ঢাকা ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলতি বছরজুড়ে সপ্তাহের প্রায় অধিকাংশ আদালতে ব্যস্ত থাকতে হবে খালেদা জিয়ার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:১৬:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩০৬ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি বছরজুড়ে সপ্তাহের প্রায় অধিকাংশ কার্য দিবসে আদালতে ব্যস্ত থাকতে হবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুইটি মামলার বিচার কাজ সমাপ্তি পর্যায়ে আসার পর আরো ১৪টি মামলা শুনানির জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে।
আইনজীবীরা বলছেন, এই মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হলে কার্যত সপ্তাহজুড়েই মামলা ও বিচার সংক্রান্ত কাজে বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যস্ত থাকতে হবে। কারণ এই বিশেষ আদালতও মনোনিবেশ করবে তার মামলাগুলোর বিচার কাজ নিয়ে। চলতি সপ্তাহে গত মঙ্গলবার থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন তিনি। আগামী রবিবারও আদালতে হাজিরার দিন আছে। গত সপ্তাহেও তিন দিন আদালতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বেশ   কিছু দিন ধরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন তাকে এই আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে ।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন আবারও একতরফা করতে যড়যন্ত্র ও অপচেষ্টার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার আরও ১৪ মামলা বকশীবাজারে স্থানান্তর করা হয়েছে। নতুন মামলাগুলো বকশীবাজারে স্থানান্তরের উদ্দেশ্য হলো তাকে প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে রাখা এবং অবিরামভাবে হেনস্তা করা। এটা কারো বুঝতে বাকি নেই যে, বছরজুড়ে উনাকে আদালতে ব্যস্ত রেখে আন্দোলন ও নির্বাচনী জনসংযোগ থেকে বিরত রাখার চক্রান্ত করছে সরকার। চেয়ারপারসনকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে এসব করে শেষ পরিণতি সরকারের জন্য ভালো হবে না।
তবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিএনপির এ অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় অনেক লোকজন থাকে। সঙ্গে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীও থাকে। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই আদালতে মামলাগুলো স্থানান্তর করা হয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্দেশেই এই স্থানান্তর কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, মামলা আইন অনুযায়ী তার নিজস্ব গতিতে চলবে। দ্রুত নিষ্পত্তি করা বা দ্রুত খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া সরকারের লক্ষ্য নয়। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য এবং বিচার বিভাগে সরকার কখনো কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করে না।
এদিকে মামলা স্থানান্তর ও শুনানি দ্রুততর করার কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ও শংকা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে আইনজীবী এবং দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন বেগম জিয়া। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে গত রবিবার রাতে গুলশানে দলের কার্যালয়ে এক বৈঠকেও এই বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পায়। কয়েকজন বুদ্ধিজীবী খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন যে, বিশেষ আদালতে স্থানান্তরিত ১৪টি মামলা নিয়মিত আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইনী লড়াই করতে। তারা বলেন, বিশেষ আদালতে মামলাগুলো নেওয়ার কারণ হচ্ছে আপনাকে (খালেদা জিয়াকে) প্রতিদিন আদালতে ব্যস্ত রাখা, কোনো  রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড-কার্যক্রমে অংশ নিতে না দেওয়া। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বেগম জিয়াকে বলেন, এটা আপনাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সরকারি কৌশল। প্রতিদিন আপনাকে আদালতের বারান্দায় আটকে রাখার একটি ব্যবস্থা। তিনি আদালতে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলেও ঢাকার বাইরে সফরে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বেগম জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনে সেনাশাসিত সরকারের সময়ে দায়ের করা হয়েছে ৪টি মামলা। বাকিগুলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দুই মেয়াদে করা। যে ১৪টি মামলা বিশেষ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে তার মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে ৯টি, বিশেষ জজ আদালতে ৩টি ও ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি ঐ ১৪ মামলা বিচারের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে স্থানান্তর করে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চলতি বছরজুড়ে সপ্তাহের প্রায় অধিকাংশ আদালতে ব্যস্ত থাকতে হবে খালেদা জিয়ার

