হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব বণ্টন, ইউনিফর্ম বিতরণ, গ্রামভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণ, সম্মানী ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে খুশি করতে হয়। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা আনসার-ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আরা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া তিনি কোনো কাজই করেন না। এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলার বরাটিয়া গ্রামের কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি ইউএনওর কাছে একই ধরনের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আরো ১৮ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী আনসার-ভিডিপি সদস্যরা জানান, রওশন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। গত ১ থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত (১০ দিন) একটি গ্রামভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণ হয় পাকুন্দিয়া পৌরসভা এলাকার বরাটিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের বাড়িতে। এতে দুটি প্লাটুনে ৩২ জন নারী ও ৩২ জন পুরুষ অংশ নেন। প্রশিক্ষণটি উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রশিক্ষণে প্রতিজনের জন্য এক হাজার টাকা করে মোট ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও তাঁরা প্রশিক্ষণ ভাতা ও সনদ পাননি। এর কয়েক দিন আগে বুরুদিয়া ইউনিয়নের বেলদি গ্রামে একই ধরনের প্রশিক্ষণ হয়। সেখানেও প্রশিক্ষণার্থীরা ভাতার পুরো টাকা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এই কর্মকর্তা বিভিন্ন অজুহাতে অর্ধেক টাকা কেটে রেখে অর্ধেক টাকা দিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবে থাকলেও কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাকুন্দিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৬৪০ জন সক্রিয় আনসার ও ভিডিপি সদস্য রয়েছেন। তা ছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিন্তু সক্রিয় নয়, এমন সদস্যও রয়েছেন হাজারখানেক। তাঁদের নির্বাচনসহ পূজা-পার্বণে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিদিনের দায়িত্ব বাবদ পদবিভেদে পারিশ্রমিক হিসেবে তাঁদের ৩৭০ ও ৩৫০ টাকা করে দেওয়ার সরকারি নিয়ম রয়েছে।
আনসার-ভিডিপি সদস্যদের অভিযোগ, গত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসহ উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়ার সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন কর্মকর্তা। যেসব সদস্য টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে প্রশিক্ষণবিহীন লোকদের দায়িত্ব দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, পুরুষ ও নারী আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সরকার যে পোশাক বরাদ্দ দেয়, সেখান থেকেও ঘুষ নেন। এই কর্মকর্তার বাড়ি পাশের হোসেনপুর উপজেলায়। অনেক সময় তিনি তাঁর এলাকার লোকজনকে বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালন করান, যা নিয়মের মধ্যে পড়ে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘুষ না দেওয়ায় এখনো আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের ইউনিফর্মগুলো দেওয়া হয়নি। গ্রামভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন তিনি। দলনেতা ও নেত্রীদের মাসিক ভাতা প্রতি মাসে না দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায়ের জন্য দু-তিন মাস পর পর দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া তিনি অফিসে নিয়মিত আসেন না।
এ বিষয়ে বরাটিয়া গ্রামের প্রশিক্ষণার্থী আবু হানিফ, মামুনুর রশিদ ও মাহফুজ অভিযোগ করে বলেন, ৬৪ জনের প্রশিক্ষণ ভাতা ও সনদপত্র ২২ দিন চলে গেলেও দেওয়া হয়নি। তাঁরা গত সোমবার কর্মকর্তার কাছে গেলে উল্টো গালাগালি করে অফিস থেকে বের করে দেন।
উপজেলা আনসারের কম্পানি কমান্ডার মো. শেখ ফরিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘কর্মকর্তার অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমাকে আর কোনো কাজ দেন না। ফলে কমান্ডার হিসেবে যে সম্মানীটুকু পেতাম, তা আর পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে উপজেলা আনসার-ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আরা বেগমের মুঠোফোনে গত বুধবার বারবার কল করলেও রিসিভ করেননি।
পাকুন্দিয়ার ইউএনও অন্নপূর্ণা দেবনাথ বলেন, ‘আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা একজন বেপরোয়া স্বভাবের। কারো কথা শোনেন না। বিষয়টি নিয়ে জেলা কর্মকর্তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।’
কিশোরগঞ্জ জেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি। কথা হলো, এই মহিলার চাকরিও বেশিদিন নেই। তাই কী করব বুঝতে পারছি না। আমি বর্তমানে সরকারি কাজে জেলার বাইরে থাকায় এ মুহূর্তে কিছু করতে পারছি না। ফিরে গিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করব। অভিযোগ সত্য হলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।