হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাতের বাহিরে জঙ্গি হামলার দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিকের পরিবারের সদস্য, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসীরা।
এদিকে দ্রুত চার্জশিট দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পুলিশকে তাগাদা দেয়া হলেও জঙ্গি হামলার দুই বছরেও তদন্ত শেষ করে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার এক বছর পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুর্শেদ জামান অন্যত্র বদলি হওয়ায় মূলত অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে মামলার তদন্ত কার্যক্রম। তবে এ ঘটনার তদন্তে অনেক অগ্রগতি রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমান জানান, মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষের দিকে। অচিরেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই জামাতের বাহিরে চর শোলাকিয়া সবুজবাগ মোড়ে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনে পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের ওপর আচমকা হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত শুরুর মুহুর্তে হঠাৎ করেই জঙ্গিদের গুলি আর বোমায় কেঁপে উঠে ঈদগাহের চারপাশ। নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে আতংক। হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন দুই পুলিশ সদস্য ও এক গৃহবধূ। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন আট পুলিশসহ কয়েকজন নিরীহ মানুষ। ঘটনার সময় পুলিশের গুলিতে এক জঙ্গিও নিহত হয়।
ঘটনার তিন দিন পর ১০ জুলাই পাকুন্দিয়া থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সামছুদ্দিন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আটক করা হয় জঙ্গি শফিউল ও স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম ওরফে তানিমকে।
চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন জেএমবির শীর্ষ নেতা মাস্টারমাইন্ড রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, অনোয়ার হোসেন, সোহেল মাহমুদ ও জাহিদুল হক তানিম।
হামলার একই বছরের ৪ আগস্ট ময়মনসিংহের নান্দাইলে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শফিউল নিহত হন। জঙ্গি হামলার ঘটনায় গত বছরের ১ জুন বৃহস্পতিবার হামলার মূল পরিকল্পনা, অস্ত্র ও জঙ্গি সরবরাহে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. ইকবাল মাহমুদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন জঙ্গি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও ৭ জুলাই গুলশান থেকে ১১৭ কিলোমিটার দূরত্বে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশে একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের এ অভিযানে বহু জঙ্গি মারা গেছে, আটকও হয়েছেন কয়েকজন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত নিয়ে বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ চলছে। এসব কার্যক্রম শেষ হলেই চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হবে।