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতি বছর বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করেন এ দিবস।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭% প্রবীণ। ২০২৬ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ শতাংশে। বাংলাদেশের প্রবীণদের ৭৮% বিধবা। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৫ সালে সারা বিশ্বে প্রবীণের সংখ্যা ছিল ৩৫ কোটি। ২০০০ সালে এটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬০ কোটিতে। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ৭০ কোটিরও বেশি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম

আপডেট টাইম : ০৭:২১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর ২০১৫

এই শহরেই বাস করেন দুই পুত্রের জনক জসিম মিয়া। সন্তান থাকার পরেও নিঃসঙ্গ দিন কাটে তার। এ নিয়ে কষ্ট থাকলেও হতাশ নন তিনি। তাইতো ষাট বছর বয়সেও তিন চাকার রিকশাকে করে নিয়েছেন নিজের সঙ্গী। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে পা চালান রিকশা’র প্যাডেলে। সারাজীবন সংসারের বোঝা টেনেছেন। জীবন সায়াহ্নে এসেও নেই এতটুকু বিশ্র্রামের সুযোগ!

এ তো গেল সমাজের নিম্নবিত্তের এক অসহায় প্রবীণের জীবনচিত্র। সমাজের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে জন্ম নিয়েও এমন অসহায় লোক কম নন। যারা শেষ বয়সে এসে হয়ে পড়েন কেবল সংসারের বোঝা। এমনই এক প্রবীণের সাক্ষাত মেলে নগরীর ইস্কাটন আবাসিক এলাকায়। রোজ সকালে যিনি রমনায় আসেন প্রাতঃভ্রমণে। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, ছেলে এবং ছেলে বউয়ের সঙ্গে অভিজাত আবাসিক এলাকাতেই থাকেন তিনি। দুবেলা অন্নও পান। কিন্তু সুখ নেই এতটুকু। ছেলে বউয়ের বাঁকা কটূক্তি ছাড়াও একমাত্র সন্তানের নানা ভর্ৎসনা জীবনকে যেন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কিন্তু নিরুপায় তিনি। একসময় এলাকায় নিজের প্রচণ্ড প্রতাপ আর অর্জিত সম্মান খোয়ানোর ভয়ে চাপা ক্ষোভ থাকলেও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

শহরে এরকম অগণিত বৃদ্ধের চাপা কান্না রয়েছে। শহরের অনেক প্রবীণেরেই ঠাঁই হয়েছে প্রবীণ নিবাসে। নচিকেতার গানের সেই লাইনগুলোই যেনো সত্যি হচ্ছে। এ নিয়ে নেই কারো কোন মাথাব্যথাও। যেন সবাই ভুলে গেছে, অপ্রত্যাশিত সেই যাতনার মুখোমুখি হবো আমরাও একদিন। কারো যেন মনেই নেই- বৃদ্ধের অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের শক্তি, দুটিরই প্রয়োজন বিশ্ব পরিবর্তনে।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ১ অক্টোবর সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস’। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নগর পরিবেশে প্রবীণদের অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিত করুন’। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৪৫/১০৬ নম্বর প্রস্তাবে ১ অক্টোবর দিনটি প্রবীণদের জন্য পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাবিশ্বে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। বাংলাদেশে পরিবারের বয়স্কদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতি বছর বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করেন এ দিবস।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭% প্রবীণ। ২০২৬ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ শতাংশে। বাংলাদেশের প্রবীণদের ৭৮% বিধবা। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৫ সালে সারা বিশ্বে প্রবীণের সংখ্যা ছিল ৩৫ কোটি। ২০০০ সালে এটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬০ কোটিতে। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ৭০ কোটিরও বেশি।