ঢাকা ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাড়ে চারশ’ বছরেও স্বমহিমায় অষ্টগ্রামের কুতুব শাহ মসজিদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০১:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জুন ২০১৮
  • ৪৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চারশ’ বছরের বেশি পুরনো পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট কুতুব শাহ মসজিদটি টিকে আছে তার স্বকীয়তা নিয়ে। দীর্ঘ সময়ের ধারাবাহিকতায় মসজিদটির কোনো কোনো অংশের নকশা চুন-সুরকির প্রলেপ কিছুটা নষ্ট হলেও নিজস্ব মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে সেটা।

কিশোরগঞ্জের হাওরের রানীখ্যাত উপজেলা অষ্টগ্রাম সদরে পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির অবস্থান। দেশের পুরাকীর্তিগুলোর অন্যতম এটির ইতিহাস অনেকেই জানেন না। প্রায় ৭৩ শতাংশ ভূমির ওপর এর অবস্থান। সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা আয়তাকার মাঠ। কিনার দিয়ে আম, জাম, কাঁঠাল, সুপারি, কাঁঠালচাঁপা গাছের সারি। মৌসুমি ফলের গাছগুলোতে প্রতিবছর ফুল-ফলের আগমন হাওরবাসীকে মুগ্ধ করে। দর্শনার্থীরা ঔৎসুক্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন ঐতিহাসিক নিদর্শনটির দিকে। সামনে পুকুরটির স্বচ্ছ পানি দূর থেকে আসা পথিকের ক্লান্তি দূর করে।

পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটিতে কুতুব শাহের মাজার ও আরও পাঁচটি মাজারে কোনো শিলালিপি বা তারিখ পাওয়া যায়নি। বিশিষ্ট লোকঐতিহ্য সংগ্রাহক মোঃ সাইদুর সম্পাদিত কিশোরগঞ্জ গ্রন্থে আছে, এতে সুলতানি আমলের বৈশিষ্ট্য থাকলেও মোগল প্রভাবই বেশি। অধ্যাপক ধানির মতে, মসজিদটি ষোড়শ শতকের শেষার্ধে নির্মিত হয়েছিল। তবে এ ক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়ার বিশেষণ প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ অঞ্চলে পাঠান সম্রাট শেরশাহর রাজ্যভুক্ত হয়। পাঠান রাজত্বের শেষে ঈশা খাঁ মসনদ-ই-আলা এ অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এ অঞ্চলের মোগল অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় সুবেদার ইসলাম খানের আমলে ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। এতে দেখা যাচ্ছে, মোগল অধিকারের পরে যদি এ মসজিদ নির্মিত হয়ে থাকে, তবে তা সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের আগে হতে পারে না। আর ঈশা খাঁর আমলে যদি এ মসজিদ নির্মিত হয়ে থাকে, তবে তা ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে হতে পারে। তাতে এতে মোগল প্রভাব থাকার কথা নয়। সঙ্গত কারণে তাই ধারণা করা যায়, মসজিদটি সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে নির্মিত হয়েছিল।

মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। এর ভেতর মাঝের গম্বুজটি বৃহৎ। মসজিদটি আয়তাকার। বাইরের দিক থেকে দৈর্ঘ্যে ৪৫ ফুট। চার কোণে চারটি আট কোনাকার বুরুজ আছে। এগুলো মোল্ডিং দ্বারা শোভিত এবং চূড়া ছোট গম্বুজবিশিষ্ট। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো মসজিদের কার্নিশগুলো বেশ বাঁকানো, যা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। পূর্বের তিনটির প্রবেশদ্বারের মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। পূর্ব ও পশ্চিম দেয়াল প্রায় পাঁচ ফুট এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়াল প্রায় ৪ দশমিক ৫ ফুট প্রশস্ত। দেয়ালের বাইরের দিকে পোড়ামাটির চিত্রফলকের অলঙ্করণ ছিল, যার সামান্য নমুনা আজও অবশিষ্ট রয়েছে। পূর্ব দিকের দেয়াল দুই সারি প্যানেল দ্বারা শোভিত। প্রবেশদ্বারগুলো অর্ধবৃত্তাকারের খিলানের সাহায্যে নির্মিত।

কুতুব শাহের মসজিদ ও মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বাংলা মাঘ মাসের শেষ শুক্রবার বিশাল ওরস মোবারক হয়ে থাকে।

মসজিদ ও মাজার শরিফ উন্নয়নের জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন উদাসীন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি যে কোনো সময় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

