ঢাকা ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বজুড়ে গৃহকর্মীদের অধিকার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুলাই ২০১৮
  • ৩০৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গৃহকর্মকে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশেই অন্যান্য কাজের সমান মর্যাদা দেয়া হয় না। গৃহকর্মী শব্দটি বই-পুস্তকের ক্ষেত্রে, একটু ভদ্রভাবে বলার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত এতখানি সম্মান গৃহকর্মীদের ভাগ্যে জোটে না। এছাড়া তাদের কর্মঘণ্টা, জীবনযাত্রার মান, বেতনও নির্ধারণ হয় না সঠিকভাবে। পাশাপাশি এই পেশায় নিয়োজিতদের অধিকার রক্ষায় নেই সরকারি কোনো উদ্যোগও৷ এছাড়া বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী আমাদের বাংলাদেশে পরিবারের মধ্যে কাজ করেন কিন্তু কোনো মজুরি পান না এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ।

বাংলাদেশ

পশ্চিমা বিশ্ব এখন ঘরের কাজে রোবট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে৷ এই নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা৷ তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেদেশে ঘরের কাজের জন্য অধিকাংশ বাড়িতে রয়েছেন গৃহকর্মী৷ যাঁদের মাসিক গড় বেতন ৫১০ টাকা৷ আর দিনে কাজ করতে হয় কমপক্ষে দশ ঘণ্টা৷

ভারত

ভারতে গৃহকর্মীদের অনেক ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ বিভিন্ন দরিদ্র অঞ্চল ও পরিবার থেকে আসায় শ্রমবাজার সম্পর্কেও তাঁদের ধারণা থাকে কম৷ বেতন বৈষম্য, জীবনযাত্রার নিকৃষ্ট মান, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার অভাব ছাড়াও সহিংসতা, যৌন হয়রানি এমনকি মানবপাচারকারীদের শিকারও হতে হয় গৃহকর্মীদের৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৭ দিনই ১৫ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয় তাঁদের৷

পাকিস্তান

পাকিস্তানে অনেক ক্ষেত্রে গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়া হয় না৷ কিন্তু পাঞ্জাব সরকার একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে ২০১৪ সালে চালু করেছে গৃহকর্মী ইউনিয়ন৷ শুরুতে এতে মাত্র ২৩৫ জন সদস্য থাকলেও ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ তবে দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে, বা রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনও তা চালু হয়নি৷

চীন

১৯৭৮ সাল থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করার পর থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চীনের নারীরা৷ প্রাইভেটাইজেশনের ফলে অনেক নারীর চাকরি চলে গেছে, কমেছে কর্মক্ষেত্রে পাওয়া সুযোগ-সুবিধার হারও৷ নারীদের বেকারত্বের হার কমাতে সরকারি উদ্যোগে গৃহকর্মীদের উৎসাহী করা হয়৷ বর্তমানে দেশটির ৮৫ শতাংশ গৃহকর্মী নারী৷ কিন্তু তাঁদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার তো হতে হয়ই, সামাজিকভাবেও গৃহকর্মীদের দেখা হয় বাজে চোখে৷

সৌদি আরব

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই গৃহশ্রমিক আসেন এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো থেকে৷ স্বেচ্ছায় কাজ পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় এবং নিয়মিত সরকারি নজরদারি না থাকায়, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় ব্যাপকভাবে৷ ব্র্যাকের হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ ফেরত এসেছেন প্রায় ১০০০ নারী গৃহকর্মী৷

তানজানিয়া

তানজানিয়ায় গৃহকর্মীদের রক্ষায় বিশেষ কোনো আইন নেই৷ ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য যে আইন, সেটি তাঁদের জন্যও প্রযোজ্য৷ অল্পবয়সি নারীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেশটিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন৷ তাদের বেতনও সর্বনিম্ন বেতনের চেয়ে কম৷ আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকলেও সেটি বেশিরভাগ গৃহকর্মীই জানেন না৷

ফিলিপাইন্স

২০১০ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ফিলিপাইন্সে ১৯ লাখ গৃহকর্মীর বয়সই ১৫ বছর বা তার চেয়েও কম৷ এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী৷ বেশিরভাগই অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে৷ কর্মক্ষেত্রেই তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ ২০১৩ সালে ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স অ্যাক্ট পাস করা হলেও অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিশ্বজুড়ে গৃহকর্মীদের অধিকার

