ঢাকা ১১:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপরূপ বালিহাঁস ক্ষুদ্রতম বুনো হাঁস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৩:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মার্চ ২০১৮
  • ৩১৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাখিটিকে প্রথম দেখি ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের সাতশৈয়া গ্রামে। ছোট্ট সাদাটে কম বয়সী অপরূপ পাখিটিকে দেখে খুব মায়া লেগেছিল। কেমন কাজলটানা মায়াবী চোখ! শীতের সকালে একদিন ফকিরহাট বাজারে এক পাখি বিক্রেতার কাছে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখির সঙ্গে আবাসিক এই পাখিটিকেও বিক্রি করতে দেখে আঁতকে উঠলাম। সেদিন পাখি বিক্রেতার কাছ থেকে পাখিগুলোকে কিনে সাতশৈয়া গ্রামে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম। এদের বহুবার দেখেছি বাইক্কা বিল, টাঙ্গুয়ার হাওর বা রাজশাহীর মোহনপুরে এদের ‘প্রজনন প্রতিবেশ (Breeding Ecology)’ নিয়ে গবেষণা করার সময়। এ বছরের ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি ওদের শেষবার দেখলাম টাঙ্গুয়ার হাওর ও বাইক্কা বিলে।

এরা হলো এ দেশের ক্ষুদ্রতম বালিহাঁস। বেলে হাঁস, ভুলিয়া হাঁস, তুলো হাঁস, বেজোরি হাঁস, আলাকাদ্রা হাঁস বা দীঘৌচ নামেও পরিচিত। খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় এদের ভেড়ার কোট বা ভেড়ার ঢোঁশ নামে ডাকা হয়। এদের ইংরেজি নাম Cotton Pygmy-goose, Cotton Teal, Common Teal, White-bodied Goose Teal বা Quaki Duck। Anatidae পরিবারের এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম nettapus coromandelianus।

দেহের দৈর্ঘ্য ৩২-৩৪ সেমি। গড় ওজন ২৫০ গ্রাম। হাঁসা ও হাঁসির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। হাঁসার মাথার চাঁদি ও পিঠ নীলাভ কালো; সূর্যের আলোতে যা চকচক করে ওঠে, বিশেষ করে ওড়ার সময় যখন ডানা মেলে, তখন মনে হয় যেন নীলচে সবুজ কিছু একটা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। এদের চিবুক, গলা, ঘাড় ও দেহের নিচটা তুলার মতো সাদা। গলায় কালো মালা ও ডানায় সাদা ডোরা দেখা যায়। হাঁসার চোখ লালচে বাদামি ও চঞ্চু কালো। হাঁসির দেহের নিচটা অনুজ্জ্বল ফিকে সাদা, ডানার প্রান্ত সাদা, কালো কাজলের মতো চোখের রেখা। চোখ বাদামি ও চঞ্চু কালচে জলপাই বাদামি। হাঁসা-হাঁসিনির্বিশেষে পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি বা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটা হাঁসির মতো, তবে চোখের রেখা প্রশস্ত।

বালিহাঁস এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। এককালে দেশব্যাপী এদের দেখা যেত। দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এরা জলজ উদ্ভিদভরা হ্রদ, হাওর, বিল, বড় পুকুর ইত্যাদিতে বিচরণ করে। সাধারণত ৫-১৫টির দলে বিচরণ করতে দেখা যায়। তবে বাইক্কা বিলে একবার একটি দলে শ খানেক পাখি দেখেছিলাম। পানিতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদের কচি অংশ, শস্যবীজ, কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট, চিংড়ি ও কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী, ছোট মাছ ইত্যাদি খায়। পতপত শব্দে ডানা ঝাপটে দ্রুত ওড়ে।

জুন-সেপ্টেম্বর প্রজননকাল। সচরাচর পানির ধারেকাছে মরা গাছের কোটরে-ফোকরে বাসা করে। তবে বর্তমানে মানুষের বানানো কৃত্রিম বাসায়ও ডিম পাড়তে দেখা যায়। বাইক্কা বিলে এদের জন্য যে কাঠের বাসা বানানো হয়েছে, তাতে ফি বছর ডিম-বাচ্চা তুলছে। হাঁসি সচরাচর ৬-১২টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে এবং একাই ২২-২৪ দিন তা দিয়ে ছানা ফোটায়। ছানারা বেশ ইঁচড়ে পাকা হয়। ডিম থেকে ফোটার ১২-১৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাসা থেকে লাফিয়ে পানিতে নেমে যায়। আয়ুষ্কাল প্রায় সাত বছর।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অপরূপ বালিহাঁস ক্ষুদ্রতম বুনো হাঁস

