ঢাকা ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস ৫ আগস্টের পর ভুয়া মামলা তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার হবে, জানালেন নতুন আইজিপি আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির জুয়ার অ্যাপের প্রচারে নাম লেখালেন বুবলীও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত’- তোফায়েল আহমেদ আমরা যা করতে চাই, জনগণকে সাথে নিয়ে করতে চাই : তারেক রহমান বহু নেতার শাসন আমরা দেখেছি, পরিবর্তন দেখিনি : ফয়জুল করীম গ্যাসের জন্য আ.লীগ আমলে ২০ কোটি টাকা ঘুস দিয়েছি : বাণিজ্য উপদেষ্টা

সাব-ইন্সপেক্টর শবনম ‘সব পুলিশ এমন হলে বদলে যেত দেশ’

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৫৫:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮
  • ৩৬১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সেদিন শবনম আক্তার পপির কল সাইন ছিল ‘এপোলো-সিক্স-ওয়ান’। টহল দিচ্ছেন মহাখালি এলাকায়। রুটিন ডিউটি। হঠাৎ ওয়্যারলেসে বার্তা এলো। মহাখালিতে এক্সিডেন্ট হয়েছে। এখনই ছুটতে হবে।

গাড়ি ছুটলো মহাখালির দিকে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন ভয়াবহ পরিস্থিতি। অনেক কটি গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। রাস্তায় উল্টে আছে গাড়ি। পথ বন্ধ। বিরাট বিশৃঙ্খলা।

‘ভিআইপি পরিবহনের বাসটি যখন ফ্লাইওভার থেকে নীচে নামছিল, তখন সেটি ব্রেক ফেল করে সামনের গাড়িতে ধাক্কা মারে। ধাক্কাটা আসলে জোরে-শোরেই ছিল। পরপর দশটি গাড়িতে ধাক্কা লাগে। একটা পিক-আপ ভ্যান উল্টে একজন মারাত্মকভাবে আহত। কয়েকজন মোটর বাইক আরোহীও আহত হয়েছেন’ বলছিলেন তিনি।

দিনটি ছিল ২২ এপ্রিল। সেদিন পুলিশের উপ-পরিদর্শক শবনম আক্তার পপি এরপর যা যা করেছিলেন, সেটিকে তিনি ভেবেছিলেন পুলিশ হিসেবে তাঁর কর্তব্য। কাজের অংশ।

কিন্তু যারা সেদিন ঘটনাটি দেখেছেন, ছবি তুলেছেন এবং সেই ঘটনার কাহিনী এবং ছবি অনলাইনে শেয়ার করেছেন, তাদের কাছে এটি ছিল বিরল এবং অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত।

দেশের পুলিশ বাহিনী যেখানে প্রতিদিন নানা কাজের জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ছে, কিছু পুলিশ সদস্যদের নানা কাণ্ড-কীর্তির কারণে পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, সেখানে শবনম আক্তার পপিকে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আদর্শ’ বা ‘রোল মডেল’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

কী ঘটেছিল সেদিন:

শবনম আক্তার পপির সঙ্গে কথা হয় টেলিফোনে। মহাখালি ফ্লাইওভারের সেই দুর্ঘটনার পর সেদিন সেখানে কী হয়েছিল, নানা প্রশ্নের উত্তরে সবিস্তারে জানিয়েছেন তিনি।

‘ঘটনার গুরুত্ব বুঝে আমি কাছাকাছি আরও যে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন তাদের সাহায্য চাইলাম। ভিআইপি পরিবহনের গাড়িটা বিকল হয়ে পড়ে ছিল একেবারে মাঝ রাস্তায়। এর ফলে সেখানে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। গাড়িটার ব্রেক ফেল করেছিল। কাজেই কিভাবে গাড়িটা সরানো যায়, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। শেষ পর্যন্ত আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি নিজেই গাড়িটা চালিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেব। আমার মনে হয়েছিল তখন যদি আমি দ্রুত গাড়িটা রাস্তা থেকে সরিয়ে না নেই, তাহলে আমার ডিপার্টমেন্টের বদনাম হবে। আর আমার ডিপার্টমেন্ট এই ট্রেনিংটাই দেয় মানুষের সেবা করা, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করা। আমাদের কিন্তু ট্রেনিং এ এটাই শেখানো হয়।’

