ঢাকা ১২:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ জন তবুও সরকারীকরণের প্রচেষ্টা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৩:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৪০৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্কুলটির প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ জন। আর স্কুলের শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত হাজিরা খাতায় হিসেব রয়েছে ৯৫ জন। খাতা পত্রে শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সাতগাঁও রাবার বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত বশিউক রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাত্র/ছাত্রী বিহীন প্রাথমিক স্কুলকে সরকারীকরণের প্রচেষ্টায় নানা কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্কুলটি জাতীয়করণের কথা বলে বিভিন্ন মহলে ও দপ্তরে খরচের নামে এরই মধ্যে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট একটি মহল নতুন শিক্ষক নিয়োগ ও পুরোনো শিক্ষকদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নে বশিউক সাতগাঁও রাবার বাগানে শ্রমিক কর্মচারীদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য বাগানের একটি ষ্টাফ কোয়ার্টারে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এরপর ১৯৮৭ সালে রাবার শিল্পে বিপর্যয় নেমে এলে ওই সমেয়ে সরকার এই অলাভজনক বাগানটির কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলে। ফলে শিক্ষার্থীর অভাবে বাগান কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে ৪/৫টি শ্রমিক পরিবার সেখানে বসবাস করে আসছে।

২০১১ সালে একটি অসাধু চক্র শিক্ষকদের কাছে অর্থ নিয়ে ৪ কক্ষের কোয়ার্টারের ৩টিতে বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করতে উদ্যোগ নেয়। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকাসহ ৪জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এসময় ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে বাগান কর্তৃপক্ষের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়ে বিদ্যালয়টির সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক রেজিষ্ট্রেশন নেয়া হয়।

কিন্তু দীর্ঘদিনেও স্কুলে শিক্ষার্থীর স্বল্পতা ও নানা অনিয়মের কারণে স্কুলটি সরকারীকরণ হয়নি। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ঠ একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে স্কুল জাতীয়করণ করার কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে শিক্ষকরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এদিকে ওই রাবার বাগানের শ্রমিক সংগগঠনের সহ সভাপতি টেপার (শ্রমিক) মো. আব্দুস সোবহান বিদ্যালয়টি ঘিরে নানা অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে গত ১৮ জানুয়ারী শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। আবদুস সোবহান ওই আবেদনে অভিযোগ করেন রেজিষ্টার্ড বিদ্যালয় হওয়ায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে এলে বাহিরের গুরু ছাগল চড়ানো অছাত্রসহ অন্যান্য স্কুলথেকে শিক্ষার্থী এনে দাঁড় করানো হয়।

আব্দুস সোবহান তার আবেদনে বলেন, এই স্কুলের আশে পাশে ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে আরো ৪টি সরকারী প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ফলে স্কুলে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮/৯জন। সাতগাও রাবার বাগানের কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় এই স্কুলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিরও কোন সম্ভবনা নেই, যে কারণে স্কুলটি সরকারীকরণের নামে রাষ্ট্রিয় অর্থ অপচয় রোধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।

এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতগাঁও রাবার বাগানের বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় রাবার বাগানের একটি আবাসিক ভবনে ছোট একটি সাইন বোর্ড। জীর্ণ শীর্ণ এই ভবন একটি রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় তাও সাইনবোর্ড না দেখে বোঝার উপায় নেই। ৩জন ছেলে মেয়ে বই নিয়ে ভবনটির সামনে খেলাধূলা করছে। কাছে গিয়ে জানা গেল তাদের নাম। সেকুল ইসলাম নামে ছেলেটি ২য় শ্রেণীর ছাত্র আর সাইদুল ইসলাম ও সাদিয়া আক্তার ১ম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রী। সেকুল জানায় সে কোথাও স্কুলে পড়েনি। এখানে এসে ক্লাস টুতে ভর্তি হয়েছে।

