হাওর বার্তা ডেস্কঃ যুগ যুগ ধরে নৌকাই যেখানে পারাপারের একমাত্র বাহন। নওগাঁর রাণীনগর ও বগুড়া জেলার আদমদীঘি এই দুই উপজেলার সীমানায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রক্তদহ বিল। আর এই বিলের চারপাশ দিয়ে অবস্থিত রাণীনগর উপজেলার বোদলা, পালশা, তেবারিয়া ও কৃষ্ণপুর গ্রামসহ প্রায় ১০টি গ্রাম।
এই গ্রামগুলোতে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছে শত শত মানুষ। আর এই মানুষদের রক্তদহ বিল পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। প্রতিনিয়তই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই জনপদের মানুষদেরকে। তবুও যেন দেখার কেউ নেই। শুধু ব্রিজই সমস্যা নয় পারঘাট থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার মাটির রাস্তা পায়ে হেটে মূল পাকা রাস্তায় উঠতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এই দুর্ভোগ আরও চরমে এসে দাড়ায়। তখন হাঁটু কাদা ভেঙে আসতে হয়।
রাণীনগর ও আদমদীঘি দুই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা জুড়ে অবস্থিত শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রক্তদহ বিল। আর এই বিলের কোলেই অবস্থিত বোদলা-সান্দিড়া পারঘাট। এই ঘাটের অপর প্রান্তে অবস্থিত বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্দিড়া গ্রাম। একটি ব্রিজের অভাবে শত শত বছর ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়ে আছে এই জনপদের মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষার্থী ও রোগীদের। অনেক সময় ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় নৌকার অপেক্ষায়।
বর্তমান সরকারের আমলে সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। দেশের গ্রামীণ জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকার গ্রহণ করছে নানা কর্মসূচি। কিন্তু এখনোও এই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই অবহেলিত জনপদে। রক্তদহ বিলের বোদলা-সান্দিড়া ঘাটে একটি ব্রিজ তৈরি করা হলে এ এলাকার মানুষরা তাদের শত বছরের দুঃখ আর দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবে। খুলে যাবে ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বার। কমে যাবে তাদের ২৫ কিলোমিটার রাস্তার দূরত্ব। স্থানীয়রা মনে করছেন এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মিত হলে সহজ হবে সর্ব সাধারণের যাতায়াত ব্যবস্থা। চরম ভোগান্তির হাত থেকে ছুটি পাবে এই জনপদে বসবাসরত অবহেলিত মানুষরা।
বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই ওই এলাকার ভুক্তভোগি মানুষের মাঝে নেমে আসে দুর্ভোগের ছায়া। পারাপারের জন্য নৌকার অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে সময়মত গন্তব্যস্থানে পৌঁছুতে পারে না কেউ। অনেকে সময় বাঁচাতে গিয়ে পারের নৌকার অপেক্ষা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁতার দিয়ে পার হয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে যখন হাঁটুপানি থাকে তখন নৌকা চলে না হেঁটেই চলাচল করে জনগণ।
এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে ভুক্তভোগীরা স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীদের দ্বারস্থ হয়েও কোন ফল পাচ্ছে না বছরের পর বছর। নির্বাচন এলেই এলাকার চেয়ারম্যান ও এমপি প্রার্থীরা ওই ঘাটে ব্রিজ করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং পরক্ষণে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে না। রাস্তাঘাট ব্রিজ, কালভাটসহ সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন করা হলেও শত বছরের দুর্ভোগের শিকার এই এলাকার মানুষগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি এখনো।
রাণীনগর উপজেলার বোদলা গ্রামের মোঃ মাসুদ রানা, রাসেদ হোসেনসহ আরো অনেকেই জানান, একটি ব্রিজের অভাবে এ পাড়ের মানুষ ওপারে যেতে চরম কষ্ট করতে হয়। এখানে শুধু একটি ব্রিজের কারণে দু-পারের মানুষের মাঝে আত্মীয়তার বন্ধনও তৈরি করতে চায় না। দীর্ঘদিনের আমাদের এই সমস্যা বিষয়ে স্থানীয় এমপিকে অবগত করেছি। বর্তমান সরকারের আমলেই রক্তদহ বিলের বোদলা-সান্দিড়া পারঘাটে একটি ব্রিজ হলে আমাদের দুই পাড়ের মানুষের মাঝে নতুন করে সেতু বন্ধন তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সাইদুর রহমান মিঞা জানান, ব্রিজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবপত্র পাঠানো হয়েছে। আসা করা যায় আগামী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ব্রিজটির বরাদ্দ হবে।
এ ব্যাপারে নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম বলেন, ওই এলাকার মানুষের দাবী পূরণ হতে আর বেশি সময় লাগবে না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। অপরদিকে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোঃ নূরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য জোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রকৌশলী প্রকল্প দিলেই এখানে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।