জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের সাহায্যের আশায় বসে নেই। সীমিত সম্পদ ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ভবিষ্যত রক্ষায় আমরা সংগ্রাম করছি। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা লিখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, এসডিজির যে লক্ষ্যটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈরী আবহাওয়া কৃষি, শিল্প ও সামাজিক কাঠামোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গ্রিন-হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণের কথা বিবেচনা করলে জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশের দায় একেবারেই নগণ্য হলেও এর প্রভাবে দেশের কোটি কোটি মানুষ পরিবেশ-উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে পরিস্থিতির আরো খারাপ হতে পারে।
গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়বে। এতে তিন কোটির বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। ফলে নগরমুখী অভিবাসন হয়ে উঠবে অবশ্যম্ভাবী। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকা, জীববৈচিত্র্য, খাদ্য, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ভৌত অবকাঠামোর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, আর এই কারণে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ এবং প্যারিসে জলবায়ু চুক্তি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তবে বিশ্বের সাহায্যের আশায় বাংলাদেশ হাত গুটিয়ে বসে নেই। সম্পদ ও প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার পরও নিজেদের ভবিষ্যত রক্ষায় আমরা লড়াই করে যাচ্ছি।
প্রধনামন্ত্রীর নিবন্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে ২০১১ সালের সংবিধান সংশোধন, নতুন আইন প্রণয়ন ও সংশোধনসহ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে অর্থ বরাদ্দ ও দূষণ প্রতিরোধে সরকারের নেয়ার বিভিন্ন উদ্যোগের বিবরণ উঠে এসেছে।
নিবন্ধে শেখ হাসিনা লিখেছেন, এসব উদ্যোগের পরও আমাদের বদ্বীপে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছর আমাদের দেশে স্বাভাবিক গড়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা তাতে প্লাবিত হয়েছে ও শস্যের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, এর মোকাবিলা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এসডিজি ও জলবায়ু চুক্তির মতো উদ্যোগগুলোতে আমাদের মতো ঝুঁকির মুখে থাকা দেশের পাশে দাঁড়াক।
প্রধানমন্ত্রী তার নিবন্ধে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে হলে খাপ খাইয়ে নেওয়া ও প্রশমন- এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। প্যারিসে জলবায়ু আলোচনায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি আসবে, সেগুলো হতে হবে পরিমাপ ও যাচাইযোগ্য। কার্বন বাজেটিং ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার পথ খুঁজতে বিশ্বকে নজর দিতে হবে। খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দও জরুরি।
জলবায়ু পরিবর্তনে টিকে থাকার যুদ্ধে এপর্যন্ত অর্জিত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ অন্য সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে প্রস্তুত বলেও বিশ্বকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।