আপডেট টাইম : ০৩:১৬:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৮
হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি বছরজুড়ে সপ্তাহের প্রায় অধিকাংশ কার্য দিবসে আদালতে ব্যস্ত থাকতে হবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুইটি মামলার বিচার কাজ সমাপ্তি পর্যায়ে আসার পর আরো ১৪টি মামলা শুনানির জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে।
আইনজীবীরা বলছেন, এই মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হলে কার্যত সপ্তাহজুড়েই মামলা ও বিচার সংক্রান্ত কাজে বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যস্ত থাকতে হবে। কারণ এই বিশেষ আদালতও মনোনিবেশ করবে তার মামলাগুলোর বিচার কাজ নিয়ে। চলতি সপ্তাহে গত মঙ্গলবার থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন তিনি। আগামী রবিবারও আদালতে হাজিরার দিন আছে। গত সপ্তাহেও তিন দিন আদালতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বেশ   কিছু দিন ধরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন তাকে এই আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে ।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন আবারও একতরফা করতে যড়যন্ত্র ও অপচেষ্টার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার আরও ১৪ মামলা বকশীবাজারে স্থানান্তর করা হয়েছে। নতুন মামলাগুলো বকশীবাজারে স্থানান্তরের উদ্দেশ্য হলো তাকে প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে রাখা এবং অবিরামভাবে হেনস্তা করা। এটা কারো বুঝতে বাকি নেই যে, বছরজুড়ে উনাকে আদালতে ব্যস্ত রেখে আন্দোলন ও নির্বাচনী জনসংযোগ থেকে বিরত রাখার চক্রান্ত করছে সরকার। চেয়ারপারসনকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে এসব করে শেষ পরিণতি সরকারের জন্য ভালো হবে না।
তবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিএনপির এ অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় অনেক লোকজন থাকে। সঙ্গে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীও থাকে। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই আদালতে মামলাগুলো স্থানান্তর করা হয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্দেশেই এই স্থানান্তর কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, মামলা আইন অনুযায়ী তার নিজস্ব গতিতে চলবে। দ্রুত নিষ্পত্তি করা বা দ্রুত খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া সরকারের লক্ষ্য নয়। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য এবং বিচার বিভাগে সরকার কখনো কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করে না।
এদিকে মামলা স্থানান্তর ও শুনানি দ্রুততর করার কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ও শংকা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে আইনজীবী এবং দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন বেগম জিয়া। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে গত রবিবার রাতে গুলশানে দলের কার্যালয়ে এক বৈঠকেও এই বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পায়। কয়েকজন বুদ্ধিজীবী খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন যে, বিশেষ আদালতে স্থানান্তরিত ১৪টি মামলা নিয়মিত আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইনী লড়াই করতে। তারা বলেন, বিশেষ আদালতে মামলাগুলো নেওয়ার কারণ হচ্ছে আপনাকে (খালেদা জিয়াকে) প্রতিদিন আদালতে ব্যস্ত রাখা, কোনো  রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড-কার্যক্রমে অংশ নিতে না দেওয়া। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বেগম জিয়াকে বলেন, এটা আপনাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সরকারি কৌশল। প্রতিদিন আপনাকে আদালতের বারান্দায় আটকে রাখার একটি ব্যবস্থা। তিনি আদালতে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলেও ঢাকার বাইরে সফরে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বেগম জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনে সেনাশাসিত সরকারের সময়ে দায়ের করা হয়েছে ৪টি মামলা। বাকিগুলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দুই মেয়াদে করা। যে ১৪টি মামলা বিশেষ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে তার মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে ৯টি, বিশেষ জজ আদালতে ৩টি ও ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি ঐ ১৪ মামলা বিচারের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে স্থানান্তর করে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।