ঢাকা ১১:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী ১৪ এপ্রিল বাঙালি বর্ষবরণে প্রস্তুত চারুকলা, প্রতিকৃতি তৈরির ধুম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৪:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৮
  • ৫১৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘আজি নবরূপে সাজিয়ে নাও, পূর্ণ কর প্রাণ/পুরাতন কালো ঝেড়ে ফেলে দাও শুদ্ধ পুষ্প ঘ্রাণ’। দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫। এরই মধ্যে প্রকৃতিতেও যেন লেগেছে নবসাজের প্রস্তুতি। বৃক্ষরাজির শাখা-প্রশাখায় যেন নতুনের আবাহন। ঋতুবৈচিত্রে বৈশাখ মাস দিয়ে শুরু হয় গ্রীষ্মকাল।

আর এ প্রখর বৈশাখের প্রথমদিন অর্থাৎ আগামী ১৪ এপ্রিল বাঙালি বরণ করবে বাংলা নববর্ষ। প্রতিবারের মতো এবারো এ উপলক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নানা তোড়জোর। বিশেষ করে চারুকলা অনুষদে ধুম পড়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য নানান প্রতিকৃতি তৈরির ধুম। চলতি বছর পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে।

এবারের বর্ষবরণ ১৪২৫ উদযাপনের মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্বে রয়েছেন চারুকলা অনুষদের ২০তম (সম্মান) ব্যাচের শিক্ষার্থীরামৌলবাদ, জঙ্গিবাদ আর মনুষ্যত্বের টানাপড়েনে সামাজিক যে অবক্ষয়, এমনই প্রেক্ষাপটে চারুকলা অনুষদ এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

রবিবার সরেজমিনে চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নানা প্রতিকৃতি তৈরিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। একপাশে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন শিল্প কাঠামো নির্মাণের কাজ আর অন্যপাশে চলছে এ আয়োজনের ব্যয় নির্বাহের জন্য জল রঙের ছবি, পুতুল, সরাচিত্র ও মুখোশ বিক্রির কাজ। চারুকলার বর্তমান এমনকি প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও দিন-রাত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন বর্ষবরণ দিনটিকে রাঙিয়ে তুলতে।

গত ১৫ মার্চ ছবি এঁকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কাজের উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতি বছরই নতুন একটি প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়। গত বছর যেমন ছিল ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার ভিন্ন মাত্রা পাবে বলে তাদের আশা।

চারুকলার শিক্ষার্থীর জানায়, এবারো নানা লোক উপাদান থাকবে। লক্ষ্মী সরা, টেপা পুতুল, পাখি- এ রকম নানা কিছু যা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের উপকরণ। এ দেশের ঐতিহ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে- সেসব শিল্পকর্ম আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে। সেই সঙ্গে সরা পেইন্টিং হচ্ছে, ওয়াটার কালার হচ্ছে। সব শিক্ষার্থীই কাজ করছেন।

মঙ্গলের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য চারুশিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছেন বাঘ ও পেঁচা। সঙ্গে থাকবে বিশাল সাইজের রাজা-রানী। এ ছাড়াও এবারের শোভাযাত্রায় রাজা-রানীর সঙ্গে থাকবে তার সেনাপতি, টেপা পুতুল, সূর্যদেবতা। ঐতিহ্যগতভাবে পহেলা বৈশাখের পরদিন ২ বৈশাখ যাত্রাপালা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজক চারুকলার শিক্ষার্থীরা এবার যাত্রাপালার আয়োজন করেছেন। চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এবারের যাত্রাপালার নাম ‘বাগদত্তা’। এছাড়া শোভাযাত্রার সবচেয়ে বড় শিল্প কাঠামো হবে হরিণ। সোনালি রঙের এ হরিণ নিয়ে শোভাযাত্রা করে সবাইকে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

এদিকে চারুকলার জয়নুল গ্যালারির সামনের উন্মুক্ত স্থানে প্রতিবারের মতো এবারও বিক্রি হচ্ছে জলরঙের চিত্রকর্ম ও সরাচিত্র। বড় সরাচিত্র পাত্তয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায়, ছোট সরাচিত্র ২০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। পাখির টেপা পুতুল ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। বাঘ ও পেঁচা এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই শোভাযাত্রা প্রস্তুতি পর্ব সমন্বয় করার জন্য। শিক্ষার্থীদের আঁকা জলরঙের চিত্রকর্ম দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এবং শিক্ষকদের চিত্রকর্ম পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে সর্ব প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। সে বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম এ মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বাঙালির ঐতিহ্য-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক যেন। আর বাঙালির এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ প্রাপ্তিতে চারুকলার সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীসহ দেশবাসীও উচ্ছ্বসিত।

বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো অধরা বা ইন্ট্যানজিবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর সংশ্নিষ্ট আন্তর্জাতিক পর্ষদ বাংলাদেশের সরকারের প্রস্তাবটি অনুমোদন করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আগামী ১৪ এপ্রিল বাঙালি বর্ষবরণে প্রস্তুত চারুকলা, প্রতিকৃতি তৈরির ধুম

