ঢাকা ০৩:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা আকৃষ্ট হচ্ছে তামাক চাষে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৩:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ২৮৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নীলফামারীসহ রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও জেলাগুলোতে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া কারণে দিনের পর দিন তামাকের চাষ বেড়েই চলেছে।

তামাক কোম্পানিগুলোর দেওয়া সুবিধার কারণে দিনের পর দিন তামাকের চাষ বেড়েই চলেছে নীলফামারীতে। রবিশস্যের বদলে তামাক চাষের প্রতি ঝুঁকছেন চাষিরা। শুধু নীলফামারী নয়, তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ- বিনামূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাকের ক্ষেতে মাঠে কাজ করছেন নারী ও শিশুরাও।

জানা যায়- নীলফামারী জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও জেলা সদরে মাঠের পর মাঠজুড়ে চাষ হচ্ছে ‘বিষবৃক্ষ’ তামাকের। যেদিকে তাকানো যায় শুধুই তামাকের ক্ষেত। রবিশস্যের চাষ বাদ দিয়ে কৃষকরা আকৃষ্ট হচ্ছে তামাক চাষে।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হলেও বিড়ি কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। গ্রামের বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে তামাকের চাষ বেড়েই চলেছে।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১৬-১৭ সালে জেলার ৬ উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। পরের বছর ২০১৭-১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তা বেড়ে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।

নীলফামারীর তামাকের ক্ষেত তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এ তথ্য নাকচ করেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা। তারা বলেন, ‘জেলায় আগের বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ পরিমাণ ফসলি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।’

তারা আরো জানান, ‘অর্থ সংকটে থাকেন গ্রামগঞ্জের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো ওই সব চাষিদের তামাক চাষে উৎসাহিত করেন এবং তাদের মধ্যে কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে তামাকের সার ও বীজ সরবারহ করে থাকেন। ফলে তামাক চাষ বেড়েই চলেছে।’

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ছাড়াও শর্ত ছাড়া নগদ অর্থ প্রদানসহ কোম্পানির নিজস্ব সুপারভাইজাররা প্রতিনিয়ত তামাক চাষিদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এদিকে কোম্পানিগুলো তামাক ক্রয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিয়তাও দিয়ে থাকে।

মূলত এ কারণেই তামাক চাষ স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর হলেও (জেনেও) অধিক মুনাফা লাভের আশায় মাঘের শীতকে উপেক্ষা করেও তামাক ক্ষেতে কাজ করছেন নারীসহ শিশুরাও।

সদরের রামনগর ইউনিয়নের রামনগর দোলাপাড়া গ্রামের চাষি শফিয়ার রহমান ও ফরমান আলী নতুন সময়কে বলেন, ‘তামাক চাষের জন্য কোম্পানিগুলো অগ্রিম ঋণে সার ও নগদ অর্থ দিয়ে থাকেন এবং ক্রয়ের শতভাগ নিশ্চিয়তা দেয়। তাই আমরা তামাক চাষ করি।’

চাষি শফিয়ার রহমান বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় ৭ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় তামাকের ফলন হয় ৬ থেকে ৭ মণ। কোম্পানিগুলো প্রতিমণ তামাক ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায় ক্রয় করে।’

এ বিষয়ে কৃষকরা বলেন, ‘সরকার যদি কোম্পানিগুলোর মতো বিনা শর্তে ঋণসহ ফসল ক্রয়ের নিশ্চিয়তা দেন, তাহলে তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে ধান, ভুট্টা, গম, আলু, সরিষাসহ অন্য ফসল চাষ করবেন এলাকার কৃষকরা।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা আকৃষ্ট হচ্ছে তামাক চাষে

আপডেট টাইম : ১২:৪৩:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নীলফামারীসহ রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও জেলাগুলোতে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া কারণে দিনের পর দিন তামাকের চাষ বেড়েই চলেছে।

তামাক কোম্পানিগুলোর দেওয়া সুবিধার কারণে দিনের পর দিন তামাকের চাষ বেড়েই চলেছে নীলফামারীতে। রবিশস্যের বদলে তামাক চাষের প্রতি ঝুঁকছেন চাষিরা। শুধু নীলফামারী নয়, তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ- বিনামূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাকের ক্ষেতে মাঠে কাজ করছেন নারী ও শিশুরাও।

জানা যায়- নীলফামারী জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও জেলা সদরে মাঠের পর মাঠজুড়ে চাষ হচ্ছে ‘বিষবৃক্ষ’ তামাকের। যেদিকে তাকানো যায় শুধুই তামাকের ক্ষেত। রবিশস্যের চাষ বাদ দিয়ে কৃষকরা আকৃষ্ট হচ্ছে তামাক চাষে।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হলেও বিড়ি কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। গ্রামের বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে তামাকের চাষ বেড়েই চলেছে।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১৬-১৭ সালে জেলার ৬ উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। পরের বছর ২০১৭-১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তা বেড়ে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।

নীলফামারীর তামাকের ক্ষেত তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এ তথ্য নাকচ করেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা। তারা বলেন, ‘জেলায় আগের বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ পরিমাণ ফসলি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।’

তারা আরো জানান, ‘অর্থ সংকটে থাকেন গ্রামগঞ্জের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো ওই সব চাষিদের তামাক চাষে উৎসাহিত করেন এবং তাদের মধ্যে কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে তামাকের সার ও বীজ সরবারহ করে থাকেন। ফলে তামাক চাষ বেড়েই চলেছে।’

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ছাড়াও শর্ত ছাড়া নগদ অর্থ প্রদানসহ কোম্পানির নিজস্ব সুপারভাইজাররা প্রতিনিয়ত তামাক চাষিদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এদিকে কোম্পানিগুলো তামাক ক্রয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিয়তাও দিয়ে থাকে।

মূলত এ কারণেই তামাক চাষ স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর হলেও (জেনেও) অধিক মুনাফা লাভের আশায় মাঘের শীতকে উপেক্ষা করেও তামাক ক্ষেতে কাজ করছেন নারীসহ শিশুরাও।

সদরের রামনগর ইউনিয়নের রামনগর দোলাপাড়া গ্রামের চাষি শফিয়ার রহমান ও ফরমান আলী নতুন সময়কে বলেন, ‘তামাক চাষের জন্য কোম্পানিগুলো অগ্রিম ঋণে সার ও নগদ অর্থ দিয়ে থাকেন এবং ক্রয়ের শতভাগ নিশ্চিয়তা দেয়। তাই আমরা তামাক চাষ করি।’

চাষি শফিয়ার রহমান বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় ৭ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় তামাকের ফলন হয় ৬ থেকে ৭ মণ। কোম্পানিগুলো প্রতিমণ তামাক ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায় ক্রয় করে।’

এ বিষয়ে কৃষকরা বলেন, ‘সরকার যদি কোম্পানিগুলোর মতো বিনা শর্তে ঋণসহ ফসল ক্রয়ের নিশ্চিয়তা দেন, তাহলে তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে ধান, ভুট্টা, গম, আলু, সরিষাসহ অন্য ফসল চাষ করবেন এলাকার কৃষকরা।’