আর ছাত্র ছাত্রী কোথায় তারা কখন আসবে জানতে চাইলে সেকুল বলে ‘তারা দুপুরের ভাত খেয়ে আসবে’। এসময় হাজির হন রাবার বাগানের স্থানীয়  মুন্না নামের এক কিশোর। তার কাছে স্কুলের শিক্ষার্থী কতজন জানতে চাইলে সে বলে সব মিলিয়ে ১১জন হবে। শিক্ষিকা ৩জন। মুন্না জানায় শিক্ষিকারা বাইরে থেকে অফিসারা  কেউ আসলে তারা সবাই থাকেন। তিনি বলেন- এমনিতে তারা বেলা ১১টা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলে আসেন আবার বেলা ১টা দেড়টার দিকে চলে যান।

বেলা পৌণে এগারটায় স্কুলে উপস্থিত হন রুজিনা আক্তার। তিনি নিজেকে এই স্কুলের শিক্ষিকা পরিচয় দেন। এসময় ফ্যাগ ষ্ট্যান্ডে জাতীয় পতাকা লাগানোর ফাঁকে রুজিনা আক্তার বলেন, ৪জন শিক্ষিকার মধ্যে একজন মাতৃকালীন ছুটিতে রয়েছেন ২/৩ মাস হলো। প্রধান শিক্ষিকার বাচ্চার অসুখ সে জন্য আসতে দেরী হচ্ছে। অন্যরাও এসে যাবেন। স্কুলের শিক্ষার্থী সংখা কত জানতে চাইলে রুজিনা আক্তার জানান, সব মিলে ৯৫ হবে। এর পর স্কুল শিক্ষিকা রোজিনা আক্তার ছাত্র পাঠিয়ে মোট ১৩জন ছাত্র-ছাত্রী হাজির করেন।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে এ প্রতিবেদক এবছর সবরকারী বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তুক বিতরণের তালিকা দেখতে চাইলে দেখা যায় পুস্তুক বিতরণী রেজিষ্টারে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তির কলামে কোন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর নেই। সব মিলিয়ে ৩ জন শিক্ষার্থীর ছবি থাকলেও বাকি কোন রেজিষ্টারে শিক্ষার্থীদের ছবি বা স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। ভর্তি রেজিষ্টার দেখতে চাইলে ওই শিক্ষিকা জানান এ সম্পর্কে প্রধান শিক্ষিকা ভাল বলতে পারবেন। দৈনিক হাজিরা রেজিষ্টারে দেখা যায় স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ২৭ জানুয়ারীর পর কোন হাজিরার এন্ট্রি করা নেই।

এসময় এ প্রতিবেদক স্কুল প্রাঙ্গন থেকে মুঠো ফোনে প্রধান শিক্ষিকা লুম্বিনী রায় কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘এখন স্কুলে আছেন। কখন এসেছেন জানতে চাইলে উত্তর আসে ‘সেই ৯টা থেকে তিনি স্কুলে অবস্থান করছেন’। তার স্কুলে আজ এখন পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীর উপস্থিত রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ৫০জন আছেন। অথচ প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে ছুটিবিহীন অনুপস্থিত। এসময় স্কুলে দেরীতে আসা অপর শিক্ষিকা রুজিনা আক্তারের কাছে প্রতিবেদকের ফোন ধরিয়ে দিলে প্রধান শিক্ষিকা রোজিনা আক্তারের কাছে জানতে চান তারা কারা, সাংবাদিক কিনা?। পরে লুম্বিনী রায় অকপটে স্বীকার করেন তার বাচ্চার অসুস্থতার জন্য তিনি স্কুলে উপস্থিত  হতে পারেনি’।

ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কত এ নিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিশি রঞ্জন দেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এবিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে প্রায় ১মাস আগে তিনি স্কুলে গিয়ে শিক্ষিকাদের নিয়মিত স্কুলে আসার তাগিদ দিয়ে এসেছিলেন।