আপডেট টাইম : ১১:৫৩:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাখিটিকে প্রথম দেখি ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের সাতশৈয়া গ্রামে। ছোট্ট সাদাটে কম বয়সী অপরূপ পাখিটিকে দেখে খুব মায়া লেগেছিল। কেমন কাজলটানা মায়াবী চোখ! শীতের সকালে একদিন ফকিরহাট বাজারে এক পাখি বিক্রেতার কাছে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখির সঙ্গে আবাসিক এই পাখিটিকেও বিক্রি করতে দেখে আঁতকে উঠলাম। সেদিন পাখি বিক্রেতার কাছ থেকে পাখিগুলোকে কিনে সাতশৈয়া গ্রামে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম। এদের বহুবার দেখেছি বাইক্কা বিল, টাঙ্গুয়ার হাওর বা রাজশাহীর মোহনপুরে এদের ‘প্রজনন প্রতিবেশ (Breeding Ecology)’ নিয়ে গবেষণা করার সময়। এ বছরের ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি ওদের শেষবার দেখলাম টাঙ্গুয়ার হাওর ও বাইক্কা বিলে।

এরা হলো এ দেশের ক্ষুদ্রতম বালিহাঁস। বেলে হাঁস, ভুলিয়া হাঁস, তুলো হাঁস, বেজোরি হাঁস, আলাকাদ্রা হাঁস বা দীঘৌচ নামেও পরিচিত। খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় এদের ভেড়ার কোট বা ভেড়ার ঢোঁশ নামে ডাকা হয়। এদের ইংরেজি নাম Cotton Pygmy-goose, Cotton Teal, Common Teal, White-bodied Goose Teal বা Quaki Duck। Anatidae পরিবারের এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম nettapus coromandelianus।

দেহের দৈর্ঘ্য ৩২-৩৪ সেমি। গড় ওজন ২৫০ গ্রাম। হাঁসা ও হাঁসির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। হাঁসার মাথার চাঁদি ও পিঠ নীলাভ কালো; সূর্যের আলোতে যা চকচক করে ওঠে, বিশেষ করে ওড়ার সময় যখন ডানা মেলে, তখন মনে হয় যেন নীলচে সবুজ কিছু একটা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। এদের চিবুক, গলা, ঘাড় ও দেহের নিচটা তুলার মতো সাদা। গলায় কালো মালা ও ডানায় সাদা ডোরা দেখা যায়। হাঁসার চোখ লালচে বাদামি ও চঞ্চু কালো। হাঁসির দেহের নিচটা অনুজ্জ্বল ফিকে সাদা, ডানার প্রান্ত সাদা, কালো কাজলের মতো চোখের রেখা। চোখ বাদামি ও চঞ্চু কালচে জলপাই বাদামি। হাঁসা-হাঁসিনির্বিশেষে পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি বা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটা হাঁসির মতো, তবে চোখের রেখা প্রশস্ত।

বালিহাঁস এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। এককালে দেশব্যাপী এদের দেখা যেত। দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এরা জলজ উদ্ভিদভরা হ্রদ, হাওর, বিল, বড় পুকুর ইত্যাদিতে বিচরণ করে। সাধারণত ৫-১৫টির দলে বিচরণ করতে দেখা যায়। তবে বাইক্কা বিলে একবার একটি দলে শ খানেক পাখি দেখেছিলাম। পানিতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদের কচি অংশ, শস্যবীজ, কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট, চিংড়ি ও কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী, ছোট মাছ ইত্যাদি খায়। পতপত শব্দে ডানা ঝাপটে দ্রুত ওড়ে।

জুন-সেপ্টেম্বর প্রজননকাল। সচরাচর পানির ধারেকাছে মরা গাছের কোটরে-ফোকরে বাসা করে। তবে বর্তমানে মানুষের বানানো কৃত্রিম বাসায়ও ডিম পাড়তে দেখা যায়। বাইক্কা বিলে এদের জন্য যে কাঠের বাসা বানানো হয়েছে, তাতে ফি বছর ডিম-বাচ্চা তুলছে। হাঁসি সচরাচর ৬-১২টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে এবং একাই ২২-২৪ দিন তা দিয়ে ছানা ফোটায়। ছানারা বেশ ইঁচড়ে পাকা হয়। ডিম থেকে ফোটার ১২-১৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাসা থেকে লাফিয়ে পানিতে নেমে যায়। আয়ুষ্কাল প্রায় সাত বছর।