সূত্র: সমকাল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সাড়ে চারশ’ বছরেও স্বমহিমায় অষ্টগ্রামের কুতুব শাহ মসজিদ

আপডেট টাইম : ০৩:০১:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চারশ’ বছরের বেশি পুরনো পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট কুতুব শাহ মসজিদটি টিকে আছে তার স্বকীয়তা নিয়ে। দীর্ঘ সময়ের ধারাবাহিকতায় মসজিদটির কোনো কোনো অংশের নকশা চুন-সুরকির প্রলেপ কিছুটা নষ্ট হলেও নিজস্ব মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে সেটা।

কিশোরগঞ্জের হাওরের রানীখ্যাত উপজেলা অষ্টগ্রাম সদরে পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির অবস্থান। দেশের পুরাকীর্তিগুলোর অন্যতম এটির ইতিহাস অনেকেই জানেন না। প্রায় ৭৩ শতাংশ ভূমির ওপর এর অবস্থান। সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা আয়তাকার মাঠ। কিনার দিয়ে আম, জাম, কাঁঠাল, সুপারি, কাঁঠালচাঁপা গাছের সারি। মৌসুমি ফলের গাছগুলোতে প্রতিবছর ফুল-ফলের আগমন হাওরবাসীকে মুগ্ধ করে। দর্শনার্থীরা ঔৎসুক্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন ঐতিহাসিক নিদর্শনটির দিকে। সামনে পুকুরটির স্বচ্ছ পানি দূর থেকে আসা পথিকের ক্লান্তি দূর করে।

পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটিতে কুতুব শাহের মাজার ও আরও পাঁচটি মাজারে কোনো শিলালিপি বা তারিখ পাওয়া যায়নি। বিশিষ্ট লোকঐতিহ্য সংগ্রাহক মোঃ সাইদুর সম্পাদিত কিশোরগঞ্জ গ্রন্থে আছে, এতে সুলতানি আমলের বৈশিষ্ট্য থাকলেও মোগল প্রভাবই বেশি। অধ্যাপক ধানির মতে, মসজিদটি ষোড়শ শতকের শেষার্ধে নির্মিত হয়েছিল। তবে এ ক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়ার বিশেষণ প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ অঞ্চলে পাঠান সম্রাট শেরশাহর রাজ্যভুক্ত হয়। পাঠান রাজত্বের শেষে ঈশা খাঁ মসনদ-ই-আলা এ অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এ অঞ্চলের মোগল অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় সুবেদার ইসলাম খানের আমলে ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। এতে দেখা যাচ্ছে, মোগল অধিকারের পরে যদি এ মসজিদ নির্মিত হয়ে থাকে, তবে তা সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের আগে হতে পারে না। আর ঈশা খাঁর আমলে যদি এ মসজিদ নির্মিত হয়ে থাকে, তবে তা ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে হতে পারে। তাতে এতে মোগল প্রভাব থাকার কথা নয়। সঙ্গত কারণে তাই ধারণা করা যায়, মসজিদটি সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে নির্মিত হয়েছিল।

মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। এর ভেতর মাঝের গম্বুজটি বৃহৎ। মসজিদটি আয়তাকার। বাইরের দিক থেকে দৈর্ঘ্যে ৪৫ ফুট। চার কোণে চারটি আট কোনাকার বুরুজ আছে। এগুলো মোল্ডিং দ্বারা শোভিত এবং চূড়া ছোট গম্বুজবিশিষ্ট। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো মসজিদের কার্নিশগুলো বেশ বাঁকানো, যা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। পূর্বের তিনটির প্রবেশদ্বারের মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। পূর্ব ও পশ্চিম দেয়াল প্রায় পাঁচ ফুট এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়াল প্রায় ৪ দশমিক ৫ ফুট প্রশস্ত। দেয়ালের বাইরের দিকে পোড়ামাটির চিত্রফলকের অলঙ্করণ ছিল, যার সামান্য নমুনা আজও অবশিষ্ট রয়েছে। পূর্ব দিকের দেয়াল দুই সারি প্যানেল দ্বারা শোভিত। প্রবেশদ্বারগুলো অর্ধবৃত্তাকারের খিলানের সাহায্যে নির্মিত।

কুতুব শাহের মসজিদ ও মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বাংলা মাঘ মাসের শেষ শুক্রবার বিশাল ওরস মোবারক হয়ে থাকে।

মসজিদ ও মাজার শরিফ উন্নয়নের জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন উদাসীন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি যে কোনো সময় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

সূত্র: সমকাল