টিনশেড ঘরে মাটিতে বসেই পাঠদান করছে দু’শতাধিক শিক্ষার্থী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ছাতকে নোয়ারাই ইউনিয়নের চরভাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে মাঠিতে বসে পাঠদান করছে কোমলমতি দু’শতাধিক শিক্ষার্থী। এখানে বসার বেঞ্চ ও বই রাখার ডেক্স না থাকায় মাঠিতে বই রেখেই পাঠদান করছে তারা। ২০১৬সালে বৃহত্তর চরভাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসি হারিছ আলীর স্ত্রী পিয়ারা বেগম, প্রবাসি আবু সৈয়দের স্ত্রী সাজু বেগম ওরফে সাজনা ও মৃত নেহার উদ্দিনের পুত্র শাহিন আলমের সমহারে দানকৃত ৩৩শতক ভূমির উপর হারিছ আলীর অর্থায়নে মাঠি ভরাটসহ একটি টিনশেড স্কুল নির্মাণ করে পাঠদান শুরু করা হয়। এরআগে প্রায় ৫শতাধিক পরিবার বিশিষ্ট চরভাড়া গ্রামে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষার কোন সুযোগ ছিল না।

অনেক দূরের কাড়ইলগাঁও, বারকাহন ও সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে চরভাড়া গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করেছে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের চরম দূর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে ৩জন ভূমি দাতা ও প্রবাসি হারিছ আলীর অর্থায়নে চরভাড়া গ্রামে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। এসময় বিনা বেতনে রোমিনা বেগমকে প্রধান শিক্ষিকা করে ৪জন শিক্ষিকার মাধ্যমেই শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে পাঠদান শুরু হয়।

প্রথম বছর ২০১৬সালে প্রাথমিক সমাপনীতে ১২জন পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ ও ২০১৭সালে ১০জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ সফলতা অর্জিত হয়। এবারে ৫ম শ্রেণীতে ৯জনসহ বিদ্যালয়ে প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু স্কুলে স্যানিটেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। বিশুদ্ধ পানির জন্যে রয়েছে একটি টিউবওয়েল। ঘরের পার্টিশন না থাকায় পাশাপাশি স্থানেই চলছে সব ক্লাসের পাঠদান। এতে শিক্ষা কার্যক্রমের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘিত হচ্ছে।

স্কুলের রাস্তায় মাঠি ভরাট না থাকায় বর্ষা মৌসুমের প্রায় ৬মাসই এটি পানির নীচে অবস্থান করে। স্কুল ঘরের ভিটায় মাঠি ভরাট থাকলেও স্কুল মাঠে এখনো ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সূযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা রোমিনা বেগম জানান, বিদ্যালয়ের শুরু থেকেই সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষায় অংশ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা এযাবৎ শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে।

সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আরো প্রশংসনীয় সফলতা অর্জন করতে পারে বলে তিনি আশাবাদি। পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমির আলী বলেন, এক সময়ে তারা বর্ষায় সাঁতার কেটে অনেক দূরবর্তী স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করতেন। এখানে স্কুল হওয়ায় গ্রামের ধনী-গরিব সব ছাত্র-ছাত্রী সহজেই লেখাপড়া করতে পারছে। তিনি স্কুলটিকে সরকারিকরণের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানিকচন্দ্র দাস দু’বছর থেকে স্কুলে শতভাগ রেজাল্ট করেছে জানিয়ে বলেন, স্কুলটি এখনো লিস্টে উঠেনি। তবে বিদ্যালয় বিহীন এলাকা হিসেবে এটিকে সরকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার সুযোগ রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর