গত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে তার রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছেন। লন্ডনের অভিজাত এলাকায় তারেক রহমানের বাসার অদূরে কিংসটনলজ হোটেলে তিনি এ বৈঠক করেন। লন্ডন পৌছুনোর পর কিংসটনলজ হোটেলে এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এখানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হলো। বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে। দলটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের সকল বিএনপি নেতা-কর্মী ও বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে খুশির আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও ভঙ্গুর মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বস্তরের গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সায়েম বলেন, খালেদা জিয়ার এই সফর একান্ত ব্যক্তিগত ও চিকিৎসাসংক্রান্ত, কোনো রাজনৈতিক সফর নয়। সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের কথা রয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কুটনৈতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে পৌঁছে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছেন। সেখানে তার প্রয়াত ছোট ছেলে কোকো রহমানের স্ত্রী ও দুই মেয়েও অবস্থান করছেন। তারেক জিয়ার বাসায় তার স্ত্রী ও এক মেয়ে এবং তারেকের শাশুড়িও আছেন। তবে, দিনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত করছেন তারেক রহমানের বাসায়। আর রাতের বেলা ঘুমাচ্ছেন হোটেলে। তারেক রহমানের বাসা ছোট হওয়ার কারণে সেখানে সবাই মিলে একসাথে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। এই কারণে রাত্রি যাপন করছেন হোটেলে। ঈদের দিন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও তার পরিবার এবং কোকোর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো ছাড়াও যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, আজকালের মধ্যেই তার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা রয়েছে। ডাঃ জোবায়দা রহমান তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি। ওই সূত্র সঠিক সিউিউলের সময়টি বলতে চাননি।
এদিকে সরকারের বিরুদ্ধে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের নিয়ে যেসব কথা বলেছেন এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতিবাদ করে যুক্তরাজ্য বিএনপি সহসাই সংবাদ সম্মেলন করবে। খালেদা জিয়া লন্ডনের নেতাদের বলেছেন, সরকার যে প্রচারণা জঙ্গীবাদ নিয়ে চালাচ্ছে এর প্রতিবাদ করার জন্য।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া এখন অনেক ভাল আছেন। দেশের একাকি, নি:সঙ্গ জীবন ছেড়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আছেন লন্ডনে। যা গত প্রায় আট বছরের মধ্যে আর হয়নি। তিনি দুই পুত্র বধূ ও তিন নাতনীর সঙ্গেও অনেকটা সময় অতিবাহিত করছেন। এই সময়ে তিনি বেশ হাসজ্জোল থাকছেন। দুই পুত্র বধূ মিলে রান্না করছেন শাশুড়ীর জন্য।
এদিকে খালেদা জিয়া তার পুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও একাকি কথা বলছেন। রাজনৈতিক আলোচনা করছেন। তবে ওই আলোচনায় তারেক ও কোকোর পরিবারের কোন সদস্য থাকছেন না। সেখানে বাইরেও কেউ থাকছে না। তারা চাইছেন না দুই জনের আলোচনার বিষয়গুলো এই পর্যায়ে কেউ জানুক। তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গেও আলোচনা করবেন। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করারও চেষ্টা করছেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগ পেয়েছেন।
এদিকে একাধিক সূত্র বলছে, খালেদা জিয়া এখন যে সব বৈঠক করছেন ও বিভিন্ন বৈঠক আগামী দিনে করবেন সেটা ফলাউ করে প্রচার হোক তা তিনি চাইছেন না। তিনি যেহেতু রাষ্ট্রের কোন দায়িত্বে নেই বিরোধী দলেও নেই এই কারণে তিনি চাইছেন নীরবেই সেটা করবে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েই করতে চান।
একটি সূত্র আভাস দিয়েছে, জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে কথা হবে। তবে তিনি সেল ফোনেই কথা বলতে চান।
বৃটিশ সরকারের ও এমপিদের সঙ্গে বৈঠকের কোন সময় ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সূত্র জানায়, ওই ভাবে জানিয়ে কোন বৈঠক হবে না। ব্যক্তিগতভাবেই হবে। এই ব্যাপারে তিনি কোন প্রচারণা হোক তা তিনি চাইছেন না। তার সফরটাকে ব্যক্তিগত ভাবেই দেখাতে চান ।
এদিকে সূত্র আরো জানায়, সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে এখনও বিএনপির বৈঠক হওয়ার কোন সিডিউল নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে সমঝোতা করার মনোভাব নিয়ে সৈয়দ আশরাফ আলোচনা করতে চাইলে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানও আলোচনা করতে পারেন। তবে সরকারের তরফ থেকে এই ধরনের কোন প্রস্তাব এখনও নেই। আদৌ হবে কিনা এটাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।