শবনম আক্তার পপি গাড়ি চালানো শিখেছিলেন নিজের আগ্রহেই। পরে পুলিশ সদস্য হিসেবেও গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। কাজেই বাসটি চালিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি। তবে কিছুটা ভয় কাজ করছিল, যেহেতু বাসটির ব্রেক কাজ করছিল না।

‘কোন গাড়ি যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, তখন একজন ড্রাইভারের অভাবে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হয়। আমার মনে হয়েছিল, পুলিশ হিসেবে আমাকে অনেক সড়ক দুর্ঘটনা হ্যান্ডেল করতে হয়। তখন আমার মনে হয়েছিল গাড়ি চালানো শেখাটা খুব জরুরি।’

যে পিক-আপটি রাস্তায় উল্টে গিয়েছিল, তার ড্রাইভার আহত হয়ে পড়েছিলেন রাস্তায়। ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন। তাকে ফার্ষ্ট এইড দেয়ার কাজেও এগিয়ে গেলেন শবনম আক্তার পপি।

‘তার অবস্থা দেখে আমার বেশ খারাপ লাগছিল। তখন আমি একজনকে টাকা দিয়ে বললাম, আমাকে কিছু বরফের টুকরো এনে দিন। আমি আহত লোকটিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম এই বলে যে আপনার কিছুই হয়নি। আমি পরে তার আঘাতের জায়গাগুলিতে বরফের সেঁক দেই। ’

‘লোকটি বলছিল তার পা বোধ হয় ভেঙ্গে গেছে। তখন আমি গামছা দিয়ে সেখানটা বেঁধে দেই। তখন আমার মনে হচ্ছিল, যদি আমি সেই সময়ে এই প্রাথমিক চিকিৎসটা না দেই, এই পা হয়তো আর ভালোই হবে না।

আহত লোকটিতে এরপর দাঁড়াতে সাহায্য করেন তিনি, হাঁটতে সাহায্য করেন। তারপর একটি গাড়িকে অনুরোধ করে লোকটিকে বাড়িতে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

পুলিশ সদস্য হিসেবে ফার্ষ্ট এইডের প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন শবনম আক্তার পপি। তিনি জানান, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের এখন এসব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পুলিশ এখন অনেক এগিয়ে। আমাদের ড্রাইভিং, ফার্ষ্ট এইড- সব কিছুই শেখানো হয়।

‘রোল মডেল’

বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরেই যেখানে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কাণ্ড-কীর্তি নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে, সেই পটভূমিতে শবনম আক্তার পপির এই ভূমিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।

এই ঘটনার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন অনেকে। সেদিন আহত এক মানুষকে তাঁর ফার্স্ট এইড দেয়ার ঘটনার ছবির নীচে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

রহমান আজিজ নামে একজন তাঁর প্রশংসা করে লিখেছেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু সেটা পপি আপা দেখালেন। তবে সব পুলিশ যদি এমন হতো তবে বদলে যেত দেশ।

হাসান ইমাম নামে একজনের মন্তব্য, শত সহস্র সালাম সেসব পুলিশ সদস্যদের যারা সত্যিকারের পুলিশের সন্মান রেখে জনগণের সেবা করে। এদের কাছ থেকেও তো খারাপ পুলিশরা কিছু শিখতে পারে!!

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার মোস্তাক আহমেদ নিজেও এ নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজন পথচারীর পায়ের শুশ্রুষা করছেন একজন পুলিশ সদস্য। এই ছবি শুধু পুলিশের সেবার কথা বলে না, পরিবর্তনের কথাও বলে। শ্রদ্ধা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে এই শোরগোল কেমন লাগছে শবনম আক্তার পপির? এটিকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন তিনি। আমার স্যার আমাকে নিয়ে ফেসবুকে যে পোস্টটি দিয়েছেন, সেটি আমার অন্তর ছুঁয়ে গেছে।

তবে যে কাজ তিনি সেদিন করেছেন, সেটি যে অসাধারণ কিছু সেটা তিনি মনে করেন না। তার মতে, পুলিশের এই কাজই করার কথা। আমি সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সেবা করার চেষ্টা করি। আর এখন পুলিশের কাজ আমাকে এই কাজ আরও বড় পরিসরে করার সুযোগ করে দিয়েছে। পুলিশের যে নেতিবাচক ভাবমূর্তির কথা সবসময় বলা হয়, তার সঙ্গে একমত নন তিনি।

