হাওর বার্তা ডেস্কঃ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকত্বের সঙ্গে পাসপোর্টের কোনো সম্পর্ক নাই। তবে, দেশের বাইরে গেলে নিজ দেশের পাসপোর্টই নাগরিকত্বের মূল দলিল হিসেবে যেহেতু বিবেচিত হয়; সেহেতু ব্রিটেনে আশ্রয়রত দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান ব্রিটেন সরকারের কাছে তার নিজ দেশের পাসপোর্ট সারেন্ডার করে পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয়) চেয়েছেন। ব্রিটেন সরকার তাকে পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম দিয়েছে কিনা, সেটি আমি জানি না। তবে, যেহেতু তিনি পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন, সেহেতু তিনি আর এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নাগরিক নন। তবে, আগামীতে তিনি যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন না বা হবেন না; সেটিও চূড়ান্ত নয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, এই মুহুর্তে তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক না হলেও জাতিসংঘের ‘মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাক্ট’র আওতায় ব্রিটেনের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের দেওয়া রায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যদিও, এই মুহূর্তে ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি করা নাই। তবে, এই চুক্তি করতে কোনো বাধাও নেই।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ২ লাখ ১ হাজার ১২৫ জনকে সরকারি খরচে মামলা দায়ের করতে আইনজীবী নিয়োগসহ প্রাসঙ্গিক সকল ব্যয় নির্বাহ করতে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ১৫৪ জন নারী, ৯৭ হাজার ৪৪২ জন পুরুষ এবং ৫২৯ জন শিশু।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জুলাই মাস হতে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৯৭ টি (প্রি কেইস+পোস্ট কেইস) বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৬ হাজার ৯১৫ জনকে সরকারি আইনি সহায়তা প্রদান করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষগণের আইনগত দাবী বা পাওনার প্রেক্ষিতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ৮ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯ হাজার ৪৫৪ টাকা আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬ তারিখে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসে সরকারি আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন -১৬৪৩০এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই উক্ত টোল ফ্রি ১৬৪৩০ হেল্পলাইন নম্বরে সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক অসহায় ও সাধারণ মানুষ আইনি পরামর্শ ও তথ্যের জন্য ফোন কল করে যাচ্ছে। বর্তমানে এ কলসেন্টার থেকে অফিস চলাকালীন আইনগত পরামর্শ, তথ্যসেবা ও লিগ্যাল কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা নারী ৭ হাজার ৮৮৫ জন এবং পুরুষ ১৮ হাজার ৩ জন।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত পারিবারিক, দেওয়ানী, ফৌজদারীসহ বিভিন্ন আইনগত বিষয়ে সর্বমোট ৩০ হাজার ৯৪৫ জনকে আইনগত পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৭৮০ জন নারী এবং ১২ হাজার ১৬৫ জন পুরুষ। এছাড়া ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে মার্চ, ২০১৮ পর্যন্ত সুপ্রীম কোর্টে ৭৭১টি মামলা দায়ের ও পরিচালনায় সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদানসহ ৩ হাজার ১৯ জনকে আইনি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে স্থাপিত দু’টি শ্রমিক আইন সহায়তা সেল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ১০ হাজার ৪২৭ জনকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। নোটিশের মাধ্যমে ৪৩৫টি বিরোধ বিকল্প পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি পঁচিশ লাখ একাশি হাজার একশত ঊননব্বই টাকা আদায় করা হয়েছে। এভাবে ২০০৯ থেকে মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত সারাদেশে সর্বমোট ৩ লাখ ৫৯৮ জনকে সরকারি আইনি সেবা প্রদান করা হয়েছে।