এদিকে সাতগাঁও রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, রাবার বাগানের এই স্কুলটি আমাদের কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে এ স্কুল টি আমাদের ব্যবস্থাপনার মধ্যে পড়ে না। গত কয়েকদিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসেছিলেন বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে। এ সময় বাগান ব্যবস্থাপক হিসেবে তাকে ডাকাও হয়নি। কোথাকার ছাত্রছাত্রী-বিদ্যালয়টি কারা চালাচ্ছে কিভাবে চলছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি বিদ্যালয় সরকারীকরণে যেসকল চাহিদা পূরণ করার নিয়ম রয়েছে এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দিনেও তা পূরণ করতে পারেনি। যে কারনে জাতীয়করণে ২য় ধাপে স্কুলটি সরকারীকরণের আবেদন নাকচ হয়। এরপর ৩য় ধাপে সরকারীকরণে সরকারী প্রক্রিয়ায় পরিপত্রপালনে স্কুলটি ব্যর্থ হয়েছে।

স্কুলের অবকাঠামো ও শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় স্কুলটি সরকারীকরণের উপযুক্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেজিষ্টার্ড স্কুলের তালিকা অনুসারে বাছাই কমিটি বাদ পড়া স্কুলগুলি নিয়মিত ভাবে পরিদর্শন করে থাকেন। পরিদর্শনকালে এসব বিবেচনায় নেয়া হয়।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বরাতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলটি পরিদর্শনে গিয়ে স্কুল বন্ধ পান। সর্বশেষ তিনিসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্কুলটি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন সেখানে ১৪/১৫ জন শিক্ষার্থী কে উপস্থিত।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে যে চিত্র দেখেছেন। আমরাও স্কুলটি পরিদর্শনে গিয়ে একই চিত্র দেখেছি। আমি আপনাদের সঙ্গে একমত। এ স্কুলের বিষয়ে সরকার কোনও রিপোর্ট চাইলে আমরাও সেভাবেই রিপোর্ট দিবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ জন তবুও সরকারীকরণের প্রচেষ্টা

আপডেট টাইম : ০৪:৪৩:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্কুলটির প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ জন। আর স্কুলের শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত হাজিরা খাতায় হিসেব রয়েছে ৯৫ জন। খাতা পত্রে শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সাতগাঁও রাবার বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত বশিউক রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাত্র/ছাত্রী বিহীন প্রাথমিক স্কুলকে সরকারীকরণের প্রচেষ্টায় নানা কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্কুলটি জাতীয়করণের কথা বলে বিভিন্ন মহলে ও দপ্তরে খরচের নামে এরই মধ্যে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট একটি মহল নতুন শিক্ষক নিয়োগ ও পুরোনো শিক্ষকদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নে বশিউক সাতগাঁও রাবার বাগানে শ্রমিক কর্মচারীদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য বাগানের একটি ষ্টাফ কোয়ার্টারে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এরপর ১৯৮৭ সালে রাবার শিল্পে বিপর্যয় নেমে এলে ওই সমেয়ে সরকার এই অলাভজনক বাগানটির কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলে। ফলে শিক্ষার্থীর অভাবে বাগান কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে ৪/৫টি শ্রমিক পরিবার সেখানে বসবাস করে আসছে।

২০১১ সালে একটি অসাধু চক্র শিক্ষকদের কাছে অর্থ নিয়ে ৪ কক্ষের কোয়ার্টারের ৩টিতে বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করতে উদ্যোগ নেয়। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকাসহ ৪জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এসময় ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে বাগান কর্তৃপক্ষের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়ে বিদ্যালয়টির সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক রেজিষ্ট্রেশন নেয়া হয়।

