ঢাকা ১১:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ায় আখের জমিতে তামাকের চাষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৬:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ৩৫০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুষ্টিয়ায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বিষবৃক্ষ তামাকের চাষ। এতে কমে আসছে চিনির কাঁচামাল আখের যোগান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধান, গম, পাট, আখ ও ভুট্টার চেয়ে পরিশ্রম বেশি হওয়া সত্ত্বেও দাম ভালো পাওয়ায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে আখের ফলন।

কুষ্টিয়ার তামাক চাষ বেশি হচ্ছে এমন এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট কৃষক এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অধিকাংশ জমিতেই তামাকের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে দৌলতপুরে ও মিরপুর সবার চেয়ে এগিয়ে। এখানকার উৎপাদিত তামাক উৎকৃষ্ট মানের হওয়ায় বড় বড় তামাক উৎপাদনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী, বিড়ি, সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো এই এলাকায় জেঁকে বসেছে।

এলাকায় গেলে যেদিকেই তাকানো যায় মাঠের পর মাঠ শুধু তামাকের গাছ। তবে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই খোদ কৃষি অফিসে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলায় সর্বমোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৭৮ হেক্টর।

আর তামাক কোম্পানিগুলোর তথ্যমতে, গতবছর তামাকের চাষ হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর কুষ্টিয়া অঞ্চলে আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় ৯ হাজার হেক্টর, ঢাকা টোব্যাকো ১৫ হাজার হেক্টর, জামিল টোব্যাকো ১২শ’ হেক্টর এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছে।

এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরো ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে, যা মোট আবাদি জমির অধের্কের বেশি।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তামাক চাষি আব্দুল জলিল বলেন, তামাকে খুব অল্প সময়ে বেশি টাকা পাওয়া যায়। আমি গতবছর দুই বিঘা জমিতে চামাক চাষ করে এক লাখ ১৮ হাজার টাকা পেয়েছি। আমার খরচ হয়েছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো। পরিশ্রম বেশি হলে কি হবে নগদ টাকা তো বেশি। সময়ও কম লাগে।

তিনি বলেন, ইক্ষু চাষ করলে জমিতে আর অন্য ফসল করা হয় না। যে জমিতে আখ করবো তার চেয়ে সেই জমিতে তামাকসহ অন্য ফসল করবো।

কুষ্টিয়া সুগার মিল সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুষ্টিয়া জেলায় ৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন।

গত বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছিল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।

কুষ্টিয়া সুগার মিলের আমলা আখ সেন্টারের ইনচার্জ মিনহাজ বলেন, এখানে এখনো মানুষ আখ চাষ করতে চায় না। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আখ চাষ বাড়ানো যায়। আখ না থাকায় স্থানীয়রা কাঠ ফেলে রেখেছে।

যোগাযোগ করা হলে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ তামাক চাষের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায়। তবে আমরা বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে চেষ্টা করছি কিভাবে তামাক চাষ কমানো যায়।

এই কর্মকর্তা বলেন, আখ দীর্ঘমেয়াদী ফসল হওয়ায় কৃষকরা এটা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। কেননা কৃষক সেই সময় তিনটি ফসল চাষ করতে পারছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কুষ্টিয়ায় আখের জমিতে তামাকের চাষ

আপডেট টাইম : ০৫:০৬:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুষ্টিয়ায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বিষবৃক্ষ তামাকের চাষ। এতে কমে আসছে চিনির কাঁচামাল আখের যোগান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধান, গম, পাট, আখ ও ভুট্টার চেয়ে পরিশ্রম বেশি হওয়া সত্ত্বেও দাম ভালো পাওয়ায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে আখের ফলন।

কুষ্টিয়ার তামাক চাষ বেশি হচ্ছে এমন এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট কৃষক এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অধিকাংশ জমিতেই তামাকের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে দৌলতপুরে ও মিরপুর সবার চেয়ে এগিয়ে। এখানকার উৎপাদিত তামাক উৎকৃষ্ট মানের হওয়ায় বড় বড় তামাক উৎপাদনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী, বিড়ি, সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো এই এলাকায় জেঁকে বসেছে।

এলাকায় গেলে যেদিকেই তাকানো যায় মাঠের পর মাঠ শুধু তামাকের গাছ। তবে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই খোদ কৃষি অফিসে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলায় সর্বমোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৭৮ হেক্টর।

আর তামাক কোম্পানিগুলোর তথ্যমতে, গতবছর তামাকের চাষ হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর কুষ্টিয়া অঞ্চলে আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় ৯ হাজার হেক্টর, ঢাকা টোব্যাকো ১৫ হাজার হেক্টর, জামিল টোব্যাকো ১২শ’ হেক্টর এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছে।

এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরো ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে, যা মোট আবাদি জমির অধের্কের বেশি।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তামাক চাষি আব্দুল জলিল বলেন, তামাকে খুব অল্প সময়ে বেশি টাকা পাওয়া যায়। আমি গতবছর দুই বিঘা জমিতে চামাক চাষ করে এক লাখ ১৮ হাজার টাকা পেয়েছি। আমার খরচ হয়েছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো। পরিশ্রম বেশি হলে কি হবে নগদ টাকা তো বেশি। সময়ও কম লাগে।

তিনি বলেন, ইক্ষু চাষ করলে জমিতে আর অন্য ফসল করা হয় না। যে জমিতে আখ করবো তার চেয়ে সেই জমিতে তামাকসহ অন্য ফসল করবো।

কুষ্টিয়া সুগার মিল সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুষ্টিয়া জেলায় ৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন।

গত বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছিল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।

কুষ্টিয়া সুগার মিলের আমলা আখ সেন্টারের ইনচার্জ মিনহাজ বলেন, এখানে এখনো মানুষ আখ চাষ করতে চায় না। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আখ চাষ বাড়ানো যায়। আখ না থাকায় স্থানীয়রা কাঠ ফেলে রেখেছে।

যোগাযোগ করা হলে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ তামাক চাষের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায়। তবে আমরা বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে চেষ্টা করছি কিভাবে তামাক চাষ কমানো যায়।

এই কর্মকর্তা বলেন, আখ দীর্ঘমেয়াদী ফসল হওয়ায় কৃষকরা এটা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। কেননা কৃষক সেই সময় তিনটি ফসল চাষ করতে পারছে।