ঢাকা ০৫:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বোরো জমিতে সেচাবাদের সংকট নিয়ে কৃষকদের দূর্ভাবনা যথেষ্ঠ বাড়ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মার্চ ২০১৮
  • ৩৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চালের অগ্নিমূল্যের মধ্যে ধানের ন্যায্য দাম না পেলেও কৃষক বোরো আবাদে নতুন রেকর্ড স্থাপন করতে যাচ্ছেন। চলতি রবি মওশুমে সারা দেশে ৪৭ লাখ ২৫হাজার হেক্টর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০২ ভাগ। আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে বোরো আবাদ অব্যাহত থাকবে। ফলে এ সময়ের মধ্যে বোরো আবাদের পরিমান লক্ষ্যমাত্রার ১০৩% অতিক্রম করতে পারে বলে আশাবাদী কৃষি মন্ত্রনালয় ও কৃষি সপ্রসারন অধিদফতর। তবে কোন কোন এলাকায় বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রার ১২৫ভাগের বেশী বলেও জানা গেছে। বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে বোরো আবাদ ১২০%-এর মত। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১২৮% জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বেশ কিছু এলাকাই ইতোমধ্যে উপরিস্থিত পানিসংকট ও ভূগর্ভস্ত পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে। বেশীরভাগ খাল ও নালা শুকিয়ে গেছে। চলতি রবি মওশুমে ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল প্রাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত বোরো ধানের প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৪৮লাখ ৫২হাজার হেক্টর জমিতে। যা ইতোমধ্যে গতবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ লাখ হেক্টর বেশী। ফলে আবহাওয়া অনুকুল থাকলে উৎপাদন ২ কোটি টন পৌছার কথা। যদিও আবহাওয়া বিভাগ থেকে চলতি মাসে সারা দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত যশোরে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি ছাড়া সারা দেশেই ছিল শুষ্ক আবহাওয়া। ফলে এবার বোরো জমিতে সেচাবাদের সংকট নিয়ে কৃষকদের দূর্ভাবনা যথেষ্ঠ বাড়ছে।

গতবছর রবি মওশুমে দেশে প্রায় ৪৭.৯৭ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন করেন কৃষক। ১ কোটি ৯৪ লাখ টন চাল উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে আশাবাদী ছিলেন কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু হাওর এলাকায় ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপশি দেশের কয়েক জেলায় ছত্রাকবাহী ‘বাষ্ট’ রোগের সংক্রমনে শেষ পর্যন্ত ৪৪ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ঘরে তুলে পেরেছেন কৃষক। প্রায় ১৫লাখ টন ক্ষতির পরে বোরো থেকে গতবছর ১ কোটি ৮০ লাখ টনের মত চাল পাবার কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি সার ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন যোগান অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সর্বাধিক মনোনিবেশ করতে হবে। এখন পর্যন্ত সারের তেমন কোন সংকট সৃষ্টি না হলেও বিতরন ব্যবস্থার ত্রটির কারনে দেশের দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুতের কিছু সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিকে সাময়িক ও সহনীয় বলে দাবী করছেন।

চলতি মওশুমে দেশে যে প্রায় ৪৭ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়, তার মধ্যে ‘হাইব্রীড’ জাতের ধান আবাদের লক্ষ ছিল প্রায় ৮লাখ হেক্টর। কৃষি মন্ত্রনালয় হাইব্রীড ধান থেকে প্রতি হেক্টরে ৪.৭৬ টন করে চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। এছাড়া ‘উচ্চফলনশীল বা উফশী’ জাতের ধান আবাদের লক্ষ্য ছিল ৩৯ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরের মত। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে ৩.৯৩ টন চাল। অবশিষ্ট প্রায় ৪০ হাজার হেক্টরের মত স্থানীয় জাতের ধান আবাদের লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। যার প্রায় পুরোটাই দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ হচ্ছে।

চলতি মওশুমে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৩ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় সারে ১২ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় এ অঞ্চলে আরো অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ টন চাল পাবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৬৫হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার হেক্টরের মত।

সারা দেশেই বোরো নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত কৃষককুল। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায় এখনো কিছু বোরো আবাদ চলছে। তবে উত্তরাঞ্চলের আগাম আবাদকৃত কিছু সীমিত এলাকায় বোরো ধানের থোর আসতেও শুরু করেছে। আগামী ১৫মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে বোরো আবাদ অব্যাহত থাকবে। এপ্রিলের মধ্যভাগ থেকে উত্তরাঞ্চলে এবং শেষ ভাগ থেকে দেশের বেশীরভাগ এলাকায়ই বোরো ধান কাটা শুরু হবে। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগন বোরো ধান ঘরে তুলতে শুরু করবেন জুনের প্রথম ভাগ থেকে।

তবে নতুন ধান উঠতে শুরু করার পরে ধানের দাম কোন পর্যায়ে থাকে তার ওপরই নির্ভর করছে কৃষকের ভাগ্য। বাজারে মোটা চালের কেজি এখনো ৪০৪৫ টাকা হলেও গত আমন মওশুমে ধানের মন ছিল ৮শ টাকা থেকে ৯শ টাকার মধ্যেই । যদিও বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী আমন মওশুমে সারা দেশে ধানের দাম ছিল সর্বাধিক। তবুও তা চালের দরের সাথে যথেষ্ঠ অসামঞ্জস্য ছিল।

মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদ ও কৃষকদের মতে এবারো প্রতিমন বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় ৬শ টাকার ওপরেই থাকছে। যার একটি বড় অংশই ব্যয় হচ্ছে সেচ কাজে। বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে সেচ ব্যয় এখনো দক্ষিন ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সর্বাধিক বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদগন। যেখানে বাংলাদেশে ধানের মোট উৎপাদন ব্যয়ের ২৮%ই সেচ ব্যয়, সেখানে থাইল্যান্ডে ৮%। ভিয়েতনামে ৬%। আর ভারতের মরুপ্রবন পাঞ্জাবে ১৩%-এর বেশী নয়। উপরন্তু গত এক দশকে দফায় দফায় ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশে সেচ ব্যয় আরো বেড়েছে দাবী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদদের। অথচ বিদ্যুতায়িত সেচ ব্যবস্থায় ব্যয় কম হবার পরেও ২০০৩ সাল থেকে সেচবাদে বিদ্যুতে সরকার ২৫% ভর্তুকি প্রদান করছে। দেশের সিংহভাগ সেচ ব্যবস্থাই এখনো ডিজেল নির্ভর। সর্বপ্রথম ২০০৭০৮ সালে ডিজেলের ওপর প্রতি শতাংশ জমিতে নগদ আড়াইশ টাকা করে ভর্তুকি প্রদান করা হয়। কিন্তু ২০০৮০৯ সেচ মওশুমে এ কার্যক্রম বন্ধ করে পুনরায় ২০০৯১০ সেচ মওশুমে সেচ কাজে ব্যবহৃত ডিজেলের ওপর ভর্তুকি প্রদান করা হলেও তা আর অব্যাহত রাখা হয়নি।

বোরো ধান বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় নিয়ে গেছে। এ ধান ইতোমধ্যে দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের স্থান দখল করেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি’র মতে, ১৯৬৫-৬৬ সালে দেশে মোট ধানের উৎপাদন ছিল ৭০ লাখ টনের মত। যা ’৭০৭১ সালে প্রায় ১ কোটি টনে উন্নীত হয়। কিন্তু ২০০৮-০৯সালে দেশে ধান উৎপাদন ৩ কোটি ৩৪ লাখ টনে উন্নীত হয়। বর্তমানে দেশে গম ও বিভিন্ন জাতের ধানসহ দানাদার খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি টনের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। যা দেশকে খাদ্যে সয়ম্ভরতার কাছাকাছি পৌছে দিয়েছে।

তবে কৃষক পর্যায়ে ধানের ন্যায্য দর নিশ্চিত করাসহ বিএডিসি থেকে উন্নত বীজের সরবরাহের পাশাপাশি সেচকাজে ডিজেলে ভর্তুকি প্রদান করলে আগামী দিনে দেশে দানাদার খাদ্য ফসলের উৎপাদন বছরে প্রায় ৫ কোটি টনে উন্নীত করা সম্ভব বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বোরো জমিতে সেচাবাদের সংকট নিয়ে কৃষকদের দূর্ভাবনা যথেষ্ঠ বাড়ছে