পুলিশ কিন্তু বেশিরভাগ সময় ভালো কাজ করে। সাদা কাপড়ে ময়লা লাগলে যেমন বেশি চোখে পড়ে, পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ব্যাপারটাও তাই। অন্যায় কিন্তু খুব কমই হয়। আমরা কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেশের মানুষের সেবাতেই নিয়োজিত থাকি। পুলিশ সদস্যদের যে কত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয় তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তার কাজটা অন্য পুলিশ সদস্যদেরও ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করেন শবনম আক্তার পপি। বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন

সাব-ইন্সপেক্টর শবনম ‘সব পুলিশ এমন হলে বদলে যেত দেশ’

আপডেট টাইম : ০৮:৫৫:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সেদিন শবনম আক্তার পপির কল সাইন ছিল ‘এপোলো-সিক্স-ওয়ান’। টহল দিচ্ছেন মহাখালি এলাকায়। রুটিন ডিউটি। হঠাৎ ওয়্যারলেসে বার্তা এলো। মহাখালিতে এক্সিডেন্ট হয়েছে। এখনই ছুটতে হবে।

গাড়ি ছুটলো মহাখালির দিকে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন ভয়াবহ পরিস্থিতি। অনেক কটি গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। রাস্তায় উল্টে আছে গাড়ি। পথ বন্ধ। বিরাট বিশৃঙ্খলা।

‘ভিআইপি পরিবহনের বাসটি যখন ফ্লাইওভার থেকে নীচে নামছিল, তখন সেটি ব্রেক ফেল করে সামনের গাড়িতে ধাক্কা মারে। ধাক্কাটা আসলে জোরে-শোরেই ছিল। পরপর দশটি গাড়িতে ধাক্কা লাগে। একটা পিক-আপ ভ্যান উল্টে একজন মারাত্মকভাবে আহত। কয়েকজন মোটর বাইক আরোহীও আহত হয়েছেন’ বলছিলেন তিনি।

দিনটি ছিল ২২ এপ্রিল। সেদিন পুলিশের উপ-পরিদর্শক শবনম আক্তার পপি এরপর যা যা করেছিলেন, সেটিকে তিনি ভেবেছিলেন পুলিশ হিসেবে তাঁর কর্তব্য। কাজের অংশ।

কিন্তু যারা সেদিন ঘটনাটি দেখেছেন, ছবি তুলেছেন এবং সেই ঘটনার কাহিনী এবং ছবি অনলাইনে শেয়ার করেছেন, তাদের কাছে এটি ছিল বিরল এবং অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত।

দেশের পুলিশ বাহিনী যেখানে প্রতিদিন নানা কাজের জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ছে, কিছু পুলিশ সদস্যদের নানা কাণ্ড-কীর্তির কারণে পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, সেখানে শবনম আক্তার পপিকে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আদর্শ’ বা ‘রোল মডেল’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

কী ঘটেছিল সেদিন:

শবনম আক্তার পপির সঙ্গে কথা হয় টেলিফোনে। মহাখালি ফ্লাইওভারের সেই দুর্ঘটনার পর সেদিন সেখানে কী হয়েছিল, নানা প্রশ্নের উত্তরে সবিস্তারে জানিয়েছেন তিনি।

‘ঘটনার গুরুত্ব বুঝে আমি কাছাকাছি আরও যে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন তাদের সাহায্য চাইলাম। ভিআইপি পরিবহনের গাড়িটা বিকল হয়ে পড়ে ছিল একেবারে মাঝ রাস্তায়। এর ফলে সেখানে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। গাড়িটার ব্রেক ফেল করেছিল। কাজেই কিভাবে গাড়িটা সরানো যায়, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। শেষ পর্যন্ত আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি নিজেই গাড়িটা চালিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেব। আমার মনে হয়েছিল তখন যদি আমি দ্রুত গাড়িটা রাস্তা থেকে সরিয়ে না নেই, তাহলে আমার ডিপার্টমেন্টের বদনাম হবে। আর আমার ডিপার্টমেন্ট এই ট্রেনিংটাই দেয় মানুষের সেবা করা, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করা। আমাদের কিন্তু ট্রেনিং এ এটাই শেখানো হয়।’

শবনম আক্তার পপি গাড়ি চালানো শিখেছিলেন নিজের আগ্রহেই। পরে পুলিশ সদস্য হিসেবেও গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। কাজেই বাসটি চালিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি। তবে কিছুটা ভয় কাজ করছিল, যেহেতু বাসটির ব্রেক কাজ করছিল না।

