ঢাকা ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কচুশাকের তরকারি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুন ২০১৮
  • ২৭৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কচুশাক একটি সহজলভ্য সবজি। কচুপাতা ভর্তা ও তরকারি বেশি জনপ্রিয়। ইলিশ, চিংড়ি, ছোট মাছ বা শুঁটকি মাছ দিয়ে কচুশাকের তরকারি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। কচুশাককে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না। তবে আপনি জানেন কি কচুশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। কিন্তু এই কচুশাকই দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে।

কচুশাকের পুষ্টিগুণ

কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদানসমূহ। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে-৬.৮ গ্রাম শর্করা, ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, শূন্য দশমিক ২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), শূন্য দশমিক ২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।

আসুন জেনে নিই কচুশাক কেন খাবেন-

রাতাকানা রোগ

কচুশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উৎস। রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগপ্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কচুশাকে ভিটামিন-এ থাকে, যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।

হিমোগ্লোবিন

কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তারই কচুশাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই চলে।

মুখ ও ত্বকের রোগ

ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি ও সি। তাই মুখ ও ত্বকের রোগপ্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা রাখে।

হৃদরোগ ও স্ট্রোক

কচুশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। তা ছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা কচুশাক খেতে পারেন।

শরীরে ক্ষত

কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তা ছাড়া ভিটামিন-সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচুশাক খাওয়ানো উচিত।

অক্সিজেন সরবরাহ

আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কচুশাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

দাঁত ও হাড়ের গঠন

কচুশাকের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন ও ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচুশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী নারী

কচুশাকে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচুশাক সহজলভ্য, তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী নারীরা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচুশাক খেতে পারেন।

সতর্কতা

কচুশাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ এতে অক্সলেট নামক উপাদান থাকে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কচুশাকের তরকারি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়

আপডেট টাইম : ০৪:২১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কচুশাক একটি সহজলভ্য সবজি। কচুপাতা ভর্তা ও তরকারি বেশি জনপ্রিয়। ইলিশ, চিংড়ি, ছোট মাছ বা শুঁটকি মাছ দিয়ে কচুশাকের তরকারি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। কচুশাককে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না। তবে আপনি জানেন কি কচুশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। কিন্তু এই কচুশাকই দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে।

কচুশাকের পুষ্টিগুণ

কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদানসমূহ। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে-৬.৮ গ্রাম শর্করা, ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, শূন্য দশমিক ২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), শূন্য দশমিক ২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।

আসুন জেনে নিই কচুশাক কেন খাবেন-

রাতাকানা রোগ

কচুশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উৎস। রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগপ্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কচুশাকে ভিটামিন-এ থাকে, যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।

হিমোগ্লোবিন

কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তারই কচুশাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই চলে।

মুখ ও ত্বকের রোগ

ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি ও সি। তাই মুখ ও ত্বকের রোগপ্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা রাখে।

হৃদরোগ ও স্ট্রোক

কচুশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। তা ছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা কচুশাক খেতে পারেন।

শরীরে ক্ষত

কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তা ছাড়া ভিটামিন-সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচুশাক খাওয়ানো উচিত।

অক্সিজেন সরবরাহ

আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কচুশাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

দাঁত ও হাড়ের গঠন

কচুশাকের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন ও ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচুশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী নারী

কচুশাকে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচুশাক সহজলভ্য, তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী নারীরা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচুশাক খেতে পারেন।

সতর্কতা

কচুশাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ এতে অক্সলেট নামক উপাদান থাকে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।