প্রশ্ন ফাঁস রোধে সকলের কাছে সহযোগিতা চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রশ্ন ফাঁস রোধে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ,সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের এখন যে পরিস্থিতি তা রোধ করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এজন্য অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ, প্রশ্নফাঁস রোধে শুধু বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেই হবে না, বরং পরীক্ষা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন করতে হবে। আর পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চাইলে অনেক অভিভাবক আছেন, যারা এ পরিবর্তনকে সহজে মেনে নিতে চান না।’

আজ শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এফডিসির এটিএন বাংলার হলরুমে অনুষ্ঠিত ‘বিতর্ক বিকাশ-গ্র্যান্ড ফাইনাল, যুক্তির আলোয় খুঁজি মানুষের মুক্তি’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষার্থীদের চিন্তন-দক্ষতা ও সৃজনশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি, এটিএন বাংলা ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ৮৮০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ বছর নবম জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ১৭ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিতর্ক বিকাশ ২০১৭ এর গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন,  এটিএন বাংলার উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান) ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব নওয়াজেশ আলী খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫ সালে আমরা যখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রশ্নপত্রে এমসিকিউতে ১০ নম্বর কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিই, তখন অনেক অভিভাবক এতে মনক্ষুণ্ন হন। কারণ হিসেবে তারা আমাকে জানিয়েছেন, এতে তাদের সন্তানরা জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।’

তিনি অভিভাবকদের প্রতি তাদের সন্তানদের কাছ থেকে ভালো ফলাফলের চেয়ে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন ভালা মানুষ গড়ে তোলার ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে আরো কঠোর হব। এতে প্রশ্নপত্র পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলেও আগামী বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রশ্নপত্র পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করব। তবে সবকিছু হবে শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে।’

তিনি জানান, এবারের মাধ্যমিক ও সমমনা পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বিপরীতে মামলা হয়েছে ৫২টি।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন প্রশ্নফাঁসকে ‘মানসিক যন্ত্রণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এটা থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে হবেই। এজন্য কোচিং সেন্টার, টিউশনি বন্ধে আমরা শিগগিরই আইন করতে যাচ্ছি। এটা নিয়ে একটা কমিটি কাজ করছে। এই কাজটা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।’

তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সঙ্গে সারা দেশের প্রায় ১ লাখ লোক কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকেন। এর মধ্যে যদি একজনও অসৎ থেকে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে বাকিদের সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। তাই আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় একজনও যাতে প্রশ্ন ফাঁস না করতে পারেন সে ব্যবস্থা অবশ্যই আমরা নিব।’

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে এ খাতে আরো বাজেট বাড়ানোর জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর