ঢাকা ০৭:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজাপুরের সনু মিয়া মাথা গোজার ঠাঁই চান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০৭:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মে ২০১৮
  • ২৮৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তরুন বয়সে প্রচন্ড শক্তিশালী ছন্ধু সিকদার ওরফে সনু মিয়ার সবকিছুই ছিল। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে দিনমজুর সনু মিয়ার সংসারে আনন্দের কমতি ছিল না। অথচ বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সী দুর্ভল শরীরের সনু মিয়ার বসতভিটা ছাড়া কিছুই নেই। নিসংগতাই তাঁর একমাত্র সম্বল। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের বাঘড়ি বাজার সংলগ্ন একটি ঝুপড়ি ঘরে সনু মিয়া একাকি মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তাইতো অসহায় সনু মিয়া একটু মাথা গোজার ঠাই চায় এ সমাজের কাছে। এভাবেই আর্ধাহারে অনাহারে মৃত্যুর দিন ঘুনছেন তিনি। সহয়সম্বলহীন সনু মিয়া কোনমতে দিনকাটালেও বর্ষার মৌসুমে রাত কাটে দুর্ভোগে। খুপড়ি ঘরের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে সব জায়গায়। নষ্ট হয় ঘরের মালপত্র। জীবনের শেষ দিনগুলো একটু শান্তিতে কাটাতে চান তিনি। তাই এখন সকলের সহযোগীতাই তার একমাত্র সম্বল।

গত ৯ মে বুধবার দুপুরে সনু মিয়ার বাড়িতে কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে রিপন তার বউ-বাচ্চা নিয়ে ঢাকায় থাকে। রিক্সা চালিয়ে কোনমতে সে নিজেই চলে, তার আর খবর নিতে পারেন না। মানুষিক ভারসাম্যহীন একমাত্র মেয়ে থাকে তার স্বামীর বাড়ীতে। দুই বছর আগে স্ত্রী রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তার চিকিৎসায় নিস্ব হয়েছেন তিনি। তাই এখন তিনি কোনমতে একা থাকেন।

আমার খাবার আমাকেই রান্না করে খেতে হয়। কোন দিন খাওয়া হয় কোনদিন হয় না। মাঝে মধ্যে প্রতিবেশীদের দেয়া খাবারে চলে তার পেট। অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই আমার।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখের কোনে কষ্টের অশ্রু জমে সনু মিয়ার। সনু মিয়া আরো বলেন, ‘আমার মত অসংখ্য অসহায় বৃদ্ধ মানুষ রয়েছে দেশে। এই বৃদ্ধদের জন্য সরকারের কিছু করা উচিৎ। শুধুমাত্র বয়স্ক ভাতা দিয়েই সরকার দায়িত্ব শেষ করছে। তাই খোদাই এখন আমার একমাত্র ভরসা।’ সনু মিয়া বলেন, আমার দুরাবস্থার কথা অনেকের কাছেই জানিয়েছি কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’ সনু মিয়ার প্রতিবেশী সাংবাদিক রহিম রেজা বলেন, ‘সনু মিয়ার একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার।

এই বৃদ্ধ মানুষটির জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিৎ।’ তার স্ত্রীর মৃত্যুও পর থেকেই সনু মিয়া একা একা অসহায়ভাবে কোন মতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমান বর্ষার মৌসুমে তিনি অতিকষ্টে রয়েছেন। তার অরক্ষিত ঘরটির বিভিন্ন স্থান থেকে বর্ষায় পানি পড়ে। মঠবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার ও ইউপি সদস্য ফোরক সিকদার জানান, তাকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে অন্যান্য সকল সুযোগ দেয়া হবে। এ বিষয় রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা বেগম পারুল বলেন, ‘সনু মিয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তার বাড়িতে গিয়ে আমরা তার খোজখবর নিচ্ছি।

আমাদের পক্ষে তার আশ্রয়সহ যতটুকু করা সম্ভব, আমরা তা করব।’ ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, ইতোমধ্যে সনু মিয়ার আশ্রয়ের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার আশ্রয়ের জন্য নতুন একটি ঘর নির্মানের উদ্যোগসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজাপুরের সনু মিয়া মাথা গোজার ঠাঁই চান

