হাওর বার্তা ডেস্কঃ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নথি জালিয়াতি এবং তার ভিত্তিতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষের ছয়জন সাক্ষীর শাস্তি দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৭৬ ও ১৯৫ ধারা মোতাবেক এ আবেদন দাখিল করা হয়।
আবেদনে বলা হয় যে, জাল কাগজ পত্র সৃজন করে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার লক্ষ্যে সাক্ষীরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সাক্ষীদের শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এ আবেদন দাখিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। উক্ত আবেদন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী হাওর বার্তাকে বলেন, আইনানুযায়ী বিচারক নিজেই এ অভিযোগের অনুসন্ধান করবেন। অনুসন্ধানে যদি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলে তাহলে তিনি লিখিত একটি অভিযোগ সিএমএম আদালতে পাঠাবেন। সিএমএম আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবেন।
এদিকে অরফানেজ মামলার শুনানিতে বিলম্বে অংশ নেয়ায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সতর্ক করেছেন বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। একইসঙ্গে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার জন্য তিনি বলেন। তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করলে আদালত কক্ষে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
গতকাল অরফানেজ মামলায় আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিলো। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে আদালতে হাজির হন। ১২টার সময় বিচারক এজলাসে আসেন। শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা কোর্ট। এতো দেরি করে কেন আপনারা আদালতে এসেছেন? ১২টার সময় আদালতের কার্যক্রম কেন শুরু হবে?
এরপর থেকে দশটার মধ্যে এজলাসে উঠব। তখন কে এলো বা এলো না সেটা দেখব না। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আজ না হয় দেরি হয়েছে, বাকি কথাগুলো বলার প্রয়োজন ছিলো না। বিচারক বলেন, সাড়ে ১০টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু করা গেলে আরো দেড় ঘণ্টা বেশি শুনানি করার সুযোগ ছিলো আপনাদের। তখন আইনজীবী এম. মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, আমরা মার্শাল ‘ল’ কোর্ট দেখেছি।
দেখেছি ওয়ান ইলেভেন। প্রধান বিচারপতির আদালতেও মামলা পরিচালনা করেছি; কিন্তু এভাবে কোনো বিচারককে কথা বলতে শুনিনি। একদিন না হয়ে একটু দেরিই হয়েছে সেক্ষেত্রে আসামির বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করা উচিত। এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত অন্য আইনজীবীরা এ বক্তব্যের সমর্থন জানালে আদালত কক্ষে হৈচৈ সৃষ্টি হয়। বিচারক বলেন, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আদালত পরিচালনা কঠিন হয়ে যাবে।
একপর্যায়ে বিচারক আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষ করার জন্য বলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করতে। যতক্ষণ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হবে অনুগ্রহ করে আমাদের সময় দেবেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ছয় সাক্ষীর বিরুদ্ধে আবেদন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শুরুতেই এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদসহ রাষ্ট্রপক্ষের ছয়জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে আদালতে আবেদন দাখিল করেন এজে মোহাম্মদ আলী। আদালত বলেন, আগে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হোক, পরে আবেদন। এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তাকে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে ও সৃজনকৃত মামলায় সাজা দেওয়ার লক্ষ্যে এসব সাক্ষী আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস করতেই এ মামলা করা হয়েছে। বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মাইনাস টু থিওরির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা করে দুদক।