হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনে আর মাস মিলিয়ে বছর তো আর কম কাটল না। তবুও লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বল পায়ে মুগ্ধতা ছড়ানো থামেনি। ফুটবল খেলাটাকে যদি একটা ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা দেওয়া হয়, মেসি আর রোনালদো শেষ ১০ বছর ধরে সেই ঘোড়াটার সহিস।
দরজায় কড়া নাড়তে থাকা রাশিয়া বিশ্বকাপ যেমন এনে দিচ্ছে আনন্দের উপলক্ষ, তেমনি শেষ দশকের সেরা দুই ফুটবলারের অস্পষ্ট বিদায়-ধ্বনি জোগান দিচ্ছে বেদনারও। মেসি তো এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, রাশিয়া বিশ্বকাপ হতে পারে তাঁর শেষ কোনো আন্তর্জাতিক আসর। তার চেয়েও তিন বছরের বড় রোনালদোও আসছে বিশ্বকাপ দিয়েই তুলে রাখতে পারেন বুটজোড়া।
তেজস্বী সব আগ্নেয়গিরি যেখানে তাদের অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ করে দিয়ে একটা সময় হয়ে পড়ে নিস্তেজ, সেখানে মেসি-রোনালদো তো মানুষ। যাওয়ার আগে সমান পাঁচবার করে ব্যালন ডি’অর জেতা দুই ফুটবলার অবশ্য তাঁদের হাতের ব্যাটনটা দিয়ে যাবেন অন্যদের হাতে।
কিন্তু আসলেও কি আর্জেন্টাইন আর পর্তুগিজ এই অগ্রজ-জুটি পাবেন তাঁদের যোগ্য অনুজ? ফুটবলে মুগ্ধতা ছড়ানোর লাগামটা মেসি-রোনালদো থেকে কে নেবেন প্রশ্ন উঠেছে, উঠছে ওবং উঠতেই থাকবে। রেকর্ডে এই দ্বয়ের আশপাশে কেউ না থাকলেও তাদের অনুপস্থিতে যাঁরা হতে পারেন বল পায়ে তাঁদের সম্ভাব্য উত্তরসূরি, নজর বোলানো যাক তেমনই একটি তালিকায়:
নেইমার ডি সিলভা (ব্রাজিল) : ব্রাজিলিয়ান এই মায়েস্ত্রোকেই ধরা হচ্ছে মেসি বা রোনালদো-পরবর্তী যুগের সিংহাসনধারী। সবে যখন কৈশোর পেরিয়েছিলেন, ‘সান্তোস’র সেই ছোট্ট নেইমারের ফুটবল পায়ে মুন্সিয়ানা দেখে বিশ্ব ফুটবল হয়েছিল মন্ত্রমুগ্ধ। সান্তোস হয়ে তাই পা রেখেছিলেন সোজা বার্সেলোনায়। নিজের সবচেয়ে পছন্দের ফুটবলার আর আদর্শ মেসির সঙ্গে খেলার ইচ্ছা ছিল খুব।
সেই শখ মিটিয়ে ন্যু-ক্যাম্পে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের সঙ্গে জুটি বেঁধে ধরেছিলেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) রাস্তা। ফরাসি ক্লাবটিতে পাড়ি দিয়েই হয়ে গেছেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার (২২২ মিলিয়ন ইউরো)।
ড্রিবলিং, ছন্দময়ী ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দাঁড়িয়ে নামছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বিশ্বকাপের সামনে। ঘরের মাঠে নিজের প্রথম বিশ্বকাপটা পুড়েছিল চোটের আগুনে। কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে চলে গিয়েছিলেন মাঠের বাইরে। মাঠের বাইরে বসে দেখেছেন সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে দলের ৭-১ গোলের অসহায় আর লজ্জার এক পরাজয়।