আপডেট টাইম : ০৪:০৭:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তরুন বয়সে প্রচন্ড শক্তিশালী ছন্ধু সিকদার ওরফে সনু মিয়ার সবকিছুই ছিল। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে দিনমজুর সনু মিয়ার সংসারে আনন্দের কমতি ছিল না। অথচ বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সী দুর্ভল শরীরের সনু মিয়ার বসতভিটা ছাড়া কিছুই নেই। নিসংগতাই তাঁর একমাত্র সম্বল। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের বাঘড়ি বাজার সংলগ্ন একটি ঝুপড়ি ঘরে সনু মিয়া একাকি মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তাইতো অসহায় সনু মিয়া একটু মাথা গোজার ঠাই চায় এ সমাজের কাছে। এভাবেই আর্ধাহারে অনাহারে মৃত্যুর দিন ঘুনছেন তিনি। সহয়সম্বলহীন সনু মিয়া কোনমতে দিনকাটালেও বর্ষার মৌসুমে রাত কাটে দুর্ভোগে। খুপড়ি ঘরের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে সব জায়গায়। নষ্ট হয় ঘরের মালপত্র। জীবনের শেষ দিনগুলো একটু শান্তিতে কাটাতে চান তিনি। তাই এখন সকলের সহযোগীতাই তার একমাত্র সম্বল।

গত ৯ মে বুধবার দুপুরে সনু মিয়ার বাড়িতে কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে রিপন তার বউ-বাচ্চা নিয়ে ঢাকায় থাকে। রিক্সা চালিয়ে কোনমতে সে নিজেই চলে, তার আর খবর নিতে পারেন না। মানুষিক ভারসাম্যহীন একমাত্র মেয়ে থাকে তার স্বামীর বাড়ীতে। দুই বছর আগে স্ত্রী রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তার চিকিৎসায় নিস্ব হয়েছেন তিনি। তাই এখন তিনি কোনমতে একা থাকেন।

আমার খাবার আমাকেই রান্না করে খেতে হয়। কোন দিন খাওয়া হয় কোনদিন হয় না। মাঝে মধ্যে প্রতিবেশীদের দেয়া খাবারে চলে তার পেট। অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই আমার।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখের কোনে কষ্টের অশ্রু জমে সনু মিয়ার। সনু মিয়া আরো বলেন, ‘আমার মত অসংখ্য অসহায় বৃদ্ধ মানুষ রয়েছে দেশে। এই বৃদ্ধদের জন্য সরকারের কিছু করা উচিৎ। শুধুমাত্র বয়স্ক ভাতা দিয়েই সরকার দায়িত্ব শেষ করছে। তাই খোদাই এখন আমার একমাত্র ভরসা।’ সনু মিয়া বলেন, আমার দুরাবস্থার কথা অনেকের কাছেই জানিয়েছি কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’ সনু মিয়ার প্রতিবেশী সাংবাদিক রহিম রেজা বলেন, ‘সনু মিয়ার একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার।

এই বৃদ্ধ মানুষটির জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিৎ।’ তার স্ত্রীর মৃত্যুও পর থেকেই সনু মিয়া একা একা অসহায়ভাবে কোন মতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমান বর্ষার মৌসুমে তিনি অতিকষ্টে রয়েছেন। তার অরক্ষিত ঘরটির বিভিন্ন স্থান থেকে বর্ষায় পানি পড়ে। মঠবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার ও ইউপি সদস্য ফোরক সিকদার জানান, তাকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে অন্যান্য সকল সুযোগ দেয়া হবে। এ বিষয় রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা বেগম পারুল বলেন, ‘সনু মিয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তার বাড়িতে গিয়ে আমরা তার খোজখবর নিচ্ছি।

আমাদের পক্ষে তার আশ্রয়সহ যতটুকু করা সম্ভব, আমরা তা করব।’ ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, ইতোমধ্যে সনু মিয়ার আশ্রয়ের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার আশ্রয়ের জন্য নতুন একটি ঘর নির্মানের উদ্যোগসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।