আপডেট টাইম : ০৬:০৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চালের অগ্নিমূল্যের মধ্যে ধানের ন্যায্য দাম না পেলেও কৃষক বোরো আবাদে নতুন রেকর্ড স্থাপন করতে যাচ্ছেন। চলতি রবি মওশুমে সারা দেশে ৪৭ লাখ ২৫হাজার হেক্টর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০২ ভাগ। আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে বোরো আবাদ অব্যাহত থাকবে। ফলে এ সময়ের মধ্যে বোরো আবাদের পরিমান লক্ষ্যমাত্রার ১০৩% অতিক্রম করতে পারে বলে আশাবাদী কৃষি মন্ত্রনালয় ও কৃষি সপ্রসারন অধিদফতর। তবে কোন কোন এলাকায় বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রার ১২৫ভাগের বেশী বলেও জানা গেছে। বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে বোরো আবাদ ১২০%-এর মত। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১২৮% জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বেশ কিছু এলাকাই ইতোমধ্যে উপরিস্থিত পানিসংকট ও ভূগর্ভস্ত পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে। বেশীরভাগ খাল ও নালা শুকিয়ে গেছে। চলতি রবি মওশুমে ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল প্রাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত বোরো ধানের প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৪৮লাখ ৫২হাজার হেক্টর জমিতে। যা ইতোমধ্যে গতবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ লাখ হেক্টর বেশী। ফলে আবহাওয়া অনুকুল থাকলে উৎপাদন ২ কোটি টন পৌছার কথা। যদিও আবহাওয়া বিভাগ থেকে চলতি মাসে সারা দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত যশোরে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি ছাড়া সারা দেশেই ছিল শুষ্ক আবহাওয়া। ফলে এবার বোরো জমিতে সেচাবাদের সংকট নিয়ে কৃষকদের দূর্ভাবনা যথেষ্ঠ বাড়ছে।

গতবছর রবি মওশুমে দেশে প্রায় ৪৭.৯৭ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন করেন কৃষক। ১ কোটি ৯৪ লাখ টন চাল উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে আশাবাদী ছিলেন কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু হাওর এলাকায় ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপশি দেশের কয়েক জেলায় ছত্রাকবাহী ‘বাষ্ট’ রোগের সংক্রমনে শেষ পর্যন্ত ৪৪ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ঘরে তুলে পেরেছেন কৃষক। প্রায় ১৫লাখ টন ক্ষতির পরে বোরো থেকে গতবছর ১ কোটি ৮০ লাখ টনের মত চাল পাবার কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি সার ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন যোগান অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সর্বাধিক মনোনিবেশ করতে হবে। এখন পর্যন্ত সারের তেমন কোন সংকট সৃষ্টি না হলেও বিতরন ব্যবস্থার ত্রটির কারনে দেশের দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুতের কিছু সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিকে সাময়িক ও সহনীয় বলে দাবী করছেন।

চলতি মওশুমে দেশে যে প্রায় ৪৭ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়, তার মধ্যে ‘হাইব্রীড’ জাতের ধান আবাদের লক্ষ ছিল প্রায় ৮লাখ হেক্টর। কৃষি মন্ত্রনালয় হাইব্রীড ধান থেকে প্রতি হেক্টরে ৪.৭৬ টন করে চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। এছাড়া ‘উচ্চফলনশীল বা উফশী’ জাতের ধান আবাদের লক্ষ্য ছিল ৩৯ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরের মত। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে ৩.৯৩ টন চাল। অবশিষ্ট প্রায় ৪০ হাজার হেক্টরের মত স্থানীয় জাতের ধান আবাদের লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। যার প্রায় পুরোটাই দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ হচ্ছে।

চলতি মওশুমে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৩ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় সারে ১২ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় এ অঞ্চলে আরো অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ টন চাল পাবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৬৫হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার হেক্টরের মত।

