হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ র্যাংকিংয়ে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ দেশের সেরা মহিলা কলেজ নির্বাচিত হয়েছে। গেল ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সেরা মহিলা কলেজ স্বীকৃতি সনদ গ্রহণ করেন সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আকতার। এ সম্মাননা প্রদানের ক্ষেত্রে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষার পরিবেশ, পরীক্ষার ফলাফল, শিক্ষকম-লীর দক্ষতা, শিক্ষা অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ, শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রম, গ্রন্থাগার, প্রকাশনা প্রভৃতি বিবেচনা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এ ধরনের অনন্য সনদ অর্জন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। এ ধরনের বিরল স্বীকৃতি নারীর ক্ষমতায়নে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের ভূমিকাকে আরও জোরদার করবে।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ১৪৮, নিউ বেইলি রোডে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একটি অনন্য ও অসাধারণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নারী শিক্ষা সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। মাত্র ৪২ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ উচ্চমাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ৫০০ ছাত্রীর কলকাকলিতে মুখরিত কলেজটি। ১০ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে রয়েছে প্রশাসনিক ভবনসহ সুসজ্জিত ১০টি ভবন। কলেজে রয়েছে শিক্ষার মনোরম পরিবেশ, অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, সুবিশাল সেমিনার, চারটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি এবং যুগোপযোগী পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিসহ অত্যাধুনিক ল্যাব, ছাত্রী কমনরুমসহ প্রশস্ত খেলার মাঠ, শহীদ মিনার এবং দৃষ্টিনন্দন পুকুর ও। ছাত্রীদের জন্য রয়েছে একটি ছাত্রী হোস্টেল।
কলেজের সফলতা নিয়ে অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আকতার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে শতভাগ পাসের রেকর্ড অর্জনসহ বোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় ছাত্রীরা পর্যায়ক্রমে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আমাদের ছাত্রীরা অর্জন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের Vice Chancellor Award|
আমাদের এ ফলাফলের পেছনে রয়েছে কলেজের মেধাবী ও দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের নিরলস পরিশ্রম, নিবেদিত পাঠদান এবং আন্তরিক সহযোগিতা, ছাত্রীদের অধ্যয়ন মনস্কতা ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর অদম্য ইচ্ছা এবং অভিভাবকদের সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ ও আন্তরিকতা।
আমাদের সব সফলতার নেপথ্যে আছেন দীর্ঘ ৫০ বছরে এ কলেজে পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত গভর্নিং বডির সভাপতিরাসহ সব সদস্য। তাদের আন্তরিক সহযোগিতা, সুচিন্তিত মতামত, সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও সুদক্ষ পরিচালনায় কলেজ অর্জন করছে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি। কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি এএস মাহমুদ, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রীরা বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে জাতীয় পর্যায়ে কলেজের সুনাম অক্ষুণ রেখেছে। নিয়মিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় দিবসগুলোতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্ক সংঘ, বাংলাভাষা সংঘ, বিজ্ঞান পরিষদ,English Language Clubএর উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের রয়েছে B N C C রোভার স্কাউট, গার্ল গাইড ইউনিট।
ছাত্রী এবং শিক্ষকদের সৃজনশীল মেধা বিকাশের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের অAcademic Journal (ISSN 1818-9318)এ বিভিন্ন গবেষণাধর্মী লেখা প্রকাশিত হয়। এছাড়া কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘গতি’ নিয়মিত প্রকাশ করা হয়। ছাত্রীদের ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোর্স ও Computer Course এ বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ এবং সার্টিফিকেট প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।
আমরা শিক্ষকদের বছরে দুইবার সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, পাঠদান পদ্ধতি, ডিজিটাল কনটেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখেছি, যা আমাদের শিক্ষকদের ICT Based Education Developকরছে, Professional Networking এবংSkill Development করতে সাহায্য করছে।
অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আকতার আরও বলেন, কলেজকে নিত্যনতুন রূপে সজ্জিত করতে প্রতি বছরই নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি আমরা। আমাদের প্রশাসন গতিশীল, একাডেমিক কার্যক্রম গুণগতমানসম্পন্ন। বর্তমান যুগ জ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বমানের শিক্ষায় সমৃদ্ধ হোক আমাদের ছাত্রীরা। বর্তমান সময়ে শিক্ষায় বিনিয়োগ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। সরকারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই চলছে কলেজের প্রতিটি কার্যক্রম। এছাড়া আমাদের রয়েছে সততা সংঘ, মাদকবিরোধী সংগঠন, দুর্নীতিবিরোধী কমিটি, যা ছাত্রীদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
প্রতি বছর এসব কমিটির উদ্যোগে জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, যৌন হয়রানি বিরোধী বিভিন্ন শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বৃত্তিমূলক শিক্ষা, যেমন কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেসন, ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া ব্লক, বাটিক অ্যান্ড প্রিন্টিং, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন, বিল্ডিং অ্যান্ড আর্কিটেকচারাল ড্রাফটিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
একটি সুশিক্ষিত নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনের সুন্দর প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মেধায়-মননে-শিক্ষায় একজন আদর্শ নাগরিক তৈরির লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে মানবসম্পদ তৈরির প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শিখিয়েছি জীবনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে, স্বপ্নকে লালন করতে, জীবনের পরিকল্পনা করতে, জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে, বিশ্বায়নের যুগে প্রতিটি মেয়েকেGlobal Village এর অন্তর্ভুক্ত করতে। শিখিয়েছি সব বাধা ভুলে এগিয়ে যেতে, আমরা অনগ্রসরকে করেছি অগ্রসর। আমরা আমাদের মেয়েদের জ্ঞানের সাগরে প্রবেশ করে জ্ঞান আহরণের পদ্ধতি শিখিয়েছি। শিখিয়েছি জ্ঞানের সঙ্গে জীবনের সমন্বয় ঘটাতে। কেননা Education does not necessarily mean acquisition of degrees and diplomas, it means how to train a man to live worthy.
আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রীদের Attitudeপরিবর্তন করা, Skill Development এবং Knowledge বৃদ্ধি করা। আমরা চাই ছাত্রীরা শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মক্ষেত্রে সফল মানুষ হবে। শিক্ষা হবে আন্তর্জাতিক মানের। ছাত্রীদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এবং ছাত্রীরা মানবসম্পদে পরিণত হবে। বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এবং ২০৪১ এ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অনুযায়ী আমরা আমাদের নারীদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার দৃঢ়প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আকতার পরিশেষে বলেন একতা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা আর শিক্ষার মৌলিক আবেদন নিয়ে নৈতিক-মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মেধাবী জনশক্তি তৈরিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের ছিল গৌরবময় অতীত, আছে সমৃদ্ধ বর্তমান এবং আমরা সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করছি। আমাদের প্রত্যাশা অনেক। সব প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমন্বয় ঘটুক।