‘কোন গাড়ি যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, তখন একজন ড্রাইভারের অভাবে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হয়। আমার মনে হয়েছিল, পুলিশ হিসেবে আমাকে অনেক সড়ক দুর্ঘটনা হ্যান্ডেল করতে হয়। তখন আমার মনে হয়েছিল গাড়ি চালানো শেখাটা খুব জরুরি।’

যে পিক-আপটি রাস্তায় উল্টে গিয়েছিল, তার ড্রাইভার আহত হয়ে পড়েছিলেন রাস্তায়। ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন। তাকে ফার্ষ্ট এইড দেয়ার কাজেও এগিয়ে গেলেন শবনম আক্তার পপি।

‘তার অবস্থা দেখে আমার বেশ খারাপ লাগছিল। তখন আমি একজনকে টাকা দিয়ে বললাম, আমাকে কিছু বরফের টুকরো এনে দিন। আমি আহত লোকটিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম এই বলে যে আপনার কিছুই হয়নি। আমি পরে তার আঘাতের জায়গাগুলিতে বরফের সেঁক দেই। ’

‘লোকটি বলছিল তার পা বোধ হয় ভেঙ্গে গেছে। তখন আমি গামছা দিয়ে সেখানটা বেঁধে দেই। তখন আমার মনে হচ্ছিল, যদি আমি সেই সময়ে এই প্রাথমিক চিকিৎসটা না দেই, এই পা হয়তো আর ভালোই হবে না।

আহত লোকটিতে এরপর দাঁড়াতে সাহায্য করেন তিনি, হাঁটতে সাহায্য করেন। তারপর একটি গাড়িকে অনুরোধ করে লোকটিকে বাড়িতে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

পুলিশ সদস্য হিসেবে ফার্ষ্ট এইডের প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন শবনম আক্তার পপি। তিনি জানান, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের এখন এসব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পুলিশ এখন অনেক এগিয়ে। আমাদের ড্রাইভিং, ফার্ষ্ট এইড- সব কিছুই শেখানো হয়।

‘রোল মডেল’

বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরেই যেখানে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কাণ্ড-কীর্তি নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে, সেই পটভূমিতে শবনম আক্তার পপির এই ভূমিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।

এই ঘটনার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন অনেকে। সেদিন আহত এক মানুষকে তাঁর ফার্স্ট এইড দেয়ার ঘটনার ছবির নীচে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

রহমান আজিজ নামে একজন তাঁর প্রশংসা করে লিখেছেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু সেটা পপি আপা দেখালেন। তবে সব পুলিশ যদি এমন হতো তবে বদলে যেত দেশ।

হাসান ইমাম নামে একজনের মন্তব্য, শত সহস্র সালাম সেসব পুলিশ সদস্যদের যারা সত্যিকারের পুলিশের সন্মান রেখে জনগণের সেবা করে। এদের কাছ থেকেও তো খারাপ পুলিশরা কিছু শিখতে পারে!!

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার মোস্তাক আহমেদ নিজেও এ নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজন পথচারীর পায়ের শুশ্রুষা করছেন একজন পুলিশ সদস্য। এই ছবি শুধু পুলিশের সেবার কথা বলে না, পরিবর্তনের কথাও বলে। শ্রদ্ধা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে এই শোরগোল কেমন লাগছে শবনম আক্তার পপির? এটিকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন তিনি। আমার স্যার আমাকে নিয়ে ফেসবুকে যে পোস্টটি দিয়েছেন, সেটি আমার অন্তর ছুঁয়ে গেছে।

তবে যে কাজ তিনি সেদিন করেছেন, সেটি যে অসাধারণ কিছু সেটা তিনি মনে করেন না। তার মতে, পুলিশের এই কাজই করার কথা। আমি সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সেবা করার চেষ্টা করি। আর এখন পুলিশের কাজ আমাকে এই কাজ আরও বড় পরিসরে করার সুযোগ করে দিয়েছে। পুলিশের যে নেতিবাচক ভাবমূর্তির কথা সবসময় বলা হয়, তার সঙ্গে একমত নন তিনি।

পুলিশ কিন্তু বেশিরভাগ সময় ভালো কাজ করে। সাদা কাপড়ে ময়লা লাগলে যেমন বেশি চোখে পড়ে, পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ব্যাপারটাও তাই। অন্যায় কিন্তু খুব কমই হয়। আমরা কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেশের মানুষের সেবাতেই নিয়োজিত থাকি। পুলিশ সদস্যদের যে কত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয় তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তার কাজটা অন্য পুলিশ সদস্যদেরও ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করেন শবনম আক্তার পপি। বিবিসি