আপডেট টাইম : ০৫:০৪:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘আজি নবরূপে সাজিয়ে নাও, পূর্ণ কর প্রাণ/পুরাতন কালো ঝেড়ে ফেলে দাও শুদ্ধ পুষ্প ঘ্রাণ’। দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫। এরই মধ্যে প্রকৃতিতেও যেন লেগেছে নবসাজের প্রস্তুতি। বৃক্ষরাজির শাখা-প্রশাখায় যেন নতুনের আবাহন। ঋতুবৈচিত্রে বৈশাখ মাস দিয়ে শুরু হয় গ্রীষ্মকাল।

আর এ প্রখর বৈশাখের প্রথমদিন অর্থাৎ আগামী ১৪ এপ্রিল বাঙালি বরণ করবে বাংলা নববর্ষ। প্রতিবারের মতো এবারো এ উপলক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নানা তোড়জোর। বিশেষ করে চারুকলা অনুষদে ধুম পড়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য নানান প্রতিকৃতি তৈরির ধুম। চলতি বছর পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে।

এবারের বর্ষবরণ ১৪২৫ উদযাপনের মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্বে রয়েছেন চারুকলা অনুষদের ২০তম (সম্মান) ব্যাচের শিক্ষার্থীরামৌলবাদ, জঙ্গিবাদ আর মনুষ্যত্বের টানাপড়েনে সামাজিক যে অবক্ষয়, এমনই প্রেক্ষাপটে চারুকলা অনুষদ এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

রবিবার সরেজমিনে চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নানা প্রতিকৃতি তৈরিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। একপাশে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন শিল্প কাঠামো নির্মাণের কাজ আর অন্যপাশে চলছে এ আয়োজনের ব্যয় নির্বাহের জন্য জল রঙের ছবি, পুতুল, সরাচিত্র ও মুখোশ বিক্রির কাজ। চারুকলার বর্তমান এমনকি প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও দিন-রাত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন বর্ষবরণ দিনটিকে রাঙিয়ে তুলতে।

গত ১৫ মার্চ ছবি এঁকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কাজের উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতি বছরই নতুন একটি প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়। গত বছর যেমন ছিল ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার ভিন্ন মাত্রা পাবে বলে তাদের আশা।

চারুকলার শিক্ষার্থীর জানায়, এবারো নানা লোক উপাদান থাকবে। লক্ষ্মী সরা, টেপা পুতুল, পাখি- এ রকম নানা কিছু যা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের উপকরণ। এ দেশের ঐতিহ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে- সেসব শিল্পকর্ম আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে। সেই সঙ্গে সরা পেইন্টিং হচ্ছে, ওয়াটার কালার হচ্ছে। সব শিক্ষার্থীই কাজ করছেন।

মঙ্গলের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য চারুশিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছেন বাঘ ও পেঁচা। সঙ্গে থাকবে বিশাল সাইজের রাজা-রানী। এ ছাড়াও এবারের শোভাযাত্রায় রাজা-রানীর সঙ্গে থাকবে তার সেনাপতি, টেপা পুতুল, সূর্যদেবতা। ঐতিহ্যগতভাবে পহেলা বৈশাখের পরদিন ২ বৈশাখ যাত্রাপালা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজক চারুকলার শিক্ষার্থীরা এবার যাত্রাপালার আয়োজন করেছেন। চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এবারের যাত্রাপালার নাম ‘বাগদত্তা’। এছাড়া শোভাযাত্রার সবচেয়ে বড় শিল্প কাঠামো হবে হরিণ। সোনালি রঙের এ হরিণ নিয়ে শোভাযাত্রা করে সবাইকে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

এদিকে চারুকলার জয়নুল গ্যালারির সামনের উন্মুক্ত স্থানে প্রতিবারের মতো এবারও বিক্রি হচ্ছে জলরঙের চিত্রকর্ম ও সরাচিত্র। বড় সরাচিত্র পাত্তয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায়, ছোট সরাচিত্র ২০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। পাখির টেপা পুতুল ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। বাঘ ও পেঁচা এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই শোভাযাত্রা প্রস্তুতি পর্ব সমন্বয় করার জন্য। শিক্ষার্থীদের আঁকা জলরঙের চিত্রকর্ম দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এবং শিক্ষকদের চিত্রকর্ম পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে সর্ব প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। সে বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম এ মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বাঙালির ঐতিহ্য-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক যেন। আর বাঙালির এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ প্রাপ্তিতে চারুকলার সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীসহ দেশবাসীও উচ্ছ্বসিত।

বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো অধরা বা ইন্ট্যানজিবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর সংশ্নিষ্ট আন্তর্জাতিক পর্ষদ বাংলাদেশের সরকারের প্রস্তাবটি অনুমোদন করে।