কিন্তু দীর্ঘদিনেও স্কুলে শিক্ষার্থীর স্বল্পতা ও নানা অনিয়মের কারণে স্কুলটি সরকারীকরণ হয়নি। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ঠ একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে স্কুল জাতীয়করণ করার কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে শিক্ষকরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এদিকে ওই রাবার বাগানের শ্রমিক সংগগঠনের সহ সভাপতি টেপার (শ্রমিক) মো. আব্দুস সোবহান বিদ্যালয়টি ঘিরে নানা অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে গত ১৮ জানুয়ারী শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। আবদুস সোবহান ওই আবেদনে অভিযোগ করেন রেজিষ্টার্ড বিদ্যালয় হওয়ায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে এলে বাহিরের গুরু ছাগল চড়ানো অছাত্রসহ অন্যান্য স্কুলথেকে শিক্ষার্থী এনে দাঁড় করানো হয়।

আব্দুস সোবহান তার আবেদনে বলেন, এই স্কুলের আশে পাশে ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে আরো ৪টি সরকারী প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ফলে স্কুলে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮/৯জন। সাতগাও রাবার বাগানের কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় এই স্কুলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিরও কোন সম্ভবনা নেই, যে কারণে স্কুলটি সরকারীকরণের নামে রাষ্ট্রিয় অর্থ অপচয় রোধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।

এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতগাঁও রাবার বাগানের বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় রাবার বাগানের একটি আবাসিক ভবনে ছোট একটি সাইন বোর্ড। জীর্ণ শীর্ণ এই ভবন একটি রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় তাও সাইনবোর্ড না দেখে বোঝার উপায় নেই। ৩জন ছেলে মেয়ে বই নিয়ে ভবনটির সামনে খেলাধূলা করছে। কাছে গিয়ে জানা গেল তাদের নাম। সেকুল ইসলাম নামে ছেলেটি ২য় শ্রেণীর ছাত্র আর সাইদুল ইসলাম ও সাদিয়া আক্তার ১ম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রী। সেকুল জানায় সে কোথাও স্কুলে পড়েনি। এখানে এসে ক্লাস টুতে ভর্তি হয়েছে।

আর ছাত্র ছাত্রী কোথায় তারা কখন আসবে জানতে চাইলে সেকুল বলে ‘তারা দুপুরের ভাত খেয়ে আসবে’। এসময় হাজির হন রাবার বাগানের স্থানীয়  মুন্না নামের এক কিশোর। তার কাছে স্কুলের শিক্ষার্থী কতজন জানতে চাইলে সে বলে সব মিলিয়ে ১১জন হবে। শিক্ষিকা ৩জন। মুন্না জানায় শিক্ষিকারা বাইরে থেকে অফিসারা  কেউ আসলে তারা সবাই থাকেন। তিনি বলেন- এমনিতে তারা বেলা ১১টা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলে আসেন আবার বেলা ১টা দেড়টার দিকে চলে যান।

বেলা পৌণে এগারটায় স্কুলে উপস্থিত হন রুজিনা আক্তার। তিনি নিজেকে এই স্কুলের শিক্ষিকা পরিচয় দেন। এসময় ফ্যাগ ষ্ট্যান্ডে জাতীয় পতাকা লাগানোর ফাঁকে রুজিনা আক্তার বলেন, ৪জন শিক্ষিকার মধ্যে একজন মাতৃকালীন ছুটিতে রয়েছেন ২/৩ মাস হলো। প্রধান শিক্ষিকার বাচ্চার অসুখ সে জন্য আসতে দেরী হচ্ছে। অন্যরাও এসে যাবেন। স্কুলের শিক্ষার্থী সংখা কত জানতে চাইলে রুজিনা আক্তার জানান, সব মিলে ৯৫ হবে। এর পর স্কুল শিক্ষিকা রোজিনা আক্তার ছাত্র পাঠিয়ে মোট ১৩জন ছাত্র-ছাত্রী হাজির করেন।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে এ প্রতিবেদক এবছর সবরকারী বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তুক বিতরণের তালিকা দেখতে চাইলে দেখা যায় পুস্তুক বিতরণী রেজিষ্টারে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তির কলামে কোন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর নেই। সব মিলিয়ে ৩ জন শিক্ষার্থীর ছবি থাকলেও বাকি কোন রেজিষ্টারে শিক্ষার্থীদের ছবি বা স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। ভর্তি রেজিষ্টার দেখতে চাইলে ওই শিক্ষিকা জানান এ সম্পর্কে প্রধান শিক্ষিকা ভাল বলতে পারবেন। দৈনিক হাজিরা রেজিষ্টারে দেখা যায় স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ২৭ জানুয়ারীর পর কোন হাজিরার এন্ট্রি করা নেই।

