বাঁশ দিয়ে তৈরি করা চাটাই বিক্রয়ের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে নাটোরের সিংড়া পৌর এলাকার গোডাউন পাড়া মহল্লার প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের মানুষ।
এ মহল্লার বেশির ভাগ মানুষেরই পেশা বাঁশ দিয়ে তৈরি চাটাই শিল্প। বাঁশ দিয়ে তৈরি চাটাই বিক্রির মাধ্যমে গোডাউন পাড়া এলাকার বাসিন্দারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় আড়াইশ পরিবারের মধ্যে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এ পেশাই বেছে নিয়েছে ওই মহল্লার নব্বই ভাগ মানুষ। আর বাড়ির বউ থেকে শুরু করে, স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়ার পাশাপাশি বড়দের কাজে সহযোগিতা করে।
সরেজমিনে ওই মহল্লার গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষ এক সঙ্গে বসে বাঁশ দিয়ে চাটাই তৈরি করছে। এসব চাটাই যাচ্ছে দেশের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বছরের পর বছর তারা বাঁশ দিয়ে চাটাই তৈরির পাশাপাশি ডালি, কুলা, ধান রাখার ডোল, ঘরের চাতাল তৈরি ও মাছ ধরার উপকরণ তৈরি করে।
চাটাই তৈরির কারিগর মিনা, ময়নাসহ বেশ কয়েকজন সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ সময় তারা দলবেঁধে বাড়ির আঙিনায় বসে চাটাই তৈরি করেন । একসঙ্গে বসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরনের খোশগল্পসহ মোবাইলে গান শোনা, রেডিও’র খবর শোনে তারা।
ইসমাঈল হোসেন নামে এক বৃদ্ধ দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে তিনি এ পেশার সাথে জড়িত জানিয়ে বলেন, মাঝারি সাইজের একটি বাঁশ কিনতে এখন ৯০ থেকে ১৩০ টাকা লাগে। প্রতিটি মাঝারি এসব বাঁশ থেকে ১-২টি চাটাই তৈরি করা যায়।
লেখাপড়ার পাশাপাশি বড়দের এ কাজে সহযোগিতা করে বলে জানায় স্থানীয় কলেজের এইচ এস সি ১ম বর্ষের ছাত্রী মুক্তি ইয়াসমিন।
মাজেদা বেগম জানায়, গ্রাহকের চাহিদার প্রয়োজনে বিভিন্ন মাপের চাটাই তৈরি করা হয়। এরমধ্যে ৫ ফুট প্রশন্ত ও ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি চাটাই এখন ১২৫ থেকে ১৩৫ থেকে টাকায় বিক্রয় করেন। ওই মাপের একটি চাটাই তৈরি করতে একটি বাঁশের অর্ধেক অংশ প্রয়োজন এবং একজন শ্রমিকের আধাবেলা সময় লাগে।
আরেক চাটাই কারিগর লুৎফা বেগম জানান, বর্তমানে বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাটাই তৈরিতে খরচ কিছুটা বেশি হচ্ছে। সেই সাথে অর্থের অভাবে তারা চাহিদা মাফিক বাঁশ কিনতে পারছেন না। সরকারি অথবা বেসরকারী পর্যায়ে সঠিক উদ্যোগই পারে চাটাই শিল্প রক্ষা করতে।