সারা দেশেই বোরো নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত কৃষককুল। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায় এখনো কিছু বোরো আবাদ চলছে। তবে উত্তরাঞ্চলের আগাম আবাদকৃত কিছু সীমিত এলাকায় বোরো ধানের থোর আসতেও শুরু করেছে। আগামী ১৫মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে বোরো আবাদ অব্যাহত থাকবে। এপ্রিলের মধ্যভাগ থেকে উত্তরাঞ্চলে এবং শেষ ভাগ থেকে দেশের বেশীরভাগ এলাকায়ই বোরো ধান কাটা শুরু হবে। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগন বোরো ধান ঘরে তুলতে শুরু করবেন জুনের প্রথম ভাগ থেকে।

তবে নতুন ধান উঠতে শুরু করার পরে ধানের দাম কোন পর্যায়ে থাকে তার ওপরই নির্ভর করছে কৃষকের ভাগ্য। বাজারে মোটা চালের কেজি এখনো ৪০৪৫ টাকা হলেও গত আমন মওশুমে ধানের মন ছিল ৮শ টাকা থেকে ৯শ টাকার মধ্যেই । যদিও বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী আমন মওশুমে সারা দেশে ধানের দাম ছিল সর্বাধিক। তবুও তা চালের দরের সাথে যথেষ্ঠ অসামঞ্জস্য ছিল।

মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদ ও কৃষকদের মতে এবারো প্রতিমন বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় ৬শ টাকার ওপরেই থাকছে। যার একটি বড় অংশই ব্যয় হচ্ছে সেচ কাজে। বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে সেচ ব্যয় এখনো দক্ষিন ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সর্বাধিক বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদগন। যেখানে বাংলাদেশে ধানের মোট উৎপাদন ব্যয়ের ২৮%ই সেচ ব্যয়, সেখানে থাইল্যান্ডে ৮%। ভিয়েতনামে ৬%। আর ভারতের মরুপ্রবন পাঞ্জাবে ১৩%-এর বেশী নয়। উপরন্তু গত এক দশকে দফায় দফায় ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশে সেচ ব্যয় আরো বেড়েছে দাবী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদদের। অথচ বিদ্যুতায়িত সেচ ব্যবস্থায় ব্যয় কম হবার পরেও ২০০৩ সাল থেকে সেচবাদে বিদ্যুতে সরকার ২৫% ভর্তুকি প্রদান করছে। দেশের সিংহভাগ সেচ ব্যবস্থাই এখনো ডিজেল নির্ভর। সর্বপ্রথম ২০০৭০৮ সালে ডিজেলের ওপর প্রতি শতাংশ জমিতে নগদ আড়াইশ টাকা করে ভর্তুকি প্রদান করা হয়। কিন্তু ২০০৮০৯ সেচ মওশুমে এ কার্যক্রম বন্ধ করে পুনরায় ২০০৯১০ সেচ মওশুমে সেচ কাজে ব্যবহৃত ডিজেলের ওপর ভর্তুকি প্রদান করা হলেও তা আর অব্যাহত রাখা হয়নি।

বোরো ধান বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় নিয়ে গেছে। এ ধান ইতোমধ্যে দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের স্থান দখল করেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি’র মতে, ১৯৬৫-৬৬ সালে দেশে মোট ধানের উৎপাদন ছিল ৭০ লাখ টনের মত। যা ’৭০৭১ সালে প্রায় ১ কোটি টনে উন্নীত হয়। কিন্তু ২০০৮-০৯সালে দেশে ধান উৎপাদন ৩ কোটি ৩৪ লাখ টনে উন্নীত হয়। বর্তমানে দেশে গম ও বিভিন্ন জাতের ধানসহ দানাদার খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি টনের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। যা দেশকে খাদ্যে সয়ম্ভরতার কাছাকাছি পৌছে দিয়েছে।

তবে কৃষক পর্যায়ে ধানের ন্যায্য দর নিশ্চিত করাসহ বিএডিসি থেকে উন্নত বীজের সরবরাহের পাশাপাশি সেচকাজে ডিজেলে ভর্তুকি প্রদান করলে আগামী দিনে দেশে দানাদার খাদ্য ফসলের উৎপাদন বছরে প্রায় ৫ কোটি টনে উন্নীত করা সম্ভব বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগন।