হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মতো এবার বাংলাদেশি তকমা দিয়ে ‘বাঙালি খেদাও’ মিশন হাতে নিয়েছে ভারতের আসাম রাজ্য। ১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে অথচ তার কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি- এমন প্রায় ৫০ লাখ লোককে বিতাড়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে আসাম সরকার। শনিবার এ মিশনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে।
আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে আসাম সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিমকোর্ট। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, সংখ্যালঘু মুসলিম বিতাড়নে মিয়ানমারের রাখাইনে যেমন রোহিঙ্গা নিধন অভিযান চলেছে, আসামের ‘বাঙালি খেদাও’ মিশনও সেরকমই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। আসামে ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি লোক বাস করে, যার তিন ভাগের এক ভাগই মুসলিম।
বৃহস্পতিবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব লোক ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনের (এনআরসি) কাছে তাদের যথাযথ তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি তাদের ব্যাপারে প্রাথমিক প্রতিবেদন আগামী শনিবার প্রকাশ করতে যাচ্ছে আসাম কর্তৃপক্ষ। বিগত ছয় দশকে এই প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হল। ভারতের এ রাজ্য সরকার বলছে, কারা বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছে তাদের শনাক্ত ও বিতাড়নের জন্য এই নাগরিক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।
এনআরসির কর্মকর্তা প্রতীক হাজেলা, যিনি নাগরিকত্ব শনাক্তকরণের সঙ্গে জড়িত, বুধবার আলজাজিরাকে বলেছেন, শনিবার যে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে তাতে আসামে বসবাসরত প্রায় ৪৮ লাখ লোক তাদের যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে একটি খসড়া নাগরিকত্ব তালিকা প্রকাশ করে আসাম সরকার। আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন আসছে জুনের মধ্যে প্রকাশে আদালতের নির্দেশ রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৬ সালের নির্বাচনে আসামের ক্ষমতায় আসে। এরপর তারা এনআরসির তালিকায় নেই এমন লোকদের বিতাড়নের অঙ্গীকার করে। আসামের অর্থ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা এদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এনআরসির তালিকায় যাদের নাম নেই তাদের অবশ্যই বিতাড়ন করা হবে।’ প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের আগে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হবে। তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আসামে থাকতে দেয়া হবে। কারণ যেসব হিন্দু নিজ দেশে নির্যাতনের স্বীকার তাদের আশ্রয় দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।’
প্রসঙ্গত দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের এই রাজ্যে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়েছে। ১৯৮০ সালে অভিবাসনবিরোধী এক বিক্ষোভে বেশকিছু লোক মারা যায়। এরপর ১৯৮৫ সালে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যারা ওই রাজ্যে প্রবেশ করেছে তারা বিদেশি হিসেবে গণ্য হবে। এদিকে সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। যেখানকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা ১৯৮২ সালে নাগরিক হওয়ার বৈধতা হারিয়েছেন। গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের শিকার হয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পালিয়ে এসেছে।