হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলমগ্ন স্থাপনাকে হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেন পানিতে ভাসমান। প্রার্থনায় আকুল হৃদয় সেখানে অবনত হয় স্রষ্টার ইবাদতে। কিশোরগঞ্জের জল থৈ থৈ প্রত্যন্ত হাওরে রয়েছে তেমনি এক জলবেষ্টিত ঈদগাহ। বিশ্বের বিস্ময় ঈদগাহটি।
চারদিকে আদিঅন্তহীন জলের কল্লোলময় দ্বীপদেশ যেন হাওর উপজেলা মিটামইন। কিশোরগঞ্জের এই উপজেলার অবস্থান হাওরাঞ্চলের গভীরতম অংশে। উপজেলার উত্তরে আর দক্ষিণে যথাক্রমে রয়েছে হাওর উপজেলা ইটনা আর অষ্টগ্রাম। পূর্বে হবিগঞ্জের বিশাল হাওরের অতলান্ত জলরাশি। মিটামইনের অতি প্রত্যন্ত অঞ্চলের চানপুর গ্রামটি চারদিক দিয়ে হাওরের জলরাশি দ্বারা বেষ্টিত। যে দিকেই তাকানো যাক, পানি আর পানি। মাইলের পর মাইল জলের সীমানায় মাঝে মাঝে দ্বীপসদৃশ্য কয়েকটি গ্রাম, যেখানে দিনরাত ঝাপ্টা দেয় ঢেউ আর স্রোত। বাতাসের হু হু ধ্বনি আর জলের বিরামহীন কল্লোল ছাড়া হাওরের জলমগ্ন-বিচ্ছিন্ন ভূগোলে আর কোনও শব্দই নেই।
এমনই জলজ জনপদটি ঈদের দিন ভোর বেলা বদলে যায়। চানপুর ঈদগাহের চিরচেনা দৃশ্য অন্যরূপ হয়ে যায়। হাওরের অতল জলের শরীর ছুঁয়ে দূর-দূরান্তের গ্রাম থেকে আসতে থাকে বাহারী নৌকার বহর। পরিবারের নানা বয়েসী সদস্যরা ভিড় জমায় ঈদগাহে।
ঈদগাহ ঘিরে জমে মেলা আর গ্রামীণ পণ্যের পসরা। ঈদের দিনটির স্পর্শে বদলে যায় নিস্তব্ধ হাওরের এক চিলতে শুকনো মাটি। চানপুরের ঈদগাহ সেদিন যেন লাভ করে বহুবর্ণা জাগ্রত অবয়ব।
‘পায়ে হেটে ঈদ জামাতে শরিক হওয়ার দৃশ্য আমাদের চিরচেনা হলেও নৌকায় ঈদগাহ যাত্রার ছবিটি বিরল’, বললেন মিটামইনের বাসিন্দা এ্যাডভোকেট শেখ ফারুক আহমেদ।
নৌকা ছাড়া এই ঈদগাহে যাতায়াত করা যায় না। বিশ্বের কোথাও নৌকা দিয়ে ঈদের নামাজে যোগ দেওয়ার অপরূপ দৃশ্য বিরল। পৃথিবীর আর কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না এমন জলজ উৎসবমুখর ঈদোৎসব আর জলবেষ্টিত ঈদগাহ।’ পৃথিবীতে বহু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, যা চারপাশে পানিঘেরা এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু অংশ পানিতে ভাসমান। মসজিদ স্থাপনার ক্ষেত্রেও এরূপ নির্মাণশৈলীর অনুসরণে বহু মসজিদই নির্মিত হয়েছে। জেদ্দা, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়ায় পানিতে ভাসমান বিশ্ববিখ্যাত মসজিদ রয়েছে।
কিন্তু পানিতে পরিবেষ্টিত ঈদগাহ পৃথিবীতে কোথাও নেই। একমাত্র বাংলাদেশের হাওরেই দেখতে পাওয়া যায় বিশ্বের বিস্ময় জলবেষ্টিত ঈদগাহ। চানপুরের ঈদগাহটি এ কারণেই বিশেষ বৈশিষ্টপূর্ণ।