এসময় এ প্রতিবেদক স্কুল প্রাঙ্গন থেকে মুঠো ফোনে প্রধান শিক্ষিকা লুম্বিনী রায় কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘এখন স্কুলে আছেন। কখন এসেছেন জানতে চাইলে উত্তর আসে ‘সেই ৯টা থেকে তিনি স্কুলে অবস্থান করছেন’। তার স্কুলে আজ এখন পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীর উপস্থিত রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ৫০জন আছেন। অথচ প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে ছুটিবিহীন অনুপস্থিত। এসময় স্কুলে দেরীতে আসা অপর শিক্ষিকা রুজিনা আক্তারের কাছে প্রতিবেদকের ফোন ধরিয়ে দিলে প্রধান শিক্ষিকা রোজিনা আক্তারের কাছে জানতে চান তারা কারা, সাংবাদিক কিনা?। পরে লুম্বিনী রায় অকপটে স্বীকার করেন তার বাচ্চার অসুস্থতার জন্য তিনি স্কুলে উপস্থিত  হতে পারেনি’।

ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কত এ নিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিশি রঞ্জন দেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এবিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে প্রায় ১মাস আগে তিনি স্কুলে গিয়ে শিক্ষিকাদের নিয়মিত স্কুলে আসার তাগিদ দিয়ে এসেছিলেন।

এদিকে সাতগাঁও রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, রাবার বাগানের এই স্কুলটি আমাদের কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে এ স্কুল টি আমাদের ব্যবস্থাপনার মধ্যে পড়ে না। গত কয়েকদিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসেছিলেন বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে। এ সময় বাগান ব্যবস্থাপক হিসেবে তাকে ডাকাও হয়নি। কোথাকার ছাত্রছাত্রী-বিদ্যালয়টি কারা চালাচ্ছে কিভাবে চলছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি বিদ্যালয় সরকারীকরণে যেসকল চাহিদা পূরণ করার নিয়ম রয়েছে এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দিনেও তা পূরণ করতে পারেনি। যে কারনে জাতীয়করণে ২য় ধাপে স্কুলটি সরকারীকরণের আবেদন নাকচ হয়। এরপর ৩য় ধাপে সরকারীকরণে সরকারী প্রক্রিয়ায় পরিপত্রপালনে স্কুলটি ব্যর্থ হয়েছে।

স্কুলের অবকাঠামো ও শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় স্কুলটি সরকারীকরণের উপযুক্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেজিষ্টার্ড স্কুলের তালিকা অনুসারে বাছাই কমিটি বাদ পড়া স্কুলগুলি নিয়মিত ভাবে পরিদর্শন করে থাকেন। পরিদর্শনকালে এসব বিবেচনায় নেয়া হয়।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বরাতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলটি পরিদর্শনে গিয়ে স্কুল বন্ধ পান। সর্বশেষ তিনিসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্কুলটি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন সেখানে ১৪/১৫ জন শিক্ষার্থী কে উপস্থিত।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে যে চিত্র দেখেছেন। আমরাও স্কুলটি পরিদর্শনে গিয়ে একই চিত্র দেখেছি। আমি আপনাদের সঙ্গে একমত। এ স্কুলের বিষয়ে সরকার কোনও রিপোর্ট চাইলে আমরাও সেভাবেই রিপোর্ট দিবো।