চার বছর পর সেই নেইমার এখন অনেক পরিণত। নামতে প্রস্তুত রাশিয়া বিশ্বকাপে। চোটে পড়ে ডাক্তারের ছুরির নিচে গিয়েছে। ফুটবলের মাঠে ফিরেছেন প্রায় মাস তিনেক পর। নিজেদের ইতিহাসের ষষ্ঠ শিরোপাটা জেতার লড়াইয়েই রাশিয়ার মাঠে নামবেন ২৬ বছর বয়সী নেইমার।
মোহাম্মদ সালাহ (মিসর) : মিসরীয় এই ফরোয়ার্ডের আলোতে উদ্ভাসিত এখন পুরো ফুটবল দুনিয়ায়। শেষ এক বছরে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের জার্সিতে মোহাম্মদ সালাহ গড়েছেন একের পর এক কীর্তি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (ইপিএল) সর্বোচ্চ গোলের (৪৪ গোল) সঙ্গে জিতেছেন ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়ের তকমাটাও! রোনালদোদের উত্তরসূরি হওয়ার জন্য যোগ্য প্রার্থী তিনিও।
২৮ বছর পর সালাহর হাত ধরেই মিসর উঠেছে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। জাতীয় দল কিংবা ক্লাব দুইয়ের হয়েই সমান উজ্জ্বল ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। মেসি-রোনালদোর মতো সালাহরও আছে একাই ম্যাচ পাল্টে দেয়ার মতো অতিমানবীয় ক্ষমতা।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে কাঁধের চোটে খেলতে পারেননি বাকি ম্যাচে। বিশ্বকাপের খেলার সম্ভাবনাও পড়েছিল প্রশ্নের মুখে। তবে সালাহ নিজেই জানিয়েছেন একদম শুরু থেকেই রাশিয়ার মাঠে নামতে চান তিনি।
কিলিয়ান এমবাপে (ফ্রান্স) : বয়সটা মাত্র ১৯। কিন্তু এর মধ্যেই কিলিয়ান এমবাপে ঢুকে পড়েছেন মেসি-রোনালদোদের অনুজ হওয়ার তালিকাটায়। তরুণ হলেও গোল করার ক্ষমতার জন্যই রোনালদো বা মেসির সঙ্গে তাঁর তুলনা দেয়া হচ্ছে হরহামেশাই। পিএসজিতে নেইমারের এই সতীর্থ প্রতিদিনই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপের একদম সামনে দাঁড়িয়ে অবশ্য এমবাপের প্রমাণ করার আছে আরো অনেকটাই।
কেভিন ডি ব্রুইন (বেলজিয়াম) : গোল করানোতে দারুণ দক্ষতা থাকায় ডি ব্রুইনকে বলা হয়ে থাকে ‘অ্যাসিস্টের রাজা’। কি ম্যানচেস্টার সিটি, কি জাতীয় দল! ডি ব্রুইন দুই জার্সিতেই উজ্জ্বল ভীষণ। ইপিএলে আর দেশের হয়ে দারুণ নৈপুণ্যে আগামী ব্যালন ডি’অর পাওয়ার তালিকায় নিশ্চিতভাবে থাকছেন এই বেলজিয়ান। মেসিদের পর ফুটবলের মাঠে দারুণ কিছু করে দেখানোর যোগ্যতা বেশ ভালই রাখেন ডি ব্রুইন। তাই তিনিও আছেন এই তালিকায়।
হ্যারি কেন (ইংল্যান্ড) : রাশিয়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্বভার চেপেছে কেনের ওপরেই। ইপিএলের সঙ্গে জাতীয় দলেও কেন দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ। সাথে টটেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৫০ ম্যাচে মাঠে নেমে গোল করেছেন ১০৪টি, ইংল্যান্ডের হয়ে ২৪ ম্যাচে ঝুলিতে আছে ১৩ গোল। ক্লাব দলটির ‘জার্সি নং ১০’কে ধরে রাখা হচ্ছে ফুটবল জগতের পরবর্তী সম্রাট হিসেবে।