আপডেট টাইম : ১১:১৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গৃহকর্মকে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশেই অন্যান্য কাজের সমান মর্যাদা দেয়া হয় না। গৃহকর্মী শব্দটি বই-পুস্তকের ক্ষেত্রে, একটু ভদ্রভাবে বলার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত এতখানি সম্মান গৃহকর্মীদের ভাগ্যে জোটে না। এছাড়া তাদের কর্মঘণ্টা, জীবনযাত্রার মান, বেতনও নির্ধারণ হয় না সঠিকভাবে। পাশাপাশি এই পেশায় নিয়োজিতদের অধিকার রক্ষায় নেই সরকারি কোনো উদ্যোগও৷ এছাড়া বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী আমাদের বাংলাদেশে পরিবারের মধ্যে কাজ করেন কিন্তু কোনো মজুরি পান না এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ।

বাংলাদেশ

পশ্চিমা বিশ্ব এখন ঘরের কাজে রোবট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে৷ এই নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা৷ তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেদেশে ঘরের কাজের জন্য অধিকাংশ বাড়িতে রয়েছেন গৃহকর্মী৷ যাঁদের মাসিক গড় বেতন ৫১০ টাকা৷ আর দিনে কাজ করতে হয় কমপক্ষে দশ ঘণ্টা৷

ভারত

ভারতে গৃহকর্মীদের অনেক ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ বিভিন্ন দরিদ্র অঞ্চল ও পরিবার থেকে আসায় শ্রমবাজার সম্পর্কেও তাঁদের ধারণা থাকে কম৷ বেতন বৈষম্য, জীবনযাত্রার নিকৃষ্ট মান, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার অভাব ছাড়াও সহিংসতা, যৌন হয়রানি এমনকি মানবপাচারকারীদের শিকারও হতে হয় গৃহকর্মীদের৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৭ দিনই ১৫ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয় তাঁদের৷

পাকিস্তান

পাকিস্তানে অনেক ক্ষেত্রে গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়া হয় না৷ কিন্তু পাঞ্জাব সরকার একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে ২০১৪ সালে চালু করেছে গৃহকর্মী ইউনিয়ন৷ শুরুতে এতে মাত্র ২৩৫ জন সদস্য থাকলেও ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ তবে দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে, বা রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনও তা চালু হয়নি৷

চীন

১৯৭৮ সাল থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করার পর থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চীনের নারীরা৷ প্রাইভেটাইজেশনের ফলে অনেক নারীর চাকরি চলে গেছে, কমেছে কর্মক্ষেত্রে পাওয়া সুযোগ-সুবিধার হারও৷ নারীদের বেকারত্বের হার কমাতে সরকারি উদ্যোগে গৃহকর্মীদের উৎসাহী করা হয়৷ বর্তমানে দেশটির ৮৫ শতাংশ গৃহকর্মী নারী৷ কিন্তু তাঁদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার তো হতে হয়ই, সামাজিকভাবেও গৃহকর্মীদের দেখা হয় বাজে চোখে৷

সৌদি আরব

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই গৃহশ্রমিক আসেন এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো থেকে৷ স্বেচ্ছায় কাজ পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় এবং নিয়মিত সরকারি নজরদারি না থাকায়, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় ব্যাপকভাবে৷ ব্র্যাকের হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ ফেরত এসেছেন প্রায় ১০০০ নারী গৃহকর্মী৷

তানজানিয়া

তানজানিয়ায় গৃহকর্মীদের রক্ষায় বিশেষ কোনো আইন নেই৷ ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য যে আইন, সেটি তাঁদের জন্যও প্রযোজ্য৷ অল্পবয়সি নারীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেশটিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন৷ তাদের বেতনও সর্বনিম্ন বেতনের চেয়ে কম৷ আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকলেও সেটি বেশিরভাগ গৃহকর্মীই জানেন না৷

ফিলিপাইন্স

২০১০ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ফিলিপাইন্সে ১৯ লাখ গৃহকর্মীর বয়সই ১৫ বছর বা তার চেয়েও কম৷ এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী৷ বেশিরভাগই অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে৷ কর্মক্ষেত্রেই তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ ২০১৩ সালে ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স অ্যাক্ট পাস করা হলেও অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে