বর্ষায় অচেনা রূপে সুন্দরবন

বর্ষাকালে সুন্দরবনে ভ্রমণের উপযুক্ত জায়গাগুলোর মধ্যে কটকা, হারবাড়িয়া, করমজল উল্লেখ্যযোগ্য। নদী ও খালের বাঁকে বাঁকে সবুজের তীব্রতা আকাশের নীল রঙ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য সবই এই সুন্দরবনে । বর্ষাকালে আকাশ কখনো মেঘে ঢাকা, কখনো আবার ঝকঝকে নীল আকাশ, কখনো গাঢ় মেঘে ঢাকা অন্ধকার আবার মাঝে মাঝে ঝুম বৃষ্টি । সব মিলে অপরূপ সুন্দরবন ।

পর্যটকের ছিটেফোঁটাও নেই কোথাও। বন্যপ্রাণীদের ডরভয়ও তাই অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্ষাকালে কম । তাই খুব কাছে থেকেই দেখা যায় নানান বন্যপ্রাণী । চিরচেনা এই সুন্দরবনকে অচেনা রূপ দেখতে হলে যেতে হবে বর্ষায়। প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি আয়তনের বাংলাদেশ সুন্দরবন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল উপকূলীয় এলাকাজুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। ‘পূর্ব’ ও ‘পশ্চিম’ দুটি বিভাগের অধীনে ৪টি প্রশাসনিক রেঞ্জে ভাগ করা সুন্দরবন। রেঞ্জগুলো হলো- চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা।

বর্ষায় সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত জায়গা হারবাড়িয়া, কটকা, করমজল ইত্যাদি। এ সময়ে সমদ্র ও নদী বেশি উত্তাল থাকে বলে কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট ভ্রমণে যাওয়া নিরাপদ নয়। কটকা সমদ্র উপকূলবর্তী এলাকা হলেও সুন্দরবনের ভেতরের ছোট ছোট নদী কিংবা খাল ধরে জায়গাটিতে পৌঁছানো যায়। বর্ষায় সুন্দরবনের গাছপালা বেশ সজীব হয়। সুন্দরবনে বৃষ্টির চরিত্রও বেশ আলাদা। বর্ষার জোয়ারের উচ্চতাও একটু বেশি হয়। এ সময় তাই বনের বেশিরভাগই পানিতে ডুবে যায়।

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। মংলা বন্দর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া টহল ফাঁড়ির পাশেই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের অবস্থান। এর সামনের খালটি কুমিরের অভয়ারণ্য । তবে বর্ষায় কুমির দেখা প্রায় অসাধ্য।

হাড়বাড়িয়ায় দেখা যায়, সুন্দরনের বিরল মায়া হরিণের। এখানকার ছোট ছোট খালগুলোতে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙাসহ নানা জাতের পাখি। হাড়বাড়িয়ার খালে আরো দেখা যায় পৃথিবীর বিপন্ন মাস্ক ফিনফুট বা কালোমুখ প্যারাপাখিও। হাড়বাড়িয়া খালের পাড়ে এখানকার বন কার্যালয়। এরপর ছোট্ট খালের ওপর ঝুলন্ত সেতু। সামনের দিকে জঙ্গলের গভীরতা ক্রমেই বেশি। ঝুলন্ত সেতুটি পেরিয়ে সামান্য সামনে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের মাঝে গোলপাতার ছাউনি সমেত একটি বিশ্রামাগার। ঘরটির চারপাশে বসার জন্য বেঞ্চি পাতা। পুকুরের পাড় থেকে কাঠের তৈরি সেতু গিয়ে পৌঁছেছে ঘরটিতে। পুকুরের পাড় ধরে যে কোনো হাতের ডান কিংবা বাঁয়ে গেলেই কাঠের ট্রেইল। যে কোনো একদিক থেকে ঢুকলে অন্যদিকে এ পথের শেষ করা যায়।

বর্ষায় ভ্রমণের জন্য সুন্দরবনের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা কটকা। এখানে পর্যটক লঞ্চ নোঙর করে কটকা খালে। খালের পশ্চিম পাড়ের জেটি পেরিয়ে ওপরে উঠলেই বন কার্যালয়। এর সামনে দিয়ে সোজা পশ্চিমমুখী ইট বাঁধানো পথটি কিছু দূর চলার পর শেষ। কটকা বন কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি ট্রেইল। এটি কিছু দূর গিয়েই শেষ হয়েছে। এখান থেকে হাতের ডানে জঙ্গল ধরে সামান্য হাঁটলেই টাইগার ডেন, আর বাঁয়ে সামান্য গেলে সমুদ্র।

সূর্যাস্ত দেখার জন্য উপযুক্ত জায়গা এটি। কটকার জেটির উত্তরে খালের চরে আকাশছোঁয়া দীর্ঘ কেওড়ার বন। এ জায়গায় সব সময়ই দেখা যায় দলে দলে চিত্রা হরিণ, বন্য শূকর, বানর ইত্যাদি। কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে ছোট খাল চলে গেছে সোজা পূবে। কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে জেটি। ওপরে উঠলে ওয়াচ টাওয়ার। এ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বর্ষায় সুন্দরবনের সৌন্দর্য। কটকা ওয়াচ টাওয়ারকে পেছনে রেখে উত্তরে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। জামতলা সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। তবে বর্ষায় জামতলা সৈকত বিপজ্জনক। এ সময় এর সৌন্দয দেখেই তৃপ্ত হতে হবে, পানিতে নামা যাবে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর