মুসলিম মেয়েরা সব সময় আড়ালেই থাকে। তাঁদের কাছে ডানা মেলে উড়তে পারার আনন্দটাই আলাদা। আর এমন সুযোগ যদি আসে কোনও গোঁড়া পরিবারের মেয়ের হাতে, তাহলে তো আকাশ ছোঁয়ার আনন্দ বেড়ে যায় কয়েকগুন। ঠিক এমনটাই হয়েছে জামারুদ পারভিনের ক্ষেত্রে। ভারতের উত্তর প্রদেশের বিজনোরে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা জামারুদের।
গোঁড়া মুসলিম পরিবারের মেয়ে হলেও ২১ বছর বয়সী পারভিনকে সব সময়ে অন্য কিছু করার উৎসাহ দিয়েছেন তাঁর মা এবং বাবা। আর ঠিক এই কারণেই আজ জামারুদ পারভিন উবর ট্যাক্সি পরিষেবার একজন ট্যাক্সিচালক।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস কোর্সে বিএ পড়ছেন জামারুদ। পাশাপাশি চলছে দিল্লির রাস্তায় স্টিয়ারিং হাতে যাত্রী পারাপারও। দিল্লির রাস্তায় উবর-এর একমাত্র নারী চালক জামারুদ।
না দিল্লির মতো শহরে এখনও নিশ্চিন্তেই গাড়ি চালান পারভিন। বরং যে শহরে ক্রমাগত ট্যাক্সি চালকদের বিরুদ্ধে নারী যাত্রীদের প্রতি অশালীন ব্যবহারের অভিযোগ আসে, সেখানে মোবাইল অ্যাপে যখন ভেসে আসে ট্রেন্ডি হিজাব পরা পারভিনের মুখ, তখন তৈরি হয় ভরসা।
পুরো বোরখা পরে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হয় বলেই ড্রাইভিংয়ের সময়ে শুধুই নিকাব পরেন তিনি। অবশ্য ভবিষ্যতে উবর চালক নয়, নিজেকে দেখতে চান শিক্ষকের ভূমিকার। এমএ পাশ করে তিনি ইসলামিক স্টাডিজ পড়াতে চান।
পরিবারে মা-বাবা ছাড়াও রয়েছে তিন বোন। এক বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও তারা সবাই একসঙ্গে এক কামরার ঘরে ভাড়া থাকেন। পারভিনের বাবা পেশায় নির্মাণ শ্রমিক এবং এই এক কামরার ঘরে রয়েছেন বিগত ২০ বছর ধরে। স্কুল পাশ করার পরে মায়ের উত্সাহেই জামারুদ পারভিনের গাড়ি চালানো শেখা। তবে সারাদিন মোটেই উবর-এ পাওয়া যায় না পারভিনকে।
সকাল ৭টায় লগইন করেন তিনি। দুপুরে কিছুটা সময় লগঅফ করেন উবর-এর সিস্টেম থেকে। বিকেল ৪ টা নাগাদ আরও একবার লগইন করেন। তবে সন্ধ্যা ৭-৮টার পর আর কোনও ট্রিপ নেন না তিনি।
এই রুটিন মেনেই একদিকে যেমন দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তে পারছেন, তেমনই পরিবারের সঙ্গেও কিছুটা সময় কাটাতে পারছেন। মাসে ১৫ হাজার টাকা রোজগার করে আজ পারভিন শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছেন।
সমাজের চোখরাঙানি ও প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস দেখিয়েছেন জামারুদ পারভিন। জীবনে গতি বড়ই পছন্দ তাঁর। আর তাই তো প্রতি ঘন্টায় ১০০-১২০ কিমি গতিতে হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি চালাতে সব থেকে বেশি ভালোবাসেন তিনি।