হাওর বার্তা ডেস্কঃ নওগাঁর মান্দা উপজেলায় লোকালয়ে গড়ে ওঠা তিন ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় এক হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। শুধু ধান নয় বিষাক্ত গ্যাসে আশপাশের আম, জলপাই, কাঁঠাল ও কলা বাগানসহ অন্যান্য ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বোরো ধানের ফসলের উপর কৃষকদের সারা বছরের ভরণপোষণ নির্ভর করে। এবছরও মাঠভরা সোনালী ধানের স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। আর কয়েকদিন পর বোরো ফসল ঘরে ওঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ফসল নষ্ট হওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। দূর থেকে দেখলে ধানগুলো পাকা মনে হলেও ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ধানগাছ মরে চিটায় পরিণত হয়েছে।
বন্যা পরবর্তী সময়ে এ উপজেলার কৃষকরা তাদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও ইটভাটার কারণে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি উপজেলার মান্দা ইউনিয়নের বিজয়পুর মাঠে এমবিসি ব্রিক্স, পরানপুর ইউনিয়নের শিশইল গ্রামে এসএমএস ব্রিক্স ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মলিকপুর ও শ্রীরামপুর মাঠে পিএম ব্রিক্স ভাটার গ্যাস ছাড়ার ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে। ফলে গত এক সপ্তাহে ইটভাটার আশপাশের প্রায় এক হাজার বিঘা বোরো ফসলি জমির ধানসহ, আম, জলপাই, কাঁঠাল অন্যান্য ফসলাদি নষ্ট হয়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকদের এখন মাথায় হাত। শুধু ফসলই নয়, বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা।
শিশইল গ্রামে লোকালয়ে এসএমএস ব্রিক্স তৈরির আগেই তা বন্ধের জন্য গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ফজলুর রহমান ২০১৬ সালে বগুড়ার পরিবেশ অধিদফতর, নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ইটভাটাটি বন্ধের জন্য প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ইটভাটাটি তৈরি করা হয়। আর এ ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ২০১৭ সালেও ফসলি জমির ধানসহ অন্যান্য ফসলা নষ্ট হয়। কিন্তু তার নায্য ক্ষতিপূরণ আজও পাননি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
এ উপজেলায় ৩৮টি ইটভাটা রয়েছে যার মধ্যে রেজিস্ট্রেশন আছে মাত্র ১০টির। আর বাকিগুলো প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই চালাতে হচ্ছে। গত দু’বছরে এ উপজেলায় সাতটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর যেসব ইটভাটার কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা অপরিকল্পিতভাবে লোকালয়ে গড়ে ওঠা। প্রতি বছরই এ ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। আর এভাবে চলতে থাকলে এলাকায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে।
কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ওই ইটভাটাটি আমার বাড়ি থেতে প্রায় ৪০ ফুট দূরে। ভাটাটি বন্ধের জন্য পরিবেশ অধিদফতরসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভাটার কালো ধোয়ায় নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।
বীজয়পুর গ্রামের কৃষক ওহেদ বক্স পিয়াদা বলেন, আর কয়েকদিন পর ধানগুলো কাটা হতো। প্রায় আট বিঘা জমির ধান সম্পূর্ণ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি বিঘা আবাদ করতে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর বিঘা প্রতি প্রায় ২২-২৫ মণ ফলন হয়। ফসল নষ্ট হয়ে এখন মাথায় হাত উঠেছে।
মান্দা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম চৌধূরী বলেন, ইটভাটা বন্ধের পরও কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা ফ্যান চালাতে হয়। কিন্তু তা না করায় অসাবধানতাবসত ইটভাটা থেকে এ গ্যাসটা বিষাক্ত গ্যাসে পরিণত হয়। পরে ভাটার চিমনি দিয়ে এ বিষাক্ত গ্যাস নিগর্ত হয়ে আশপাশের ফসলসহ অন্যান্য ফলের ক্ষতি করে। ইটভাটা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হবে। যা ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এরকম ক্ষতি আর না হয় সে ব্যাপারে ইটভাটার মালিকদের গ্যাস ছাড়ার ব্যাপারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, যেসব ইটভাটা অনুমোদনহীন শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা যেন ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পান সেই চেষ্টা অব্যহত আছে।