হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাতে আর মাত্র ৪ মাস। সব গতিপথ ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, অক্টোবর-নভেম্বরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হবে। এদিকে ভোটের রাজনীতিতে এখনো বেশ হৃষ্টপুষ্ট ক্ষমতাসীন দল। নানান কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন সব ধরনের প্রচারণা। অন্যদিকে খালেদাবিহীন বিএনপি এখন অন্ধকার বীজতলায়। তবুও স্বর্গীয় ডিমের স্বপ্নে ক্ষমতাসীন দলকে মরণ কামড় দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
লন্ডন থেকেও মনিটরিং চলছে তৃণমূলে। ঝুলে থাকা কমিটিগুলোও সম্পন্ন চলছে সমানতালে। প্রতিদিনই গুলশান অফিসে ফখরুলের নেতৃত্বে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে চলে বৈঠক। নিয়মিত ব্রিফিং করে পল্টনের দলীয় কার্যালয় চাঙ্গা রেখেছেন রিজভী। মে মাসের শুরু থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নানান প্রোগ্রামের গতি বাড়িয়ে সরকারকে দিয়ে যাচ্ছেন হুঁশিয়ারি বার্তা। বুদ্ধিজীবীরা মনে করছেন বাঁচা-মরা এবং টিকে থাকার লড়াইয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপি হয়তো আওয়ামী লীগকে শক্ত মরণ কামড় দিতে পারেন। যেটা সামাল দেওয়ার পরিবেশ হয়তো ক্ষমতাসীনদের থাকবে না।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্ত ব্যতিত কোনো আন্দোলনে যাবে না বিএনপি। কারণ বিরোধী দল দমনে গুম, খুন ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যের মাধ্যমে বিএনপিকে কোণঠাসা করে রাখবে সরকার। ছোট ইস্যু নিয়ে মামলায় জড়ানো হবে দলের শীর্ষ নেতাদেরও। তখন আর গণমাধ্যমে কথা বলারও কেউ থাকবে না। তাই কৌশলে মাঠে থেকে গাজীপুর, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে জনপ্রিয়তার ফসল ঘরে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে ঠিক নির্বাচনের দেড় থেকে দুমাস আগে জীবন মরণের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি।
তাই হয়তো এবার নিজ উদ্যোগে নির্বাচনের আগে কোনো সংলাপের আহ্বান করবে না বিএনপি। যেমনটি এর আগে ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সংলাপের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এবার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে যদি কোনো শীর্ষ নেতা এমন সমঝোতার ইঙ্গিত দেন তাহলে দলে ওই নেতা সরকারের অনুগত এবং দলের আদর্শপন্থি ব্যক্তি বিবেচিত হবে বলেও আতঙ্কে আছেন অনেকে।
তাই নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে জনমত তৈরি, খালেদা জিয়ার মুক্তি, আইনি লড়াই এবং শান্তিপূর্ণ নতুন কর্মসূচির মাধ্যমেই নিজেদের অবস্থান জানিয়ে যাবে। তবে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি। বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে হাতে রাখতে সকল রাজনৈতিক যজ্ঞও চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি তার কিছু রাজনৈতিক দিক মাঠপর্যায়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বিকল্প ধারার সভাপতি এবং তৃতীয় শক্তি হওয়ার আশায় গড়ে তোলা যুক্তফ্রন্টের শরিক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও এ নিয়ে গতকাল একটি অনুষ্ঠানে হুংকার দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশের যে প্রেক্ষাপট তা এক কথায় বলছি। তাতে মালয়েশিয়ার মাহাথির বিন মোহাম্মদ খুব প্রাসঙ্গিক। মালয়েশিয়ার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক অনেক উন্নয়ন করেছেন। অনেক কিছু বানিয়ে দেশটাকে আরও উঁচু করেছেন। কিন্তু কর্মশালা করেছে দুর্নীতি করে। দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। মাহাথির ও জনগণের যে বিদ্রোহ তা ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমার দেশে এই দুর্নীতি সহ্য করব না। ‘আমরা অনেক গুম, নিহত দেখেছি। গ্রেনেড মারা দেখেছি। আর সহ্য করব না। আমরা অনেক অগণতন্ত্র দেখেছি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারের পরে আইন মানা হয় না।
ট্রাইব্যুনালের বিচারের পরে রায় মানা হয় না। হাজার হাজার মানুষ জেলের ভেতরে আছে, কতদিন চলবে এগুলো?’, ‘আমরা সহ্য করতে রাজি না। বাংলাদেশের জনগণ জেগে উঠেছে এবং এই জাগরণ থাকবে ইনশল্লাহ। আমরাও তাদের সঙ্গে থাকব।’ একই অনুষ্ঠানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘মাঠ ছাড়তে হবে। দেশও ছাড়তে হবে। কোথায় যাবেন চিন্তা করেন। আমরা মাঠের ফ্রন্টের খেলোয়াড়। পিছনের নয়।’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও।
তিনি বলেন, ‘ভয়ের সংস্কৃতি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন মাদক নিয়ে ঘটনা ঘটছে। এরপর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটবে। তারপর চোরাকারবারিদের ধরার ব্যাপার এভাবে চলতেই থাকবে। ক্রসফায়ার আর মৃত্যুর মহড়া চলবে। আর তার মধ্যেই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে গত সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আন্দোলন করেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এটাই সত্য কথা। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। কোনো স্বৈরাচারী সরকারকে সরানোর জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই।
জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয় না। তাই জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।’ ফখরুল আরও বলেন, ‘আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন শেখ হাসিনা। এই খবর যদি সত্য হয় তাহলে কি এই দেশ স্বাধীন আছে? তাহলে কি দেশকে অঙ্গরাজ্য বানাতে চায় সরকার?’ ‘এই ভয়াবহ দানব যে আমাদের বুকের ওপর এসে পড়েছে তাকে সরাতে হবে। আমরা যদি আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারকে সরাতে না পারি তাহলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে নির্বাচনের আগে আন্দোলনের গতিপথ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন ভারত শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশে আধিপত্য কায়েম করতে চায়।
যেটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের সামিল। জনসমর্থহীন একজন ব্যক্তি ও দলকেই ভারত বারবার ক্ষমতায় দেখতে চায়। সত্যি বলতে দেন দরবার ও আকুতি মিনতি করে কোনো লাভ নেই। জনগণ সকল ক্ষমতার ধারক। তাছাড়া নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য যে ভয়াল মরণ কামড় দেবে আওয়ামী লীগ তা চিন্তাও করতে পারবে না। এ নিয়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর অব. ইব্রাহিম বীর প্রতীক সাংবাদিককে বলেন, আন্দোলনের সময় এসেছে।
বিএনপিকে আন্দোলনে নামতেই হবে। জনগণও প্রস্তুত রয়েছে। তবে একটি রুপরেখা তৈরি করেই মাঠে নামতে হবে, তাহলেই আন্দোলন সফল হবে। আন্দোলনের গতিপথ ঠিক থাকলেই এই সরকারও ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে। জনগণের অধিকারের জন্য, মানুষের নিরাপত্তার জন্য রাজপথে নামা ছাড়া বিএনপির জন্য আর কোনো পথ নেই বলেও মনে করেন তিনি।